সোমবার, ৩০ Jun ২০২৫, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন
মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা:
মৃত্যুর ঝুঁকি জেনেও দিনে দিনে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি বেড়ে চলেছে। বর্ষা এলেই টানা বৃষ্টিতে বান্দরবানের লামায় পাহাড় ধস শুরু হয়। বিগত ১০ বছরে লামায় পাহাড় ধসে কমপক্ষে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তারপরেও থেমে নেই পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ। প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করেই হচ্ছে এইসব জনবসতি নির্মাণের কাজ।
জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের সাথে আলাপ করে জানা যায় লামা উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় পাহাড় ধসের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে সাড়ে ৪ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজারের অধিক মানুষ। বিগত বছরের বর্ষায় লামায় ৩০৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। লামা উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতিবছরই বর্ষার সময় পাহাড় ধসে জীবন ও সম্পদ হারায় অসংখ্য মানুষ। তবে প্রকৃতপক্ষে কত মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে তার কোন সমীক্ষা নেই কারো কাছে।
জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্নি এনজিও’র জরিপেও দেখা গেছে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের ঢালুতে (পাদদেশে) বসবাস করছেন ২০ হাজারের অধিক মানুষ। লামা পৌরসভা ও গজালিয়া, লামা সদর, ফাঁসিয়াখালী, আজিজনগর, সরই, রুপসীপাড়া, ফাইতং ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে সাড়ে ৪ হাজার পরিবার। এদের বেশিরভাগই নিম্নমধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্র মানুষ। বিগত বছরে বর্ষার শুরুতে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে সরাতে প্রশাসন নানান পদক্ষেপ নিলেও তা সম্ভব হয়নি। ভূমিহীনদের নতুন করে পূর্নবাসন না করে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে উচ্ছেদ করা সম্ভব নয় এবং তা অমানবিক হবে বলে জানান লামার সচেতন মহল।
পাহাড় ধসের সংরক্ষিত তথ্য সূত্রে দেখা যায়, ১৯৯৬ সালে লামা পৌর এলাকার রাজবাড়িতে একই পরিবারের ৭জন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১১জনের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে ২৭ জুন এক রাতে ফাইতং ইউনিয়নের পাহাড় ধসে একই পরিবারের ১১ জন সহ ২৭ জন নারী-পুরুষ-শিশু মারা যান। ২০১২ সালের এই দিনে উপজেলার আরো অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়। ফাইতং ইউনিয়নের রাইম্যা খোলায় এক পরিবারের ১১জন একসাথে মারা যাওয়ার ঘটনা মনে পড়লে এখনো শিউরে উঠেন স্বজন হারানো সেই মানুষগুলো। ২০১৫ সালের ১লা আগস্ট লামা উপজেলা সদরে হাসপাতাল পাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে ২ পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু। এছাড়া প্রতিবছরই পাহাড় ধসে কম-বেশী মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
২০১২ সালের ভয়াবহ পাহাড় ধসের ট্রাজেডির বর্ণনা দিতে গিয়ে লামার ফাইতং ইউনিয়নের পিয়ারা বেগম বলেন, নুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি তার প্রতিবেশী হিসেবে মাত্র দু’মাস পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে ঘর বেঁধে বসবাস শুরু করে তারা। সে রাতের পাহাড়ের মাটি চাপায় আমার পরিবারের ৭ জন ও ৪ জন মেহমান সহ মোট ১১ জন মর্মান্তিক ভাবে মারা যান।
লামা পৌরসভার হাসপাতাল এলাকার স্থানীয় অধিবাসী মোঃ রুবেল, আলমগীর ও আলমগীর সহ অনেকে জানান, থাকার কোন বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ও সমতলের জমির দাম বেশী হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের ঢালুতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছে তারা। সরকার কোথাও নিরাপদ স্থানে থাকার সুযোগ করে দিলে তারা এখান থেকে চলে যাবেন।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী পরিবার গুলোকে মাইকিং করে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। টানা বৃষ্টি শুরু হলে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। দুর্যোগকালীন সময়ে প্রতিটি সরকারী-বেসরকারী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি ঝুঁকিতে মানুষের বসবাস কমাতে লোকজনকে সচেতন করা হচ্ছে।
ভয়েস/আআ