শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ১১:১০ অপরাহ্ন
আবদুল আজিজ:
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো: রাশেদ নিহত ঘটনার পর থেকে টেকনাফের বরখাস্তকৃত ও কারাবন্দি সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘ক্রসফায়ার’ চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে আদালতে দায়ের করা সবকটি মামলা দ্বিতীয়বারের জন্য সিআইডি ও পিবিআই সহ বিভিন্ন সংস্থাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মেজর সিনহা হত্যা মামলার পর মহেশখালী ও টেকনাফের ভুক্তভোগী পরিবার হত্যা, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে এসব মামলা দায়ের করেন। এসব মামলার মধ্যে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে একটি ছাড়া সবকটি মামলা কক্সবাজার সিনিয় জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট (টেকনাফে) আদালতে দায়ের করা হয়। ওই সময়ে আদালত মামলা গুলো আমলে নিয়ে টেকনাফ উক্ত ঘটনায় আর কোন মামলা রয়েছে কিনা সংশ্লিষ্ট থানাকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু, পুলিশে পক্ষ থেকে সবকটি মামলার বিষয়ে আদালতকে অবহিত করা হয়। পরে আদালত মামলাগুলোর বিষয়ে পুনরায় তদন্তের জন্য ‘সিআইডি’ ‘পিবিআই’ সহ বিভিন্ন সংস্থাকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। বর্তমানে মামলা গুলো তদন্তাধীন। এছাড়াও আরও কিছু মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে এখনও পৌছেনি বলে জানিয়েছেন বাদি পক্ষের আইনজীবীরা।
জানতে চাইলে টেকনাফের সাদ্দাম হোসেনকে ‘ক্রসফায়ার’ এর নামে হত্যার অভিযোগে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদির পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মো: মনিরুল ইসলাম কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘আমার বাদিও দায়ের করা মামলা সহ যেসব ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে এঘটনায় টেকনাফ থানায় পুলিশের পক্ষে কোন মামলা হয়েছে কিনা এবং মৃতদেহ গুলোর ময়নাতদন্তসহ নানা বিষয়ে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বিচারক নির্দেশনা দেন। ইতিমধ্যে পুলিশ আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। একারণে আদালত মামলার সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে দ্বিতীয়বারের মত ‘পিবিআই’কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এসব মামলা গুলো শুনানির জন্য আগামীতে দিন ধার্য্য করা হয়েছে। আমরা সেই শুনানির জন্য অপেক্ষা করছি’।
একই কথা জানান টেকনাফে জলিল হত্যা মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট নুরুল হোছাইন নাহিদ। তিনি কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘জলিল হত্যা মামলায় পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর আদালত উক্ত মামলাটির শুনানি করেছেন। কিন্তু, শুনানির পর উক্ত ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা হত্যা মামলাটি কোন পর্যায়ে রয়েছে তা জানতে পুনরায় তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা প্রদান করেছেন বিচারক। এখনও পর্যন্ত ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেনি তদন্তকারি সংস্থা। এছাড়াও একইভাবে আমার আরও একটি মামলার তদন্তপ্রতিবেদন এখনও আদালতে জমা দেননি পুলিশ।’
ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে দায়ের করা আরেকটি মামলার আইনজীবী এডভোকেট দিদারুল মোস্তফা কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘মামলাগুলোর সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে আমরা সুষ্ঠু বিচার পাব। এখন তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার অপেক্ষায় আছি’।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার কোর্ট পরিদর্শক চন্দন কুমার চক্রবতী কোন ধরণের তথ্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন এবং কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রফিকুল ইসলামকে ফোন দিতে পরামর্শ দেন। এ প্রতিবেদক গত ৫ জানুয়ারি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় পুলিশের কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে, মেজর সিনহা মো: রাশেদ নিহতের ঘটনায় গত ৫ আগস্ট নিহত মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদি হয়ে সাবেক পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পরে সাড়ে ৪ মাসের মাথায় তদন্তকারি সংস্থা র্যাব ১৫জনকে অভিযুক্ত করে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। উক্ত মামলাটি এখন আদালতে বিচারাধীন।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে টেকনাফ শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো: রাশেদ। এ সময় পুলিশ সিনহার সঙ্গে থাকা সহযোগী সিফাতকে আটক করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে আটক করা হয়। এরমধ্যে সিফাতের মামলাটি আদালত খারিজ করে দিলেও শিপ্রা দেব নাথের চুড়ান্ত প্রতিবেদনের উপর শুনানী পিছিয়েছে আদালত। ওই ঘটনায় টেকনাফের সাবেক পুরিদর্শক লিয়াকত এবং ওসি প্রদীপসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা এবং পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী কারাগারে রয়েছে। বর্তমানে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ দুদকের একটি মামলা চট্টগ্রাম কারাগারে রয়েছে। অন্য আসামীরা কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছে। এঘটনায় মোট ১৪জন আসামীদের মধ্যে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনষ্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২জন আসামী তদন্ত সংস্থা র্যাবের মাধ্যমে আদালতে স্বীকারোক্তি জবানবন্দি দিয়েছেন। সাগর দেব নামের এক পুলিশ সদস্য এখনও পলাতক রয়েছে।
ভয়েস/আআ