শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ১১:১০ অপরাহ্ন
নুরুল আলম সাঈদ, নাইক্ষ্যংছড়ি:
সারাদেশের ন্যায় বান্দরবান পার্বত্য জেলার মায়ানমার সীমান্তবর্তী উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ির দূর্গম দৌছড়ি ও বাইশারী ইউনিয়নে সদ্য ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্টিত হচ্ছে।
উক্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতার জন্য গত ৯ অক্টোবর আওয়ামীলীগ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড নাইক্ষ্যংছড়ির দৌছড়িতে মো: ইমরান ও বাইশারীতে মো : আলমকে দলীয় প্রার্থী ঘোষনা করেন। উক্ত দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করায়, দৌছড়ি আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিব উল্লাহকে আওয়ামীলীগ থেকে বহিস্কার করা হয়। হাবিব উল্লাহ চেয়ারম্যান দীর্ঘ দিন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ- সভাপতিসহ বিভিন্ন সময়ে দলের দুর্সময়ে ইউনিয়ন কমিটির সভাপতিসহ উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে দলীয় সম্পাদকীয় পদে দায়িত্ব পালন করেন। অপরজন বাইশারী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহাঙ্গির আলম বাহাদুর। জাহাঙ্গির আলম বাহাদুর বিভিন্ন সময়ে উপজেলা যুবলীগ, আওয়ামীলীগসহ অংগ সংগঠনের সম্পাদকীয় পদে দায়িত্ব পালন করেন। এই দু’ ত্যাগী নেতাকে গত ২৭ অক্টোবর দলীয় সিদ্বান্ত অমান্য করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করার অভিযোগে জেলা আওয়ামীলী বর্ধিত সভায় বহিস্কারের ঘোষনা দেয়।
জানা যায়,নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন অফিসার আবু জাফর ছালেহ বলেন,নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ২টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১টি হলো বাইশারী অপরটি দৌছড়ি ইউনিয়ন। এ নির্বাচনের মঙ্গলবার ছিলো মনোনয়নপত্র প্রত্যহারের দিন। বুধবার প্রতীক বরাদ্দের দিন। তিনি আরো জানান,অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে বাইশারীতে ৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে মো: আলম কোম্পানী বরাদ্দ পেয়েছেন নৌকা, তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গির আলম বাহাদুর,তিনি প্রতীক পেয়েছেন আনারস মার্কা। তৃতীয় জন হলেন, সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হাকিম মটরসাইকেল পক্ষান্তরে দৌছড়ি ইউনিয়নে ২ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী । একজন নৌকা প্রতীকের মোহাম্মদ ইমরান। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকও।
আর বিদ্রোহী প্রার্থী আলহাজ্ব হাবিবুল্লাহ বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতিও তিনি। তিনি প্রতীক নিয়েছেন মোটরসাইকেল। এদিকে বুধবার দুপুরে নিজ নিজ পছন্দের প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে ৭৪ জন ( চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা ও সদস্য পদপ্রার্থী) মহাখুশিতে মাঠে ফিরে গেছেন। সারাদিন তারা মিছিলে- সমাবেশে মাতোয়ারা হয়ে পড়ে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়। সমর্থকরা ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছেন বিজয়ের আগাম বার্তা দিয়ে।
অপরদিকে বুধবার সন্ধ্যায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব অধ্যাপক মো: শফিউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, নাইক্ষ্যংছড়িতে ২ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের দু’জন বিদ্রোহী প্রার্থী। একজন জাহাঙ্গির আলম বাহাদুর অপরজন হাবিবুল্লাহ। তারা দু’জনই আওয়ামী লীগ নেতা। এ নির্বাচনে তারা দলের নির্দেশ মানেনি। এ কারণে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সভার সিদ্ধান্ত মতে দলের সংবিধানের ৪৭ এর ১১ ধারা অনুয়ায়ী সকল পদ-পদবী সহ সাধারণ পদ হতে স্থায়ী বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেন তারা । এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা আওয়ামী লীগ উপজেলা কার্যালয়ে সকল নেতাদের উপস্থিতিতে সে সিদ্ধান্ত (বহিস্কারের) মাঠ পর্যায়ে জানিয়ে দেন তিনি ।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চেয়ারম্যান পদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে তেমন প্রভাব না পড়লেও তাদের আনন্দ কিছুটা বিষাদে পরিনত হয়।
এ বিষয়ে বহিস্কৃত জাহাঙ্গির আলম বাহাদুর বলেন, তিনি এখনও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। এছাড়া করারও কিছুই নেই। তিনি জনগনের কল্যানে কাজ করেছেন ৩৩ বছর। মূল্যায়ন হয়নি। তার গড়া তার কর্মীকে নৌকা প্রতীক দেয়া হলো, অথচ তাকে নয়। অপর প্রার্থী হাবিবুল্লাহ বলেন, তিনি প্রার্থী হতে চাননি। এলাকার হাজার হাজার সমর্থক তাকে প্রার্থী হতে বাধ্য করেছেন। তাই তিনি প্রার্থী। দল বহিস্কার করলেও এ নির্বাচনে তেমন প্রভাব পড়বে না। তিনি কিছুটা হতাশ।
সর্বশেষ খবর জানা গেছে নৌকা প্রতীক পেয়ে এবং বিদ্রোহীদের বহিস্কারাদেশের খবর পেয়ে তাদের নেতা-কর্মিদের মাঝে সাহস বেড়েছে। তারা নৌকার ২ মাঝিই ফুরফুরে মেজাজে আছেন।
এছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ির পার্শ্ববর্তী রামুর কচ্ছপিয়ায় একই দিন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্টিত হচ্ছে। কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় ভাবে আওয়ামীলীগ ব্যতীত কোন দল দলীয় প্রার্থী না দিলেও বিভিন্ন দলের ৫ জন নেতা নির্বাচনে লড়ছে। তারা ভোটারের মাঝে নানান ধরনের কথার ফুলঝুরি শুনাচ্ছেন। কেউ নিজ এলাকায় ওয়ার্ড ভিত্তিক চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়ী করার জন্য নানান কৌশলে ভোট ভিক্ষা চাচ্ছেন। সচেতন মহল কচ্ছপিয়ার নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি হতে পারে বলে শংকাও করেছেন। এছাড়া এই নির্বাচনের আড়ালে মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে মাদক ও অস্ত্র দেশে প্রবেশ করেত পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। গত ২৭ অক্টেবর কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার বহুল আলোচিত কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা ও সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বী
প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য যে,গত ৯ অক্টোবর আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় ইউপি নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্বান্ত নুরুল আমিন কোম্পানীকে আওয়ামীলীগের (নৌকা প্রতীকের) চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনীত করা হয়। দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী ২৭ অক্টোবর কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটানিং অফিসার রামু উপজেলা কৃষি অফিসার আবু মাসুদ সিদ্দিকী প্রতিদ্বন্ধি চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা ও সদস্য পদের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়। বরাদ্দকৃত প্রতীক অনুসারে কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থীগন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আমিন কোম্পানী ( নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবু ইসমাইল মো: নোমান ( আনারস), স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়নাল আবেদীন ( মটর সাইকেল) , স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈয়ব উল্লাহ ( চশমা), স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল আকবর হেলাল ( ঘোড়া), স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তালেব (রজনীগন্ধা ফুল)।
এছাড়া কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধি সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা ও সদস্য পদের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয় কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্ব প্রাপ্ত রিটানিং অফিসার রামু উপজেলা কৃষি অফিসার আবু মাসুদ সিদ্দিকী। এই সময় উপজেলা কৃষি অফিসারের কার্যালয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী সকল চেয়ারম্যান,সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা ও সদস্য পদের প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য যে,কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী ১১ নভেম্বর।
ভয়েস/আআ