রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪২ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

তারাবির তেলাওয়াতে তাড়াহুড়া নয়

ধর্ম ডেস্ক:
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের অনেক গুরুত্ব, অনেক ফজিলত। তেলাওয়াতকারীর লাভ ও সওয়াবকে আল্লাহতায়ালা এমন ব্যবসার সঙ্গে তুলনা করেছেন, যে ব্যবসা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। আল্লাহর কালাম তেলাওয়াতের বিশেষ নিয়ম ও আদব রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘কোরআন তেলাওয়াত করো ধীরস্থিরভাবে, স্পষ্টরূপে।’ -সুরা মুযযাম্মিল : ৪

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুন্দর সুরের মাধ্যমে কোরআনকে (এর তেলাওয়াতকে) সৌন্দর্যমণ্ডিত করো।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৪৬৮

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, (কেয়ামতের দিন) কোরআনের তেলাওয়াতকারী বা হাফেজকে বলা হবে- তেলাওয়াত করতে থাকো এবং ওপরে উঠতে থাকো। ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করো, যেভাবে ধীরে ধীরে দুনিয়াতে তেলাওয়াত করতে। তোমার অবস্থান হবে সর্বশেষ আয়াতের স্থলে যা তুমি তেলাওয়াত করতে। -সুনানে আবু দাউদ : ১৪৬৪

এই ধীরস্থির বা তারতিলের সঙ্গে তেলাওয়াত কেমন হবে তা নবী কারিম (সা.) দেখিয়ে গেছেন, শিখিয়ে গেছেন। হজরত উম্মে সালামা (রা.)-কে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামাজ ও তেলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তার তেলাওয়াত ছিল- প্রতিটি হরফ পৃথক পৃথকভাবে উচ্চারিত।’ -জামে তিরমিজি : ২৯২৩

অর্থাৎ কোনো জড়তা, অস্পষ্টতা ও তাড়াহুড়া ছিল না। সাহাবায়ে কেরামের কোরআন তেলাওয়াতের বৈশিষ্ট্যও এমনই ছিল। ধীরস্থিরভাবে তেলাওয়াত করতেন তারা। নিজেরা করতেন, অন্যদেরও তাগিদ দিতেন। হজরত আলকামা (রহ.) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর সঙ্গে নামাজ পড়লাম দিনের শুরু থেকে ফজর পর্যন্ত। তিনি তেলাওয়াত করছিলেন তারতিলের সঙ্গে, ধীরস্থিরভাবে। -মুখতাছারু কিয়ামিল লাইল : ১৩১

ইসলামি স্কলাররা বলেন, কোরআন তেলাওয়াত তারতিলের সঙ্গে পড়া সুন্নত হওয়ার কয়েকটি কারণ-

১. তারতিলের সঙ্গে তেলাওয়াত করা হলে কোরআনে বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি মনোনিবেশ করা যায়।

২. আল্লাহতায়ালার কালামের প্রতি অধিক সম্মান প্রদর্শিত হয়।

৩. অন্তরে অধিক ক্রিয়া সৃষ্টি করে। -আল ইতকান ফি উলুমিল কোরআন : ১/১০৬

সুতরাং যারা অর্থ বুঝেন না তাদের জন্যও ধীরে কোরআন তেলাওয়াত করা মোস্তাহাব। কারণ কোরআনের অর্থ বুঝতে না পারলেও কোরআনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও অন্তরে ক্রিয়া সৃষ্টি হওয়া তো অবশ্যই সম্ভব।

উলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত যে, কোরআন তেলাওয়াত খুব দ্রুত করা ক্ষেত্রবিশেষে নাজায়েজ।

নামাজে আমরা কোরআন তেলাওয়াত করে থাকি নামাজের ফরজ বিধান হিসেবে। কোরআন তেলাওয়াতের যে আদবসমূহ ওপরে আলোচিত হলো- সেগুলো নামাজে তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রযোজ্য। নামাজে তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে ধীরস্থিরতা ও ভাবগাম্ভীর্য আরও বেশি মাত্রায় থাকতে হবে। তখন এগুলো শুধু তেলাওয়াতের বিষয় হিসেবেই থাকে না বরং এই ধীরস্থিরতা ও আত্মনিমগ্নতা নামাজেরও বিষয়।

