শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ০৪:১৩ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

পর্যটন শিল্পে ৩শ’ কোটি টাকা লোকসান: বেকার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ

কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে এভাবে জনশুন্য হয়ে পড়ে-ছবি:কক্সবাজার ভয়েস ডটকম।

আবদুল আজিজ:
করোনায় দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিকখাতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্তÍ হয়েছে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প। সৈকত ও বিনোদনকেন্দ্র গুলোতে বিধি-নিষেধের কারণে পর্যটকের আনাগোনা না থাকায় দিনের পর দিন খালি পড়ে আছে সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল। একই অবস্থা কক্সবাজারের দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোরও। একারণে পর্যটনের এ স্থবিরতায় লোকসান হয়েছে অন্তত ৩শ’ কোটি টাকারও বেশী। কর্মহীন হয়ে পড়েছে এ খাতের ওপর নির্ভরশীল অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। আবার কেউ কেউ এই সংখ্যা আরও অনেক বেশী বলে মনে করেন। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামীতে হাজার কোটি টাকারও বেশী লোকসানের কথা বলছেন পর্যটনের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে দেশের জেলাগুলোর মধ্যে আক্রান্তের দিকদিয়ে বর্তমানে কক্সবাজার জেলা ৫ নাম্বারে রয়েছে। একদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সংক্রমণ বৃদ্ধি, অন্যদিকে স্থানীয়দের মধ্যেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। এছাড়া এর আগে অর্থাৎ গত ৫এপ্রিল থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও বিনোদনকেন্দ্র গুলো বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ স্থবির হয়ে পড়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। বন্ধ রয়েছে কক্সবাজারের সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস। তিন শতাধিক রেস্টুরেন্ট, বিপণিবিতান, সৈকত সংলগ্ন শপিং মল, সৈকতের কিটকট, ট্যুর অপারেটরদের কার্যক্রম, বিচ বাইকসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান সমুহে ব্যবসা বন্ধ থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাভাবিক ও যন্ত্রপাতি ঠিকিয়ে রাখতে স্বল্প সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশপাশি বিদ্যুৎ চালু রাখতে হচ্ছে। এতে দিনদিন লোকসানের পরিমাণ বাড়লেও করোনা ভাইরাসের কারণে কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না এ শিল্পের উদ্যোক্তারা।

কক্সবাজার বীচ কিটকট মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এখন পর্যটক শুন্য। মানবশুন্য সৈকত বর্তমানে শুনশান নিরবতা। দীর্ঘ ২মাস সৈকতে কোন ধরণের মানুষ প্রবেশ করতে দেয়নি প্রশাসন। কাজেই কিটকট ব্যবসায়ীরা ভাল থাকার কথা না। সৈকতে কিটকট মালিক -কর্মচারী সহ ১ হাজার মানুষ এই ২ মাস ধরে বেকার। তাদের কোনো প্রকার আয় রোজগার নেই। ইতিমধ্যে অনেকেই অর্থসংকটে পড়েছেন। ফলে আমরা সবাই অসহায় হয়ে পড়েছি।’

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘করোনার কারণে দফায় দফায় লকডাউনে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প। এবারও এর কোন ব্যতিক্রম হয়নি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে পর্যটন বন্ধ থাকায় কক্সবাজারের সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউসগুলোতে কর্মকর্তা সহ ১ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। এরা সবাই প্রশিক্ষিত এ পর্যটন শিল্পের জন্য। পরবর্তীতে এই শিল্পে নতুন শ্রমিক তৈরি করতে অনেক বেগ পেতে হবে। তাই এসব শ্রমিকদের বাঁচিয়ে রাখতে কিছু একটা করা প্রয়োজন। এসব বিষয়ে নিয়ে গত শনিবার বিকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠকে আমাদের দুর্দশার কথা জানিয়েছি। তাই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন খুলে দিলে আমরা উপকৃত হব।’

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ট্যুয়াকের সভাপতি তোফায়েল আহমদ কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘করোনায় সারাবিশ্বের মত আমাদের দেশও নিস্তব্ধ। এ কারণে দেশের অর্থনৈতিকখাতে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বিশেষ করে পর্যটনখাতে যে স্থবিরতা নেমে এসেছে তা পুষিয়ে উঠতে অনেক বছর সময় লেগে যাবে। তাই, করোনা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে যতদ্রুত স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন চালু করতে পর্যটন শিল্পে জড়িতরা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলতে পারবে। পাশাপাশি সরকার রাজস্ব আদায়ে সেই আগের অবস্থা ফিরে পাবে।’

কক্সবাজার কলাতলী মেরিনড্রাইভ রোড হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুখিম খান কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে প্রতিদিন ৫ কোটি টাকারও বেশী লোকসান হচ্ছে। সে হিসাবে গত দুই মাসে ৩শ’ কোটি টাকারও বেশী টাকা লোকসান হচ্ছে। এতে বেকার হয়ে পড়ছে অন্তত অর্ধলাখ মানুষ। করোনা অস্বাভাবিক থাকলে লোকসানের মাত্রা আরও ভয়াবহ হবে।’

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম কক্সবাজার ভয়েসকে সিকদার বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে কক্সবাজারের সাড়ে ৪শতাধিক হোটেল-মোটেল সহ সবকিছু বন্ধ রয়েছে। এসব হোটেলের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও হোটেল সচল রাখতে আমাদের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রেখে দিতে হয়েছে। সেই সাথে রয়েছে বিদ্যুৎ বিল ব্যাংক ঋণ। এখন আমরা চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি। আমাদের সংগঠনের ২৬০টি হোটেলে প্রতি মাসে ৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান। তিন শত কোটি নয়, সবমিলিয়ে গত দুই মাসে কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে ৫শ’ কোটিরও বেশী টাকা লোকসান হয়েছে। এ শিল্পের সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ অর্ধলাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: আমিন আল পারভেজ কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘শনিবার (২২ মে) হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও পর্যটন শিল্পে জড়িত সংশ্লিষ্টদের সাথে জেলা প্রশাসনের একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে তাদের কথা গুলো আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। তবে এই মূহুর্তে আমাদেরও করার কিছু নেই। করোনায় আমাদের সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পর্যটন খুলে দেয়া হবে।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো: আবু সুফিয়ান কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘কক্সবাজারে এখন করোনার উর্ধ্বগতি। আগামী ৩০ মে পর্যন্ত কক্সবাজারে কঠোর লকডাউন ঘোষনা করা হয়েছে। এ কারণে কক্সবাজার পর্যটন খুলে দেয়ার কোন চিন্তাভাবনা নেই। যদি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, তাহলে পর্যটন খুলে দিতে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা আবেদন করবো। বিশেষ করে আগামী ৩০ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পর্যটন শিল্পে ক্ষতি দিকটি অবশ্যই সরকারে বিবেচনায় রয়েছে।’

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION