EDITOR
- ১৫ জুন, ২০২২ /

বিশেষ প্রতিবেদক:
আসন্ন মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফরম পূরণে একাধিক স্কুলে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ ১৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলছে। গত ৩ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন, সেশনচার্জ ও মোট ২৪ মাসের বেশি বেতন নেওয়া যাবে না। একইসঙ্গে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপ বোর্ড ফি ১ হাজার ১৭৫ টাকা, কেন্দ্র ফি ৪৪০ টাকাসহ মোট ফি ১ হাজার ৬১৫ টাকা, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিকে বোর্ড ফি ১ হাজার ৮৫ টাকা, কেন্দ্র ফি ৪১০ টাকাসহ মোট ১ হাজার ৪৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে এসব নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে ছনখোলা মডেল হাইস্কুল ও পিএমখালী উচ্চ বিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, ছনখোলা মডেল হাইস্কুল এ পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিন হাজার একশত পঞ্চাশ টাকা ফরম পূরণের জন্য আদায় করেছেন চিহ্নিত শিক্ষক সিন্ডিকেট। এছাড়াও পিএমখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণের জন্য আড়াই হাজার টাকা, ছনখোলা সুলতানিয়া দাখিল মাদ্রাসায় তিন হাজার টাকা, পিএমখালী আদর্শ দাখিল মাদ্রাসায় পঁচিশ শত টাকা রসিদ বিহীন আদায় করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত অর্থ আদায় করলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানিয়রা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, অনেকটা বাধ্য করেই ছনখোলা মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাকের হোসাইন তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করছেন। স্কুল নির্ধারিত ফি না দিলে ফরম পূরণ করতে দিবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকেরা। একইসঙ্গে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত বেতনও পরিশোধের ঘোষণা দেয় উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছনখোলা মডেল হাইস্কুল থেকে এ বছর ৩১ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছে। সরকার ফরম পূরণে ১ হাজার ৪৯৫ টাকা(মানবিক) নির্ধারণ করে দিলেও শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে ৩ হাজার ১৫০ টাকা শুধু (ফরম ফিলাপ বাবদ) দিতে হয়েছে। দরিদ্র শিক্ষার্থীরাও এর হাত থেকে রক্ষা পায়নি। তবে এই বাড়তি টাকার বিপরীতে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো রসিদ দেয়নি। ২/১জন অভিভাবক টাকা পরিশোধের ডকুমেন্ট হিসেবে রসিদ চাইলে হেডমাষ্টার জাকের হোসাইন এক টুকরো কাগজে টাকা নেওয়ার প্রাপ্তি স্বীকার পত্র স্বহস্তে লিখে দিয়েছেন। (যা প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে) এব্যাপারে অভিযোগ পেয়ে ভোক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে শতভাগ সত্যতা পেয়েছেন প্রতিবেদক।
ছনখোলা মডেল হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছনখোলা পশ্চিমপাড়া গ্রামের এক শিক্ষার্থীর পিতা (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, চরম অর্থ কষ্টে দিন যাপন করছি। মেয়ের ফরম পূরণে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে ফরম পূরণের জন্য সরকারি নির্ধারিত টাকা ছাড়া এত টাকা দিতে পারব না বলে জানায়। এসময় স্কুল নির্ধারিত টাকা দিতে না পারলে ফরম পূরণের কোন সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়ে আমাকে ফিরিয়ে দেয় মৌলানা জাকের। পরে বাধ্য হয়ে তিন হাজার একশত পঞ্চাশ টাকা ধারদেনা করে মেয়ের পরীক্ষার ফরম পূরণ করেন। এছাড়া প্রতিমাসে মাসিক ফিস ১৫০ টাকা, পরীক্ষার ফি, প্রতিমাসে কোচিং ফিস ৩৫০ টাকাসহ অন্যান্য ফিতো নিচ্ছেই (চলমান) এসবের কোন ছাড় নেই। তিনি বলেন, অন্যান্য স্কুলের চাইতে এ স্কুলে সবক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা নিলেও এলাকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবাই নিরবে পরিশোধ করে দেয়। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের টাকা সরকার প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নির্ধারিত করে দিয়েছেন। তারপরেও ওই স্কুলের শিক্ষকেরা সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে দ্বিগুণ অর্থ আদায়ে ছাত্রছাত্রীদের ফরম ফিলাপ করতে বাধ্য করেছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট অত্র স্কুলের দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদেরকে শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক জাকের হোসেনের মুঠোফোনে কল কথা হলে সে একটি মিটিংয়ে(রাত পৌনে দশটায়) আছেন বলে বিস্তারিত বলতে অপরাগতা প্রকাশ করে ফোন কেটে দেয়। পিএমখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, বোর্ড নির্ধারিত ফি ছাড়া তারা অতিরিক্ত কোন টাকা নেয়নি। এরকম অভিযোগ ডাহা মিথ্যা। পিএমখালী আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা থেকে এবছর ১৪১জন শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষা দিবেন।তাদের কাছ থেকে আটারশ (১৮০০) টাকা করে ফরম ফিলাপের টাকা নিয়েছেন বলে জানান প্রধান শিক্ষক নুর আহমদ। কয়েক বার চেষ্টা করেও মুঠোফোনে সংযোগ না পাওয়ায় ছনখোলা সুলতানিয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য জানা যায়নি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন, বোর্ড নির্ধারিত ফি এর বাহিরে একটি টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভয়েস/আআ