শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ০৫:২৩ অপরাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের বেশিরভাগ এলাকায় এক সময় ক্ষতিকর তামাকের আধিপত্য থাকলেও সময়ের পরিবর্তনে অনেক এলাকায় এখন শুরু হয়েছে তুলা চাষ। আর এ তুলা চাষে চাষিদের জীবনে এসেছে স্বচ্ছলতা।লাভ দেখে চাষিরা ঝুঁকছেন এ তুলা চাষে।
বর্তমানে জেলার সাতটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় থেকে তুলা উত্তোলন শুরু করে দিয়েছেন চাষিরা। চাষিরা পাহাড়ি তুলার পাশাপাশি আপল্যান্ড জাতের তুলা চাষে ফলন ভালো পাওয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। সদর উপজেলার মেঘলা, চিম্বুক, চড়ুইপাড়া, লেমুঝিড়ি, বালাঘাটা জয়মোহন পাড়াসহ বিভিন্ন পাড়ায় চলছে তুলার আবাদ। চাষিরা পাহাড়ে জুম চাষের পাশাপাশি তুলা চাষ করে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় খুশি।
বান্দরবান সদরের লেমুঝিড়ির তুলা চাষি অনঙ্গ্যা তংচঙ্গ্যা বলেন, এক সময় শুধু তামাক চাষ করে পরিবার চালাতাম। তামাক চাষ আর বিক্রি করে যা আয় হতো, তার চেয়ে তুলা চাষে কষ্টও কম, লাভও বেশি।
বান্দরবান সদরের লেমঝিড়ির তুলা চাষি চে অং মারমা বলেন, আগে পাহাড়ি তুলা চাষ করতাম আর এখন আপল্যান্ড তুলার চাষ করছি। এর উৎপাদন বেশি লাভও বেশি।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ক্ষতিকর তামাক চাষ বন্ধ করে ওইসব জমিতে তুলার আবাদ বৃদ্ধি ও কৃষকদের উন্নয়নে তুলা উন্নয়ন বোর্ড প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। আর পাহাড়ি তুলার পাশাপাশি আপল্যান্ড জাতের তুলার চাষ বাড়াতে বিনামূল্যে বীজ, সার ও কীটনাশক এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান জোনের ফিল্ড সুপারভাইজার ববিতা তংচঙ্গ্যা বলেন, আমরা চাষিদের তুলা চাষের জন্য বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছি। আর এতে পার্বত্য জেলায় তুলার আবাদ বাড়ছে। আমরা বেশিরভাগ এলাকায় গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিই এবং কৃষকরা আমাদের পরামর্শ পেয়ে তুলার আবাদ বৃদ্ধিতে কাজ করছেন।
বান্দরবান পাহাড়ি তুলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মংসানু মারমা বলেন, তামাকের আগ্রাসন থেকে পাহাড়ের চাষিদের রক্ষা করা এবং পার্বত্য জেলায় তুলার চাষ সম্প্রসারণে আমরা নিয়মিত চাষিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি এবং তুলার জাত সম্প্রসারণ এবং তুলার উন্নয়নে আমাদের কর্মকর্তারা সচেষ্ট রয়েছেন।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান জোনের তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে বান্দরবানে ছয় হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছে। আর এর বিপরীতে ২১৫০.৭ মেট্রিক টন তুলা উৎপাদন হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে পাঁচ ৯০১ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছে। এর বিপরীতে ২৪২০.১৭ মেট্রিক টন তুলা উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড, বান্দরবান জোনের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলমগীর হোসেন মৃধা বলেন, বান্দরবানে আগে পাহাড়ি তুলা উৎপাদন হলেও ধীরে ধীরে চাষিরা আপল্যান্ড জাতের তুলা চাষে ঝুঁকছেন। আর এতে কয়েকগুণ উৎপাদন বেশি হচ্ছে এবং দামও বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বান্দরবানে পাঁচ ৫৭৩ জন চাষি তুলা চাষে সম্পৃক্ত। এ বছর পাহাড়ি তুলা প্রতিমণ ২৮০০ টাকায় ও আপল্যান্ড জাতের তুলা প্রতিমণ ৩৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন কৃষকরা। বান্দরবান পার্বত্য জেলায় তুলার আবাদ বাড়াতে হাইব্রিড তুলাবীজসহ প্রায় ৪.৫ টন তুলা বীজ চাষিদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে, যেখান থেকে ৬৫০০ বেল আঁশতুলা ছাড়াও ১৫০০ টন তুলাবীজ পাওয়া যাবে।
এক মৌসুমে পাহাড়ি তুলার ফলন ২৭০ কেজি আর উচ্চভূমির তুলার (আপল্যান্ড) ফলন হেক্টর প্রতি ৫০০ কেজি। উচ্চভূমির তুলার আঁশের দৈর্ঘ্য, বর্ণ, স্প্রিনিং গুণাবলী কাঙ্ক্ষিত মানের হওয়ায় এর বাজারদর পাহাড়ি তুলার চেয়ে বেশি বলে জানান তিনি।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড সদর দপ্তর, ঢাকার নির্বাহী পরিচালক কৃষিবিদ মো. আখতারুজ্জামান বলেন, পার্বত্য জেলা বান্দরবানে আমরা তুলার চাষ সম্প্রসারণে কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার দিচ্ছি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে পাহাড়ে আপল্যান্ড জাতের তুলার চাষ বাড়ছে। আপল্যাড তুলা হলো টেক্সটাইলে ব্যবহৃত তুলা, যার ফলন জুমে চাষকৃত সাধারণ তুলার চেয়ে অনেক বেশি।
তিনি আরও বলেন, বান্দরবনের পাহাড়ের উপত্যকায় ও পাহাড়ের ঢালে চাষ উপযোগী এ আপল্যান্ড তুলা। তামাকের চেয়ে অনেক বেশি লাভজনক হওয়ায় চাষিরা তামাক চাষ ছেড়ে তুলা চাষে মনোনিবেশ করছেন। বর্তমানে প্রতি কেজি তুলা ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে এ তুলা চাষ করতে ১০-১২ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আর উৎপাদন হয় ১২-১৪ মণ তুলা, তাই এক বিঘা জমি থেকে ৩০-৩৫ হাজার টাকা লাভ করা যায়। আবার সাথী ফসল চাষ করেও বাড়তি আয় করা যায়।সুত্র: বাংলানিউজ
ভয়েস/আআ