সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

পাখি নিধন পাপের কাজ

মুহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাত:

বৈচিত্র্যময় এই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা ও ইকো সিস্টেমকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে পাখির প্রতি যত্নবান ও দায়িত্বশীল আচরণ করা অত্যন্ত জরুরি। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে অন্য জীবের প্রতি আমাদের আচরণও সেরা হওয়া উচিত। অথচ প্রতিনিয়ত কারণে-অকারণে আমাদের রূঢ় আচরণ ও নিষ্ঠুরতার স্বীকার হয় নির্বাক পশুপাখি। বিশেষ করে প্রতি বছর শীতকাল এলে আমাদের দেশে একশ্রেণির মানুষ পাখি শিকারে তৎপর হয়ে ওঠে, যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ এবং প্রচলিত আইনের অপরাধ। প্রকৃতির উর্বর ভূমি বাংলাদেশে প্রতি বছর শীতের সময় পৃথিবীর বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশ থেকে উড়ে আসে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি।

পাখি বিশ্ব প্রকৃতির এক অনন্য সম্পদ। এদের অবাধ বিচরণ ও প্রজননের ব্যাপারে সবার যত্নশীল হওয়া উচিত। বিশেষ করে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আসা এসব অতিথি পাখিকে কোনো অবস্থায় মারা উচিত নয় বরং তাদের যেন উপযুক্ত আবাস ও খাদ্যের ব্যবস্থা করা যায়, সে ব্যাপারে সরকার, প্রকৃতিসেবী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ জনগণের মুখ্য ভূমিকা থাকা দরকার। সরকারি হিসাব অনুযায়ী পরিযায়ী পাখির অবাধ বিচরণের জন্য ১২টি অভয়ারণ্য থাকার কথা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে পরিপূর্ণ কোনো অভয়ারণ্য গড়ে তোলা আজও সম্ভব হয়নি।

উল্টো জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন বিল-ঝিল, জলাশয় ভরাট করে বসতি স্থাপনের ফলে, বন-জঙ্গল উজাড় করে প্রতিনিয়ত পাখির আবাসস্থল ধ্বংসের পাশাপাশি প্রকৃতির বিরূপ আচরণে পাখিদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। তার ওপর কিছু মানুষ পাখি শিকারের কাজে ব্যস্ত থাকে। অথচ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী অতিথি পাখি হত্যার দায়ে একজন অপরাধীকে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। একইভাবে কোনো ব্যক্তি যদি পরিযায়ী পাখির মাংস, দেহাংশ সংগ্রহ করেন, দখলে রাখেন কিংবা ক্রয়-বিক্রয় করেন বা পরিবহন করেন, সে ক্ষেত্রে তার সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদন্ড- এবং সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার আইন রয়েছে। এমন আইন থাকার পরও শিকার হয় পরিযায়ী পাখি। জালের ফাঁদ পেতে, বিষটোপ অথবা এয়ারগানের মাধ্যমে পাখি শিকার করে বাজারে বিক্রি করে কিছু লোভী মানুষ।

আবার অনেকেই আছে, শখের বশে পরিযায়ী পাখি শিকার করে রসনা বিলাস করে। এ ছাড়া পর্যটকদের অবাধ আনাগোনা ও পাখিদের উত্ত্যক্ত করার কারণে পরিযায়ী পাখিদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটে। তাই পরিযায়ী পাখির অবাধ বিচরণ ও নিরাপত্তার স্বার্থে দেশে প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। পাখি প্রকৃতি ও পরিবেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এসব অতিথি পাখির অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বদলে যাচ্ছে আমাদের প্রকৃতি-পরিবেশ। দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে পাখিদের বেঁচে থাকা এবং বংশবৃদ্ধি করা। এমতাবস্থায় আমাদের উচিত পাখির নতুন নতুন অভয়ারণ্য সৃষ্টি করে তাদের অবাধ বিচরণ ও নিরাপদ প্রজননের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। সামাজিক বনায়ন বৃদ্ধির মাধ্যমে পাখির জন্য নতুন নতুন আবাসস্থল গড়ে তুলতে হবে। আমরা যদি অতিথি পাখিদের উপযুক্ত পরিবেশ দিতে পারি তাহলে প্রতি বছর অতিথি পাখির সংখ্যা বাড়বে এবং বিরল জাতের অনেক পাখি আমাদের দেশে থেকে যাবে এবং বংশ বৃদ্ধি করবে।

অহেতুক পাখি নিধন শুধু দেশীয় আইনেই নিষিদ্ধ নয় ইসলামেও এটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ইসলাম মানবাধিকারের কথা যেমন কঠোরভাবে বলেছে, তেমনি জীবজগৎ ও পশু-পাখিদের ব্যাপারেও যথেষ্ট তাগিদ দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেন, ‘পৃথিবীতে বিচরণশীল যত প্রাণী আছে, আর যত পাখি দুই ডানা মেল উড়ে বেড়ায়, তারা সবাই তোমাদের মতো এক-একটি জাতি।’ সুরা আনআম: ৩৮

তাই পাখির ব্যাপারে যত্নবান হওয়া সবার নৈতিক দায়িত্ব। বিনা কারণে পাখি নিধন তো দূরের কথা তাদের অঙ্গহানি করাও ইসলামে নিষেধ। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ওই ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন, যে প্রাণীদের অঙ্গহানি করে।’ সহিহ বোখারি

নবী করিম (সা.)-এর শিক্ষা মতে, যে ব্যক্তি অহেতুক কোনো পশু-পাখি হত্যা করে কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পশু-পাখি আল্লাহর দরবারে নালিশ করবে। পবিত্র কোরআনের অনেক স্থানে পাখির কথা বলা হয়েছে যাতে করে মানুষ সতর্কতা অবলম্বন করে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে। তার পরও মানুষ বিভিন্ন নির্বাক প্রাণী ও পশু-পাখির প্রতি নির্দয় আচরণ করে, যা নিন্দনীয় ও পাপের কাজ। মানুষের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে ১৭০০ শতক থেকে আজ পর্যন্ত ১২০ থেকে ১৩০ প্রজাতির পাখি পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে।

আমাদের উচিত পরিযায়ী পাখির ব্যাপারে দায়িত্বশীল আচরণ করা। জলাভূমিগুলো পরিচর্যা করে ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করা। যাতে করে পরিযায়ী পাখিদের বসবাসের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION