বিশেষ প্রতিবেদক, কক্সবাজার ভয়েস:
ইয়াবাকারবার নিয়ে একাধিকবার গ্রেপ্তার ও জেল ফেরত ইয়াবা ডন মন্জুর আলম ওরফে ইয়াবা মন্জুর গড়ে তোলেছে বিশাল সিন্ডিকেট। মন্জুর উখিয়ার পশ্চিম সোনাইছড়ি এলাকার মৃত ইসলাম মিয়ার ছেলে। সে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবাকারবারের সাথে জড়িত। একারণে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গত তিন মাসে মিয়ানমার থেকে আসা একাধিক ইয়াবার বড় চালান খালাস করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খালাস হওয়া এসব ইয়াবার চালান চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিচ্ছে সিন্ডিকেটের সদস্যদের মাধ্যমে।

গত মঙ্গলবার ইয়াবা ডন মন্জুরের সেকেন্ড ইন কমান্ড ও একই এলাকার ছৈয়দ মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর পুলিশকে ইয়াবা ডন মন্জুরের ইয়াবা চালানের নানা তথ্য দিয়েছে। এজন্য উখিয়া থানার পুলিশ ইয়াবা ডন মন্জুরকে হন্য হয়ে খোঁজছে।

উখিয়ার সোনাইছড়ির ইয়াবা ডন মন্জুরের কোটিপতি হওয়ার গল্প এখন কারও অজানা নয়। এলাকাবাসি থেকে শুরু করে প্রশাসনের শীর্ষ মহল পর্যন্ত পৌছেছে মন্জুরের ইয়াবা সিন্ডিকেটের তথ্য। কিন্তু, কেউ জানে না কিভাবে মন্জুর ইয়াবাকারবার শুরু করেছে। বর্তমানে তার কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকা কেন্দ্রিক বিশাল সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খুব আরাম আয়েশে চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা কারবার।

মন্জুর আলম ওরফে ইয়াবা মন্জুর উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সোনাইছড়ি গ্রামের মৃত ইসলাম মিয়ার ছেলে। ছোট বেলা থেকে অনাহারে-অর্ধহারে দিন চলত মন্জুর আলমের। ৫ ভাইয়ের মধ্যে মন্জুর ৪র্থ সন্তান। এক সময় দিনমজুরী কাজ করে জীবন যাপন করার পর কুলু ভাই জাফর আলমের হাত ধরে সৌদি আরবে পাড়ি জমায়। গত ৫/৬বছর আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে কক্সবাজার শহরের কলাতলীর শীর্ষ ইয়াবা কারবারি ও গত তিন বছর পূর্বে বন্দুকযুদ্ধে নিহত মুফিজের ছোট বোনকে বিয়ে করে। বিয়ের পর মোস্তাকের হাত ধরে জড়িয়ে পড়ে ভয়ংকর ইয়াবারে। প্রথমে এলাকায় খুচরা কারবার ও পরে পাইকারি চালান পৌছে দেয় কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। গত তিন বছর পূর্বে মুফিজ পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর পুরো ইয়াবাকারবার নিয়ন্ত্রণে নেয় মন্জুর। নিহত মুফিজের ছোট ভাই ও মন্জুরের শ্যালক আব্দুর রশিদ পুলিশের ভয়ে পালিয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ড্যারা পড়েছে। সেখানে বসেই চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক গড়ে তোলে ইয়াবার সিন্ডিকেট। চট্টগ্রামে আব্দুর রশিদ আর কক্সবাজারে বোনের স্বামী মন্জুর যৌথ কারবার করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। গত মাস দুয়েক আগে উখিয়ার সোনাইছড়ি মন্জুরের বাড়িতে রাতে র‌্যাব-১৫ এর একটিদল অভিযান চলাকালে কৌশলে পালিয়ে যান মন্জুর। এসময় তার বাড়ি থেকে ঢাকার এক সিন্ডিকেট সদস্যকে গ্রেপ্তার করলেও ধরতে পারেনি মন্জুরকে। বর্তমানে কক্সবাজার শহরে বসে নিরবে পাচার করছে কোটি কোটি টাকা মুল্যের ইয়াবা। গত মঙ্গলবার তার সেকেন্ড ইন কমান্ড নামে পরিচিত আনোয়ার হোসেনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। একটি সিএনজি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। আনোয়ার বর্তমানে জেলা কারাগারে রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকেই জানিয়েছেন, ‘র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর ভয়ে মন্জুর আলম ওরফে ইয়াবা মনজুর এলাকা ছেড়ে কক্সবাজার শহরে অবস্থান করছে। আর কক্সবাজার শহর থেকে মিয়ানমার কেন্দ্রিক টেকনাফের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইয়াবার চালান গুলো নিয়ে আসা হয়। দীর্ঘদিন ধরে বিশাল ইয়াবা কারবার করে কোটিপতির খাতায় নাম লেখিয়েছে।

টেকনাফের শামলাপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো: রাশেদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশের ব্যাপক রদবদলের সুযোগে শক্তি মুজবুত করে ইয়াবা ডন মনজুরের সিন্ডিকেট। স্ত্রীর বড় ভাই মুফিজ পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর পুরো সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে নেয় মন্জুর আলম। একারণে আর মন্জুরকে পেছনে থাকাতে হয়নি। একের পর এক পাচার করে ইয়াবার বড় চালান গুলো। বর্তমানে আইনশৃংখলা বাহিনীর চোখ ফাকি দিয়ে পাচার করছে ইয়াবার চালান। কিন্তু, র‌্যাব-পুলিশ অভিযানে বার বার ধরা ছোয়ার বাইরে থাকে মন্জুর। এরআগে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে ইয়াবা সহ একাধিকবার ধরা পড়ে মন্জুর। কিন্তু, কিছুদিন কারাগারে থাকার পর রহস্যজনক কারনে বেরিয়ে পড়ে। আর কারাগার থেকে বেরিয়েই জড়িয়ে পড়ে সিন্ডিকেট নেতৃত্বে।

জানতে চাইলে উখিয়া থানার ওসি আহম্মদ মন্জুর মোরশেদ জানান, ‘আমি মিটিং আছি। একারণে কোন তথ্য দেয়া সম্ভব নয়।

এব্যাপারে ইয়াবা ডন মন্জুরের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

ভয়েস/আআ