সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪০ অপরাহ্ন
শায়খ আবদুল বারী বিন আওয়ায আস সুবাইতি:
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ঘটনাসমূহের হয়েছে রয়েছে উম্মতের জন্য শিক্ষা ও উপদেশ। এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় আল্লাহতায়ালা আমাদের কাছে প্রথম সৃষ্টি হজরত আদম (আ.) ও তার স্ত্রী হজরত হাওয়া (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। এই ঘটনায় শয়তানের সঙ্গে মানুষের দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। শুরু হওয়া এই দ্বন্দ্ব চলতে থাকবে কেয়ামত অবধি; যতদিন আদম সন্তান ও তাদের শত্রু ইবলিশ অবশিষ্ট থাকবে। কোরআন মাজিদে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর হে আদম! আপনি ও আপনার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করুন, অতঃপর যেখান থেকে ইচ্ছে খান, কিন্তু এ গাছের ধারেকাছেও যাবেন না, তাহলে জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। তারপর তাদের লজ্জাস্থান, যা তাদের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল তা তাদের কাছে প্রকাশের জন্য শয়তান তাদের কুমন্ত্রণা দিল এবং সে বলল তোমাদের রব এই বৃক্ষের কাছে যেতে নিষেধ করেছেন, এর কারণ এ ছাড়া কিছুই নয় যে, তোমরা যেন ফেরেশতা হয়ে না যাও, অথবা এখানে চিরন্তন জীবন লাভ করতে না পারো। আর সে তাদের উভয়ের কাছে শপথ করে বলল, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের শুভাকাক্সক্ষীদের একজন। অতঃপর সে তাদের প্রবঞ্চনার দ্বারা অধঃপতিত করল। এরপর যখন তারা সে গাছের ফল খেল, তখন তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদের আবৃত করতে লাগল। তখন তাদের রব তাদের ডেকে বললেন, আমি কি তোমাদের এ গাছ থেকে নিষেধ করিনি এবং আমি কি তোমাদের বলিনি, নিশ্চয় শয়তান তোমাদের উভয়ের প্রকাশ্য শত্রু। তারা বলল, হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। আর যদি আপনি ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ -সুরা আল আরাফ: ১৯-২৩
হজরত আদম (আ.) ও তার স্ত্রীকে জান্নাতে বসবাসের নির্দেশ ছিল সম্মানার্থে এবং তার উচ্চ মর্যাদা ও অবস্থানের কারণে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশসমূহ মেনে চলবে সেও আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান হবে, তার হৃদয় প্রশান্তিতে পরিপূর্ণ হবে, অন্তর শান্তি লাভ করবে এবং জীবন-যাপন সুখের হবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধিবিধান থেকে দূরে অবস্থান করবে ও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে সংকুচিত জীবনযাপন করবে।
‘অতঃপর যেখান থেকে ইচ্ছে খান’ বলে আল্লাহতায়ালা মানুষের জন্য সব পবিত্র জিনিসকে বৈধ করেছেন এবং খাদ্য ও পানীয়ের ক্ষেত্রে প্রশস্ততা দান করেছেন। হারাম বস্তুর সীমার নিকটবর্তী হওয়া থেকে সাবধানতার সঙ্গে সতর্কতামূলক পথে চলার নির্দেশনা এসেছে এখান থেকেই। নিজের সুরক্ষা, চরিত্রের হেফাজত, সমাজের প্রতিরক্ষা এবং আল্লাহ কর্র্তৃক নির্ধারিত সীমারেখার মাঝে অবস্থানের প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে। যে শিরকি কর্মকান্ডে জড়িত, সে তো নিষিদ্ধ জিনিসের উপায়-উপকরণের নিকটবর্তী হওয়ার কারণেই জড়িত হয়েছে। যে বিদআতে জড়িত, সে তো বিদআতপন্থিদের সঙ্গে ওঠাবসা, তাদের কিতাব অধ্যয়ন ও তাদের প্রতি শিথিলতা প্রদর্শনের কারণেই ওই পথের যাত্রী হয়েছে। কেউ সগিরা গোনাহে লিপ্ত হওয়া ও তার ওপর অনড় থাকা ছাড়া কবিরা গোনাহের দিকে ধাবিত হয় না। আধুনিক প্রযুক্তি তো উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের একটি মাধ্যম মাত্র, চাই তা ভালো হোক বা মন্দ। যে ব্যক্তি সীমানার কাছে ঘোরাঘুরি করবে, নিভৃতে অন্যায় কাজ সম্পাদন করবে; তার নামাজ, চরিত্র ও সময় নষ্ট হবে। ইবাদতের সময়গুলো গোনাহের সময়ে এবং আল্লাহর সঙ্গে বন্ধুতা হৃদয়ের নিঃসঙ্গতায় পরিবর্তিত হয়ে যাবে।
হারাম ও নিষিদ্ধ জিনিসের মাঝে স্বাধীনতার সংকোচন নেই। বরং এর মাধ্যমে পরীক্ষা এবং দাসত্বের প্রকৃতরূপ বের করে আনা হয়; যা অপেক্ষমাণ শত্রুর অপমান এবং নিভৃতে ও প্রকাশ্যে আল্লাহর নজরদারির দাবি রাখে। আমাদের এই আয়াতগুলো শিক্ষা দেয়, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তাতে জড়িত হওয়া তো দূরের কথা, যে ব্যক্তি তার নিকটবর্তী হয় সে নিজের প্রতি জুলুমকারী। মানুষ অনেক সময় নিজের প্রতি জুলম করে সংশয়মূলক বস্তুর অনুগামী হওয়ার মাধ্যমে। যেগুলো তাকে হারামের দিকে নিয়ে যায়; তাতে নিপতিত হওয়ার মাধ্যমে। এর মাধ্যমগুলো হলো খাবার, পানীয়, পোশাক, পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের অধিকার এবং সম্পদ, লেনদেন ও এগুলোতে বিদ্যমান সুদ, ধোঁকা ও আত্মসাৎ ইত্যাদি।
ভয়েস/আআ