শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৭ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

পর্যটকদের নিয়ে সর্বত্র গলাকাটা বাণিজ্য!

আবদুল আজিজ:

কক্সবাজারে পর্যটকদের নিয়ে গলাকাটা বাণিজ্য করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। হোটেল-মোটেল ছাড়াও পরিবহণ ভাড়া আদায় করছে অতিরিক্ত দ্বিগুন। শহরের অটো বাইক, রিক্সাচালক ও রেষ্টুরেন্ট সবখানে এসব বানিজ্য করছে। এতে করে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা হয়রানি ও প্রতারিত হচ্ছে। অবশ্য, এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন পুলিশ ও জেলা প্রশাসন।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে টানা তিনদিনের ছুটিতে ৫ লাখেরও বেশী পর্যটক এখন কক্সবাজার অবস্থান করছেন। ঘুরে বেড়াচ্ছেন কক্সবাজারের আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট গুলো। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় কিছু প্রভাব পড়েছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু পর্যটন ব্যবসায়ী গলাকাটা বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। কক্সবাজারের হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও পরিবহণ গুলো আদায় করছে যেনতেন ভাড়া। এতে দূর-দূরান্ত থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বিশ্বের দীর্ঘতম সমদ্র সৈকতের গৌরব বহনকারী এ কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

দেখা গেছে, হোটেল মোটেল গুলোতে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত রুম ভাড়া আদায় করছে। প্রতিটি হোটেলে প্রকাশ্যে এসব ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আগে যে রুম ভাড়া ১ থেকে ২ হাজার টাকা ছিল, তা বেড়ে এক লাফে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। একইভাবে পরিবহণ, খাবারের দোকান ও রেষ্টুরেন্টে অস্বাভাবিক দামে পর্যটকদের ঠকাচ্ছে। বিশেষ করে শহরের কলাতলী মোড় থেকে সুগন্ধা পয়েন্ট পর্যন্ত ইজিবাইক ও রিক্সা ভাড়া জনপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা। যদি কেউ প্রাইভেটে আসে তাহলে ৩০ থেকে ৪০টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করার বিধান রয়েছে। কিন্তু, রিক্সা ও ইজিবাইক চালকরা এতে আদায় করছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। বিশেষ করে এক শ্রেণীর ইজিবাইক চালকরা পর্যটক দেখলেই দ্রুত পাশে গিয়ে কৌশলে গাড়িতে উঠায়। পরে পথ অনেক দূর আছে, এমন মিথ্যা অজুহাত দিয়ে ভিন্ন পথে নিয়ে আদায় করছে অতিরিক্ত ভাড়া। এতে করে কক্সবাজার পর্যটন শিল্প নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

সুমাইয়া আক্তার ও মহসীন পারভেজ ঢাকা থেকে কক্সবাজার ভ্রমনে এসেছেন একদিন আগে। এতে খাবারের সমস্যা পড়েছেন। দুপুরে এক প্লেট আলু ভর্তার দাম রেখেছে ৩০০ টাকা। দুই পিস কোরাল মাছের দাম রেখেছে ৭০০ টাকার বেশি।

একই কথা বলছেন, রাজশাহী থেকে আসা চৌধুরী শফিকুল ইসলাম। তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে কক্সবাজারে এসে পড়েছে বেকায়দায়। তার ভাষ্যমতে যে হোটেলে রুম বুকিং দিয়েছেন সেটি অন্তত কোন রকমের। অথচ বুকিং নেয়ার সময় বলেছিল থ্রি স্টার মানের। কিন্তু এসে দেখি দুজন থাকা কষ্টের। মাগরিবের পর মশার যন্ত্রণাই অতিষ্ঠ।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্ট টুরিস্ট পুলিশ কার্যালয়ের সঙ্গে লাগোয়া ‘কয়লা রেস্টুরেন্ট’। এ রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছেন অনেক পর্যটক। কক্সবাজারে বেড়াতে এসে বেসরকারি সংস্থায় কমরত সোহেল আরমান বলেন, শুধু গলাকাটা বললেই কম হবে, রীতিমতো অবাক হয়েছি ‘কয়লা রেস্টুরেন্টে’ এক বাটি মুগ ডালের দাম রাখা হয়েছে সাড়ে ৩০০ টাকা। অথচ এ মানের অন্য রেস্টুরেন্টে এক বাটি মুগ ডালের দাম নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা। শুধু ডাল নয় এ রেস্টুরেন্টে সবকিছুরই বাড়তি দাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু কোরাল রেস্টুরেন্ট বা কয়লা রেস্টুরেন্ট নয়, কক্সবাজার হোটেল, মোটেল, জোন, বিচ এলাকা, ইনানীসহ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বিভিন্ন স্থানে যে চার শতাধিক রেস্টুরেন্ট রয়েছে এর মধ্যে বেশির ভাগ রেস্টুরেন্টে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য। এতে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকরা।

হোটেল-মোটেল গুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার কথা স্বীকার করে কক্সবাজার হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: আবুল কাসেম কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ভরা মৌসুমে হোটেলের রুম ভাড়া একটু বেশী। তবে মাত্রারিক্ত যে হোটেল মালিক ভাড়া বেশী আদায় করে আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের তাছে অভিযোগ দায়ের করব। এছাড়াও খাবারের রেষ্টুরেন্ট গুলো প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে। এতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনকে জানাব।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো: আবু সুফিয়ান কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, আগত পর্যটকদের হয়রানি করা কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না। যেখানেই অভিযোগ পাওয়া যাবে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আশা করি, পর্যটক নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দে কক্সবাজার সৈকত ও অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলো উপভোগ করতে পারবেন। এজন্য কাজ করছে আমাদের একাধিক টিম।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION