শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ১১:১১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কারবারিদের রুট পরিবর্তন: পাহাড়ের অলিগলি পথে পাচার হচ্ছে ইয়াবার চালান

ইয়াবা , ফাইল ছবি

আবদুল আজিজ:

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো: রাশেদ হত্যাকান্ডের পর কিছুদিন ইয়াবা পাচার কমে আসলেও সম্প্রতি ব্যাপকহারে বেড়েছে। আর এজন্য তারা নিত্যনতুন রুট পরিবর্তন করেছে। সীমান্তের বিভিন্ন পাহাড়ি সড়ক ব্যবহার করে খুব নিরাপদে পাচার করছে কোটি টাকা মূল্যের ইয়াবা। শনিবার পুলিশের হাতে ঈদগড় সড়কে এক লাখ পিস ইয়াবা সহ এক সিএনজি চালককে গ্রেপ্তারের পর নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃংখলা বাহিনী।

গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো: রাশেদ। এঘটনার পর কিছুদিন ঝিমিয়ে পড়ে ইয়াবাপাচার। কক্সবাজার জেলা পুলিশের গণহারে বদলীসহ বিভিন্ন ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে ইয়াবা পাচারকারি সিন্ডিকেট নতুন রুট পরিবর্তন করে ইয়াবা পাচার করছে। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী সড়ক টেকনাফ হয়ে উখিয়ার বালুখালী ও বাইশফাঁড়ি সড়ক ব্যবহার করছে পাচারকারিরা। একইভাবে উখিয়া ডিগ্রী কলেজ সংলগ্ন শৈলরডেবা সড়ক হয়ে রত্মপালং ভালুকিয়া, হলদিয়াপালং পাতাবাড়ি সড়ক দিয়ে প্রবেশ করছে নাইক্ষ্যংছড়ি সোনাইছড়ি হয়ে ঈদগড় সড়কে। এই সড়ক হয়ে চলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম, ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

শনিবার (৯ জানুয়ারী) সকাল পৌনে ১০ টার দিকে ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের ছেনুছড়া এলাকা থেকে এক লাখ পিস ইয়াবাসহ হাফেজ আহমদ (৩৫) নামের এক ইয়াবাকারবারিকে গ্রেপ্তার করে কক্সবাজার গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এসময় পাচার কাজে ব্যবহৃত একটি সিএনজিও জব্দ করা হয়। সে বান্দরবানের রুমা উপজেলার রুমকি গ্রামের মৃত আব্দুল হাফেজের ছেলে। তবে তার বর্তমানে বসবাস কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওতে এবং সে ওই সিএনজির চালক।

শনিবার (৯ জানুয়ারী) সকাল পৌনে ১০ টার দিকে ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের ছেনুছড়া এলাকা থেকে এক লাখ পিস ইয়াবাসহ হাফেজ আহমদ (৩৫) নামের এক ইয়াবাকারবারিকে গ্রেপ্তার করে কক্সবাজার গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টারদিকে কক্সবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রফিকুল ইসলাম জানান, শনিবার ভোররাত থেকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের ছেনুছড়ায় চেকপোস্ট বসানো হয়। তা চলে সকালে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত। তারপর ঈদগড় দিক আসা সিএনজিকে থামানো হয়। সেটি তল্লাশীকালে ইঞ্জিন বক্সের ভেতর থেকে ১ লাখ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। পরে সিএনজি চালক হাফেজ আহমেদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইয়াবা পাচারের কথা স্বীকার করে।

মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা সীমান্তের বিভিন্ন অলিগলি ছোট সড়ক গুলোকে নিরাপদ রুট হিসাবে বেছে নিয়েছে। একারণে এসব সড়কগুলো চিহ্নিত করে পুলিশ অভিযান অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও এক লাখ ইয়াবা উদ্ধারে পেছনে কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে সীমান্তের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন, পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা থাকা সত্তে¡ও উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তের ৩৫টি পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসছে বাংলাদেশে। শুধু স্থলপথ নয়, আসছে সাগরপথেও। নিত্যনতুন কৌশলে মাদকের চোরাচালান আসছে। কখনো ত্রাণবাহী কিংবা জরুরি পণ্যবাহী যানে; মাছ ধরার ট্রলার, কাভার্ড ভ্যান, কখনো পায়ুপথে, কখনো যানবাহনের ইঞ্জিনের কাভারে করে গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে ইয়াবা। করোনার মধ্যে মাদকসেবীদের জন্য হোম ডেলিভারিও হচ্ছে। টেকনাফের সেন্টমার্টিন, শাহপরীরদ্বীপ, দমদমিয়া, লেদা, রঙ্গিখালী, উলুচামারী, মৌলভীবাজার, নোয়াখালীয়াপাড়া, শাপলাপুর, সাতঘরিয়াপাড়া, উখিয়ার আমতলি, পালংখালী, মরিচ্যা, রেজুখাল, নাইক্ষ্যংছড়ির গর্জনবুনিয়া, তুমব্রæসহ অন্তত ৩৫টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে। রোহিঙ্গা শিবির-সংশ্লিষ্ট এলাকা দিয়ে ইয়াবা আসছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।

বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থানের পরও প্রতিদিন কোনো না কোনো পয়েন্ট থেকে ইয়াবাসহ পাচারকারী বা পরিত্যক্ত ইয়াবা উদ্ধার হচ্ছেই। এভাবেই প্রতিনিয়ত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা কৌশলে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা চালান নাফ নদী ও সমদ্রপথে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। গত ৩১ জুলাইয়ের পর ইয়াবার চালান তুলনামূলক হারে কমে আসলেও সম্প্রতি কিছুটা বেড়ে যায়। কিন্তু, চলতি বছরের শুরুতে হঠাৎ করে বৃহৎ আকারের ইয়াবার চালান আটকের ঘটনায় আবারো নতুন করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকেই জানিয়েছেন, উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবাসহ মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। যার ফলে এ পর্যন্ত বড় কোনো ইয়াবা কারবারি আটকের খবরও পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি আত্মসমর্পণকারি সীমান্তের ইয়াবা গডফাদারদের অনেকেই জামিনে বের হয়ে বহাল তবিয়তেই ইয়াবা কারবার চালাচ্ছে নতুন করে। ‘ইয়াবার গেটওয়ে’ হিসেবে পরিচিত টেকনাফের খুব কাছাকাছি মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যান্তরে প্রায় ৪০টি ইয়াবা কারখানায় উৎপাদিত ইয়াবার চালান আসে একমাত্র টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অদিফতরের সহকারী পরিচালক সৌমেন মন্ডল জানান, সীমান্তে যেকোনো মূল্যে ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদকের চোরাচালান বন্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার। ইয়াবা পাচারকারীদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবসময় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ইয়াবার চালান বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে আমাদের। আমরা বসে নেই, প্রতিনিয়ত চলছে আমাদের মাদক বিরোধী অভিযান।’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৬০ জন গডফাদারসহ ১১৫১ জন মাদক কারবারির তালিকা প্রকাশ করে সরকার। এই তালিকায় টেকনাফ সীমান্তেই রয়েছে ৯ শতাধিক ইয়াবা কারবারি।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION