সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫১ অপরাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
করোনা পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার কথা বলা হলেও অভিজ্ঞতা না থাকা এবং তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার ও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলার আইনজীবীরা আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেননি। সোমবার (১১ মে) রাজশাহী, পাবনা, জামালপুর, বরিশাল, গোপালগঞ্জের আইনজীবীরা আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেননি বলে জানা গেছে। জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে ভিত্তিতে করা প্রতিবেদন।
রাজশাহী
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনায় রাজশাহীতে জামিন শুনানির জন্য দু’টি ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আদালত কর্তৃপক্ষ। তবে প্রযুক্তিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতায় ভার্চুয়াল কোর্টে বিচারিক কাজে আগ্রহ নেই রাজশাহী বার অ্যাসোসিয়েশনের অধিকাংশ আইনজীবীর। ফলে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করা নিয়ে একরকম অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে রাজশাহী বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ তৌফিক জাহেদী জানান, রাজশাহী বারের ৯০ শতাংশ আইনজীবী প্রযুক্তিগত বা ডিজিটাল কার্যক্রমে অভ্যস্ত নয়। প্রক্রিয়া সম্পর্কেও এখনও ন্যূনতম ধারণা পাননি তারা। তাদের এনিয়ে কোনও প্রশিক্ষণও নেই। ফলে তার হীনমন্যতায় ভুগছেন। ভার্চুয়াল কোর্টে আগ্রহী হয়ে উঠছেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মঙ্গলবার (১২ মে) একটি মিটিং করেছি। সেখানে উপস্থিত আইনজীবীরা তাদের মতামত জানিয়েছেন। সেখানে দু’চারজন হয়তো ভার্চুয়াল কোর্টের বিষয়ে উচ্ছ্বসিত। তবে অধিকাংশ আইনজীবী যেহেতু এটা নিয়ে আগ্রহী নয়, তাই চলতি সপ্তাহে ভার্চুয়াল কোর্টে আইনজীবীদের অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। বুধবার (১৩ মে) কিছু প্রস্তাবনা নিয়ে আমরা বিচারকদের সঙ্গে বৈঠক করবো। সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর হবে।’
আইনজীবীদের আদালত বর্জন
এদিকে আদালত সূত্র জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক রাজশাহীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুটি ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
আবেদনপত্রে কোর্ট-ফি লাগিয়ে মামলার নম্বর লিখে তা স্ক্যান করে বা ছবি তুলে পাঠাতে হবে। আইনজীবীকে তার ই-মেইল আইডি এবং মোবাইল নম্বর অবশ্যই সঙ্গে দিতে হবে। আদালত থেকে অনলাইন শুনানির জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
এরপর শুনানির জন্য ঠিক করা দিন ও সময় সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে ই-মেইলে ও মোবাইলে বিষয়টি জানানো হবে। নির্ধারিত সময়ে ওই আইনজীবী ই-মেইলে পাঠানো লিংকে ক্লিক করেই ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন।
রাজশাহী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির জন্য জেলার বাগমারা, দুর্গাপুর, বাঘা ও চারঘাট উপজেলার জন্য নির্ধারিত হয়েছে এক নম্বর ভার্চুয়াল কোর্ট। এর বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রে আব্দুল্লাহ আল আমিন ভুঁইয়া। এখানে সহায়তাকারী হিসেবে থাকবেন স্টেনোগ্রাফার এসএম নূরে কামাল। তার মোবাইল নম্বর- ০১৮৩৬- ৯৫৭৭৫১।
আইনজীবীদের আদালত বর্জন
জেলার গোদাগাড়ী, তানোর, পুঠিয়া ও মোহনপুর উপজেলার জন্য নির্ধারিত হয়েছে দুই নম্বর ভার্চুয়াল কোর্ট। সেখানে বিচারক থাকবেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম। আর সহায়তাকারী হিসেবে আছেন স্টেনো টাইপিস্ট মিজানুর রহমান। তার মোবাইল নম্বর- ০১৭৭১-৯০৬২২৯।
আসামির জামিন মঞ্জুর হলে বেইলবন্ড স্ক্যান বা ছবি তুলে আদালতে পাঠাবেন আইনজীবী। এরপর কারাগারে কাগজ পৌঁছানোর পর জামিন হওয়া আসামির মুক্তি মিলবে। প্রক্রিয়াটি জটিল মনে হলেও ই-মেইলে আবেদন শুরু করলে ধাপে ধাপে তা এমনিতেই সহজ হয়ে যাবে বলছে আদালত সূত্র।
পাবনা
তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান স্বল্পতা এবং বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে পাবনার আইনজীবীরা ভার্চুয়াল আদালত বর্জন করেছেন। মঙ্গলবার পাবনা আইনজীবী সমিতির সভায় ভার্চুয়াল আদালত বর্জন করে আদালতের কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
পাবনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাহাবুদ্দিন সবুজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জানানো হয়, ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালত পরিচালনা করতে হলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, স্ক্যানার মেশিন ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকা জরুরি। আইনজীবীদের অনেকেরই এই মুহূর্তে এসব সরঞ্জাম কেনার মতো সঙ্গতি নেই।
ভার্চুয়াল শুনানি পদ্ধতি সম্পর্কে ৯৯ শতাংশ আইনজীবীর কোনও প্রশিক্ষণ না থাকাও আদালত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না নেওয়ার একটি কারণ। বিদ্যুৎ সমস্যা, কারিগরি সমস্যা, অভিজ্ঞতার অভাব, সিভিল ল সম্পর্কে অস্পষ্টতাসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
জামালপুর
ভার্চুয়াল কোর্টে অংশ নিচ্ছেন না জামালপুর জেলা জজ আদালতের আইনজীবীরা। জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ এনায়েত হোসেন হিটলার মঙ্গলবার বিকালে জানায়, ১০ মে ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনার জন্য নির্দেশ প্রদান করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট । এই নির্দেশনার পর মঙ্গলবার দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির অডিটরিয়ামে এক বিশেষ জরুরি সভার আয়োজন করে সমিতির নেতারা। ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনার বিষয়ে আইনজীবীরা একমত নয় বলে কোর্টে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সভায়।
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ আকাশ জানান, ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনার জন্য ইউএনডিপি-এর পক্ষ থেকে আইনজীবীদের যথাযাথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল। তবে এখন পর্যন্ত কোনও প্রশিক্ষণ না দেওয়ায় ভার্চুয়াল কোর্ট বিষয়ে তেমন কোনও ধারণা নেয় এ জেলার আইনজীবীদের। তাই আপাতত ভার্চুয়াল কোর্টে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই জেলার আইনজীবীরা।
এ দিকে আইনজীবীরা ভার্চুয়াল কোর্টে অংশ না নেওয়ায় আইনি সেবা পাচ্ছেন না বিভিন্ন মামলার বাদী বিবাদীরা।
বরিশাল
আদালতে ভার্চুয়াল কার্যক্রম চালুর প্রতিবাদে এবং আগের মতো ম্যানুয়াল পদ্ধতি চালুর দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আইনজীবীরা। মঙ্গলবার জেলা জজ আদালত চত্বরের আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে সাধারণ আইনজীবীরা। মিছিলটি আদালতপাড়ার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন করে ফের আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এ ব্যাপারে জেলা আইনজীবী সমিতির সম্পাদক কাইয়ুম খান কায়ছার বলেন, বরিশালে ইন্টারনেটের গতি খুবই কম। এছাড়া আইনজীবীদের বড় একটি অংশ প্রবীণ হওয়ায় ফেসবুক, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পারদর্শী নয় তারা। এ কারণে অনেক আইনজীবী ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালতের কার্যক্রম চায় না।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আফজালুল করিম জানান, ভার্চুয়াল আদালত শুরুর আগে প্রশিক্ষণ ও পূর্ব প্রস্তুতি প্রয়োজন। সেটি না করে হঠাৎ ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রম চালু করায় আইনজীবীরা বিপাকে পড়েছেন।
গোপালগঞ্জ
গোপালগঞ্জের আইনজীবীরা ভার্চুয়াল কোর্ট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মঙ্গলবার (১২ মে) এক জরুরি সাধারণ সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, এই ভার্চুয়াল কোর্ট করতে যেসব সুরক্ষামূলক পোশাক থাকতে হয় তা আইনজীবীদের নেই এবং এ বিষয়ে তাদের কোনও প্রশিক্ষণও নেই।
আইজীবীরা বলেন, করোনার সুরক্ষা নিয়ে স্বাভাবিক আদালত পরিচালনার ব্যবস্থা যাতে গ্রহণ করা হয় তার ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মুন্সী আতিয়ার রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জুলকদর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
সিলেট
করোনায় পরিস্থিতিতে সিলেটে ভার্চুয়াল কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকার ভার্চুয়াল কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনা করেন সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট আদালতের বিচারক জিয়াদুর রহমান।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী বেলাল আহমদ বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকা নিয়ে ভার্চুয়াল কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়। এসময় আদালতে ১৫টি মামলার শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক ৮ জনকে কারাগারে এবং ৭জনের জামিন মঞ্জুর করেন। সূত্র:বাংলাট্রিবিউন।
ভয়েস/জেইউ।