নামাজের খুশু-খুজুর জন্য তেলাওয়াত তারতিলের সঙ্গে হওয়া খুব জরুরি। তাছাড়া এত দ্রুত তেলাওয়াতের কারণে মদ-গুন্নাসহ তাজবিদের অনেক কায়দা লঙ্ঘিত হয় এবং হরফের গুণের প্রতি যথাযথ লক্ষ রাখা যায় না, ফলে দ্রুত পড়তে গিয়ে সোয়াদ-এর জায়গায় সিন হয়ে যাওয়া, শিন-এর জায়গায় সিন হয়ে যাওয়া, তোয়ার জায়গায় তা হয়ে যাওয়া কিংবা যেখানে টান নেই সেখানে টান হয়ে যাওয়া বা কোথাও টান আছে সেখানে টান না হওয়া (দ্রুত পড়তে গেলে এই টানের ভুল সব চেয়ে বেশি হয়) খুব সহজেই ঘটে যেতে পারে।

ফরজ নামাজ ও অন্যান্য নামাজে আমরা কিছুটা ধীরস্থির তেলাওয়াত করে থাকি। কিন্তু রমজানে তারাবিতে এত দ্রুত পড়ে থাকি, এতই দ্রুত যে তারতিলের ন্যূনতম মাত্রাও সেখানে উপস্থিত থাকে না। মদ (টান), গুন্নাহ ও শব্দের উচ্চারণ বিঘিœত হয়ে তেলাওয়াত মাকরুহর পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে; বরং অর্থের পরিবর্তন হয়ে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়, আমাদের অজান্তেই। আর খুশু-খুজু, ধ্যানমগ্নতা তো নষ্ট হচ্ছেই। আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আল্লাহর সুমহান কালাম পড়ছি বা শুনছি এমন ভাব-তন্ময়তা তো দূরের কথা কখন বিশ রাকাত তারাবি শেষ হবে এই চিন্তাই যেন সবাইকে তাড়িত করতে থাকে।

নামাজ বা তেলাওয়াতের যে আদবটুকু ফরজ নামাজে রক্ষা হয় তারাবিতে সেটুকু পাওয়াও দুষ্কর। দ্রুত তেলাওয়াত, দ্রুত রুকু, সেজদা, দ্রুত তাসবিহ। অনেকের মাঝে ধারণা জন্মে গেছে, তারাবি মানেই তাড়াতাড়ি পড়া। যার কারণে দেখা যায় যে, যারা সুরা তারাবি পড়েন তারাও ভীষণ দ্রুত পড়েন।

অনেকেই মুসল্লিদের কষ্টের কথা বলে থাকেন। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন, ধীরস্থিরভাবে বিশ রাকাত নামাজ পড়ার কারণে যতটুকু কষ্ট-ক্লান্তি আমাদের হয় তার চেয়ে বেশি হয় কিয়াম, রুকু, সেজদা, তাসবিহ দ্রুত করার কারণে। দুই রাকাত শেষে সালাম ফিরিয়েই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যাওয়া। চার রাকাত পড়ে খুব সামান্য একটু সময় বসে আবার শুরু করা। অথচ সালাফে সালেহিনের আমল কেমন ছিল তা আমরা আগেই দেখে এসেছি।

মক্কা-মদিনার তারাবির খোঁজ নিয়ে দেখুন, সেখানে কত ধীরস্থির তেলাওয়াত, দীর্ঘ বিশ্রাম, লম্বা সময় নিয়ে তারাবি। সেখানে কত দেশের, কত ধরনের, কত বয়সের মানুষ রয়েছেন! অথচ আমাদের অবস্থা হলো- বিরতিহীন ওঠাবসার মাধ্যমে বিশ রাকাত শেষ করার এক প্রতিযেগিতা। অথচ হাদিসে কাকের ঠোকরের মতো রুকু, সেজদা করা থেকে কত শক্তভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

তারাবির নামাজ যেমন গুরুত্বপূর্ণ আমল তেমনই ফজিলতের। হাদিস ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে, সওয়াবের আশায় রমজানে কিয়াম করে (তারাবি, তাহাজ্জুদ সবই এর অন্তর্ভুক্ত) আল্লাহতায়ালা তার পেছনের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ -সহিহ বোখারি : ২০০৯

এই যে এত এত সওয়াবের কথা হাদিসে উল্লেখ করা হলো- এগুলো পাওয়ার জন্য কি আমল সহিহ ও নির্ভুল হওয়া শর্ত নয়? কিংবা আল্লাহ আমাকে এত সওয়াব দান করবেন, এর জন্য একটু ধৈর্য, একটু ধীরস্থিরতা, অন্তত সর্বনিম্ন আদবটুকু রক্ষা করাও কি আমার কর্তব্য নয়?

সুতরাং আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, নামাজের কিয়াম, রুকু, সেজদা ও তেলাওয়াতে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা ও নির্ভুল পড়া।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION