রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

রমজানের শেষভাগের আমল

ধর্ম ডেস্ক:
রহমত ও মাগফিরাতের দিনগুলো শেষ করে আমরা এখন অতিবাহিত করছি নাজাতের দিনসমূহ। রমজানের প্রথম দুই ভাগের তুলনায় তৃতীয় ভাগের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বেশি। এই অংশে আছে ইতিকাফ, লাইলাতুল কদর ও সদকাতুল ফিতরের মতো মূল্যবান ইবাদত। রমজানের পবিত্র আলো নিজের জীবনে ধারণ ও নিজেকে পরিশুদ্ধ করে গড়ে তুলতে শেষ ভাগে বিশেষ কিছু আমলে জোর দেওয়া প্রয়োজন। সেগুলো হলো-

ইবাদতে মশগুল : রমজানে প্রতিটি আমলের বিনিময়ে ৭০ গুণ সওয়াব বেশি পাওয়া যায়। এত বিপুল পরিমাণ সওয়াব অন্য মাসে পাওয়া যায় না। রমজান ফুরিয়ে গেলে এই সুযোগ আর পাওয়া যাবে না। সুতরাং সময় থাকতে সময়ের মর্যাদা দিতে হবে। সময় কাজে লাগাতে হবে। নবীজি (সা.) রমজান মাসে বেশি বেশি আমল করতেন। বিশেষ করে রমজানের শেষ ভাগে এত বেশি আমল করতেন যে, অন্য কোনো সময়ে এত আমল করতেন না। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) রমজানের শেষ ভাগে এত বেশি ইবাদত করতেন, যা বছরের অন্য সময়ে করতেন না।’ -সহিহ মুসলিম : ১১৭৫

লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান : মুমিন জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত হলো- কদরের রাত। এই রাতে আল্লাহতায়ালা প্রথম আসমানে নেমে আসেন। বান্দাকে আহ্বান করেন। কাছে ডাকেন। আল্লাহর ডাকা সাড়া দিলে বান্দার গোনাহ মাফ হয়। বান্দার জীবনে রহমত, বরকত ও মাগফিরাত আসে। বান্দার ইবাদতের জোয়ারে ভেসে যায় গোনাহের পয়মাল। সুতরাং এই রাতকে অনুসন্ধান করতে হবে। অন্তর দিয়ে খুঁজতে হবে। আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা করিয়ে নিতে হবে জীবনের কলুষতা ও গোনাহের বোঝা। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কদর রাতের সন্ধান পেতে চায় সে যেন রমজানের শেষ ভাগে তা খুঁজে নেয়।’ -সহিহ বোখারি : ১১৫৮

অন্য হাদিসে আছে, ‘তোমরা রমজানের শেষ ভাগে বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের তালাশ করো।’ -সহিহ বোখারি : ২০১৭

রাত জেগে ইবাদত : রমজানের শেষ ভাগে নবীজি (সা.) ইবাদতে বেশি মনোযোগী হতেন। রাত জেগে আমল করতেন। নামাজ পড়তেন। কোরআন তেলাওয়াত করতেন। জিকির করতেন। পরিবারদের ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করতেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন রমজানের শেষ সময় আসত, রাসুল (সা.) ইবাদতের জোর প্রস্তুতি নিতেন। নিজে রাত্রি জাগরণ করতেন। পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে তুলতেন।’ -সহিহ বোখারি : ২০২৪

হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘রমজানের শেষ ১০ দিনে রাসুল (সা.) (ইবাদত-বন্দেগি করার নিমিত্তে) তার পরিবারদের (রাতে) জাগিয়ে দিতেন।’ -জামে তিরমিজি : ৭৯৫

আল্লাহকে পেতে ইতিকাফ : আল্লাহকে যে পেতে চায়, তার জন্য ইতিকাফ আবশ্যক। ইতিকাফে ব্যক্তির দুনিয়াকেন্দ্রিক ঝামেলার অবসান হয়। আমল-ইবাদতে কোনো বাধা থাকে না। আল্লাহর পছন্দের ঘরে তাকে খুঁজে পেতে সুবিধা হয়। আল্লাহও সাড়া দেন বান্দার একান্ত নির্জনতায়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ ভাগে ইতিকাফ করতেন। প্রভুর ইবাদতে একান্ত সময় যাপন করতেন। তিনি আমৃত্যু শেষ ভাগে ইতিকাফ করে গেছেন। হজরত আয়েশা (রা.)-এর বর্ণনায় এসেছে, নবী কারিম (সা.) ইন্তেকাল অবধি প্রতি বছরই ইতিকাফ থেকেছেন। তার ইন্তেকালের পর তার সহধর্মিণীরাও ইতিকাফ করতেন। -সহিহ বোখারি : ২০২৬

সদকাতুল ফিতর আদায় : রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো- সদকাতুল ফিতর। সদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে রোজার বিচ্যুতির ক্ষমা হয়। গরিব মানুষের খাবারের সুন্দর ব্যবস্থা হয়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘নবীজি সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ করেছেন- যাতে করে এটা রোজাদারের রোজার বিচ্যুতি তথা অনর্থক কথা-কাজ ও অশালীন আচরণের ক্ষতিপূরণ হয় এবং অসহায় মানুষের খাবারের সুন্দর ব্যবস্থা হয়।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৬০৯

বেশি বেশি সদকা : রমজানের পর মুসলমানদের জন্য আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে ঈদ। এক মাস লাগাতার রোজার পর বান্দার মন আনন্দে মেতে ওঠে এই দিনে। ধনীদের উচিত, ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো। তাদের সহযোগিতা করা। হজরত ইবনে আব্বাস বলেন, ‘নবী কারিম (সা.) ধন-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সবার চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমজানে হজরত জিবরাইল (আ.) যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি আরও অধিক দান করতেন। রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী কারিম (সা.) তাকে কোরআন শোনাতেন। হজরত জিবরাইল (আ.) যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি রহমতসহ প্রেরিত বায়ুর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন।’ -সহিহ বোখারি : ১৯০২

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION