শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৫ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

চান্নি পহরের একজন হুমায়ূন আহমেদঃ কলম পাখির মননের স্পন্দন

বিশ্বজিত সেন:
ধবল জ্যোৎস্নায় স্নাত মানুষটার কলম পাখি এখনো থেমে যায়নি।পূর্ণিমার আলো পাগল লোকটা কোন না কোন ভাবে মানুষ এবং সারা জাতির মধ্যে জড়িয়ে আছে । শিক্ষক হিসেবে বিজ্ঞানচিন্তা, লেখায় কল্প- বিজ্ঞান, অতিপ্রাকৃত কথা, মধ্য বিত্তের জীবন যন্ত্রণা, সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির ক্ষত- বিক্ষত, বেদনার উপাখ্যান, মানুষের স্বপ্নবিলাসের নেশাটাকে ধরে রাখতে কলম পাখিটা অসামান্য কাজ করেছিলো। যারজন্য একজন হুমায়ূন স্যার মানুষের পরতে পরতে অবস্থান নিয়ে আছেন।মানুষের স্বপ্ন চুরি করে নিজের বুক পকেটে রেখেছেন সযতনে, সেগুলো খুঁজতে এখনও স্বপ্নবাজ কিশোর- তরুণ সহ অনেকেই তাঁর কাছে ফিরে ফিরে যায় আবেগের প্রত্যাশা নিয়ে। কিন্তু কলম পাখিটা সাত আসমানে চলে গেছেন সকলকে শোকাহত করে। আর রেখে গেছেন জীবনরেখার আঁকিবুকি করা বহুপ্রজ অনেক বইয়ের মাধ্যমে ।

এক সময়ে “তুই রাজাকার,তুই রাজাকার” শব্দটি খুবই উচ্চারিত ছিল টেলিভিশন নাটকের একটি পাখির মাধ্যমে ।’৭৫ এ বঙ্গবন্ধু ,তাঁর পরিবার এবং স্বাধীনতার অনেক সূর্য সৈনিকদের হত্যার পর যখন ক্ষমতার পট পরিবর্তন এবং মুক্তিযুদ্ধের মূলধারার পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে রাজনীতি, শিল্প- সংস্কৃতি সহ প্রায় কিছু নিয়ন্ত্রিত হতো। সে সময়ে স্বাধীনতার মৃলচেতনা,মুক্তবুদ্ধির সংস্কৃতির কথা সহজে বলা যেতোনা।টেলিভিশন সহ কোন সরকারি – বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যমে তো নয়ই! সে অবরুদ্ধ সময়ে হুমায়ূন ভাই পাখির গলা দিয়ে “তুই রাজাকার তুই রাজাকার ” শব্দটি উচ্চারণের মাধ্যমে জাতীয় ভাবে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিলেন । যেটার আবেদন সবসময় আছে এবং থেকে যাবে । মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা,এক উচ্চারিত জ্বালা তাঁদের পরিবারের মধ্যে স্বত্বা হিসেবে সবসময় বিরাজ করতো। পিতা মুক্তিযুদ্ধে নির্মমভাবে শহীদ হওয়া থেকে মুক্তিযুদ্ধের সবকিছু প্রত্যক্ষ করেছেন তাঁরা। ।সেসব স্মৃতি কি কারোপক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব!

ঐসব ঘটনা দুঃসহ স্মৃতি তাঁকে সারা জীবন তাড়িয়ে বেড়িয়েছে।নাটকে,চলচ্চিত্রে সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সংহতি, সামাজিক যন্ত্রণা অসাম্য সরাসরি,রূপকল্প অতিপ্রাকৃত সহ বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ করেছেন ।তাঁর গল্প, উপন্যাস,নাটকে,সিনেমায় মানুষের হাসি-কান্না , কল্পনার ফানুস, যন্ত্রনা সমাজ বীক্ষণে সবসময় থাকতো বলে তাঁর প্রায়ই লেখা পাঠক প্রিয়তা পেয়েছিলো।কল্পিত মিসির আলী, হিমু ,রুপা সহ নানান চরিত্র এখনো রুপ ছড়ায় বিভিন্নভাবে অপ্রাকৃত মনন হিসেবে বিশেষভাবে তরুণদের মধ্যে ।

হুমায়ূন স্যারের সাথে স্মৃতি:

তাঁর সাথে আমার পরিচয় প্রয়াত আহমদ ছফার মাধ্যমে। ছফা ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্ক কক্সবাজার-চট্টগ্রাম থেকে । তিনি কক্সবাজার আসলে আমাদের বাসায় আসতেন। ঢাকাতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ‘৮০র দশকে আমি কাজ করার সময় শাহবাগের বিভিন্ন আড্ডায় যেতাম । সেখানে ছফা ভাইয়ের সাথে আমার বেশি দেখা,আড্ডা হতো।তিনিও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে যেতেন একই ভাবে তাঁর সাথে বিভিন্ন জায়গায় যেতাম।ছফা ভাই মানে এক যুক্তি যোদ্ধা, আনন্দ, আলোচনার নাম ।

একদিন শাহবাগের এক রেস্টুরেন্টের সামনে দিয়ে যাচ্ছি ।হঠাৎ চট্টগ্রামের ভাষায় ডাক এই বিশ্বজিত ইনদি আইও। ঢুকলাম রেস্টুরেন্টে, দেখি ছফা ভাই আর হুমায়ূন আহমেদ চুটিয়ে আড্ডা মারছে । আমার সাথে উনার পরিচয় হলো।আমার বাবার কথা জেনে তিনি খুব সন্মান জানালেন ।তিনি তখন বললেন মাষ্টারদা সূর্য সেনকে নিয়ে কাজ করা সহ ছবি বানানোর ইচ্ছার কথা ।আরো কিছুক্ষণ আড্ডার পর বললেন কক্সবাজার গেলে তোমাদের বাসায় আসবো। এরপর যার যার পথে চলে গেলাম।

প্রায় এক বছর পর একদিন হুমায়ূন স্যার দলবল সহ আমাদের বাসায় আসলেন সাথে আণবিক শক্তি কমিশনের ডাঃ করিম সহ। করিম সাহেব আমাদের পূর্ব পরিচিত ছিলেন । হুমায়ুন ভাই আমার মাকে প্রণাম করলেন এবং উঠোন কলতলা সহ পুরো ঘরবাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখলেন । দীর্ঘ সময় ছিলেন আমাদের বাসায়। খাওয়া দাওয়া সহ বিভিন্ন কথাবার্তা হলো।যাবার সময় জানালেন যখনই সুযোগ পাবেন নাড়ির টানের মতো তিনি এখানে চলে আসবেন।কারণ এই বাড়িটা ঐতিহাসিক, যেখানে অগ্নিযুগের বিপ্লবী পুরুষ প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র সেন এডভোকেট বাস করতেন ।মাকে আবারো জড়িয়ে ধরে প্রণাম করলেন আর সবার সাথে হাত মিলিয়ে চলে গেলেন।

এরপর উনার সাথে অনেক বার দেখা হয়েছে আমাদের বাসা সহ বিভিন্ন জায়গায় । এখনতো সবই স্মৃতি !
শ্রদ্ধেয় হুমায়ূন স্যার যেখানেই থাকবেন ভালো থাকবেন । তিনি তাঁর বহুমাত্রিক প্রতিভা এবং কর্মের মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন প্রজন্মান্তরে—– হয়তো চুপিচুপি এসে বলবেন ” যদি মন কাঁদে চলে এসো— চলে এসো এই বরষায়”———

লেখক: সাংবাদিক, গবেষক ও সম্পাদক কক্সবাজার ভয়েস ডট কম।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION