রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন
অর্পন বড়ুয়া:
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে এক সময়ের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর খ্যাত রামুর ১২টি বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলা চালায় দুস্কৃতিকারীরা। সেই সময় ক্ষমতাসীন দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হামলায় অংশ নেয়ার অভিযোগ ওঠে৷ এই হামলার আট বছরে সম্প্রীতি কিছুটা ফিরলেও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কাটেনি ধোয়াশা।
২০১২ সালের ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর। উত্তম বড়ুয়া নামে এক বৌদ্ধ যুবকের বিরুদ্ধে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে রাতের অন্ধকারে রামুর ১২ বৌদ্ধ বিহার, ৩০টি বসতঘর এবং উখিয়া- টেকনাফের ৭টি বৌদ্ধ বিহার ও ১১টি বসতঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে দুস্কৃতিকারীরা। হামলা ও লুটপাট চালানো হয় আরো ৬টি বৌদ্ধ বিহার ও শতাধিক বসতঘরে। এঘটনার পর ৮ অক্টোবর রামু পরিদর্শনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুণনির্মাণ করে দেন ক্ষতিগ্রস্থ বিহার ও ঘরবাড়ি। দীর্ঘ আট বছরে সম্প্রীতি কিছুটা ফিরলেও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় আর ধোয়াসা কাটছেনা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের।
ঘটনার ৮ বছরে এসে ভয়াবহ এ হামলার স্মৃতি কিছুটা ভুলে গেলেও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ সঠিক বিচার নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে বিশ্বাস করেন রামুতে আগের মতো সম্প্রীতি ফিরে এসেছে। একই সঙ্গে অন্যান্য ধর্মের মানুষও সম্প্রীতির রামু আগের মতো এবং আগের সব ভুলে এখন সহ অবস্থানে বসবাস করছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন,এ ঘটনার যেন বিচার হয়।
রামুর মন্ডল পাড়া এলাকার বাসিন্দা কলেজ পড়ুয়া ছাত্র রনজিত বড়ুয়া কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, সেই ভয়াল ঘটনা এখনও বিবচলিত করে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষকে। তবে পূর্বেও মত সব সম্প্রদায় আর ধর্মের মানুষ বসবাস করছে সম্প্রীতির বন্ধনে। অবশ্য, বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার জড়িতদের এখনও আইনের আওতায় না আসায় হতাশ আমরা। সত্যিকারের অপরাধিদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য জোরদাবি জানাচ্ছি।
রামুর জোয়ারিয়ানালার বাসিন্দা বিজন বড়ুয়া কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘আমরা এখনও সুষ্ঠু বিচারের অপেক্ষায় রয়েছি। প্রকৃতপক্ষে যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। আমরা চাই খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হউক’।
রামু কেন্দ্রেীয় সীমা বিহারের আবাসিক প্রধান শীলপ্রিয় ভিক্ষু কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, রামু সহিংসতার ঘটনা দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে যে আঘাত হেনেছিল তা অনেকটা দূর হয়েছে। তবে বিচার প্রক্রিয়ায় দীঘসূত্রিতার কারণে আমি হতাশ।’
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রনয় চাকমা কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘দীর্ঘ ৮ বছরের পট-পরিক্রমায় রামু উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে ব্যাটালিয়ন, এপিবিএন ও রামু ১০ পদাতিক ডিভিশন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রয়েছে। এতে করে রামুতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষায় সতর্ক নজর রয়েছে প্রশাসনের। উদ্ভুত যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি রয়েছে। যাতে করে আর কোন অপ্রীতিকর সে ব্যাপারে আমরা সবাই সজাগ রয়েছি’।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট ফরিদুল আলম কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘বৌদ্ধ মন্দির ও বসতিতে হামলার ঘটনায় সর্বমোট ২০টি মামলা দায়ের করা হয়। তৎমধ্যে বাদীর সম্মতিতে ১টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। বাকী ১৯টি মামলার মধ্যে মাত্র ২ থেকে ৩টি মামলা আদালতে স্বাক্ষী গ্রহন পর্যায়ে রয়েছে। তবে উপযুক্ত সাক্ষীর অভাবে বিচারকার্য বিলম্বিত হচ্ছে’।
রামু, উখিয়া ও টেকনাফে সহিংসতার ঘটনায় এজাহারভুক্ত ৩৭৮ জনসহ অজ্ঞাত আরো পনের হাজার ১৮২ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ৯৩৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।
ভয়েস/আআ