শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কল্পনা করুন, ইসরায়েলের দখলদারিত্ব শেষ!

ক্যারোলিনা ল্যান্ডসম্যান:
আমেরিকান সাহিত্য সমালোচক ফ্রেডরিক জেমসনের একটা উদ্ধৃতি দিয়ে শুরু করি। তিনি লিখেছেন, ‘কেউ একবার বলেছিল, পুঁজিবাদের সমাপ্তি কল্পনা করার চেয়ে বিশ্বের শেষ কল্পনা করা সহজ।’ একইভাবে বলা যায়, দখলদারিত্ব নেই কল্পনা করার চেয়ে ইসরায়েল রাষ্ট্রই নেই সেটা কল্পনা করা সহজ।

প্রশ্ন হলো, দখলদারিত্বের বিরোধিতা করে প্রকারান্তরে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় কি না, বা সেটাই চাই কি না। হ্যাঁ, চাই তো সেটাই। তবু দখলের প্রতিবাদ হোক। নয়তো কল্যাণকর কোনো পরিবর্তন আসবে না, এবং কোনো একদিন হঠাৎ পরিস্থিতি সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে, এমন না। যতক্ষণ না প্রবল শক্তিশালী কণ্ঠ রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলবে, ‘যথেষ্ট হয়েছে, এবার দখলের পালা শেষ করো।’

দখলদারিত্বের কথা না বলার একটা কারণ অবশ্য আছে। প্রধান শান্তি আন্দোলন যেখান থেকে হওয়ার কথা, মানে নেসেটে (ইসরায়েলের আইনসভা) বা এর বাইরে যেখানেই হোক ইহুদি ও ফিলিস্তিনি সীমান্ত প্রাচীরে গিয়েই ধসে পড়ে। ইহুদিদের সমস্যা হলো বারুচ গোল্ডস্টেইন কিংবা ইগাল আমিরের মতো কট্টরপন্থি সমর্থক আর ফিলিস্তিনের সমস্যা হলো চরমপন্থিদের সন্ত্রাসী হামলা।

বাইবেলের ‘বুক অব কিংস’-এ একটা অভিব্যক্তি আছে ‘আপনি কি খুন করেছেন এবং উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন?’তেমন আর কি! বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নিজে শান্তিপ্রক্রিয়া হত্যা করেছেন এবং উত্তরাধিকারসূত্রে আঞ্চলিক সমঝোতাকে ভয় পেয়েছেন, যে-ভয় বামদের ওপর চড়াও হয়েছে।

শুধু তাই নায়, প্রচণ্ড রাজনৈতিক ধূর্ততায় নেতানিয়াহু একাই ইসরায়েলের জাতীয় সংঘাতকে জাতীয় এজেন্ডা থেকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। ধীরে ধীরে তিনি ফিলিস্তিনি কর্র্তৃপক্ষ এবং ইসরায়েলি বামদের দুর্বল করেছেন, ফলে হামাস এবং উগ্র ইহুদি ডানপন্থিরা ক্ষমতাবান হয়েছে। রাজনৈতিক সংঘাত না থাকার সুযোগে জায়গা করে নিয়েছে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, ইসরায়েল জড়িয়ে পড়েছে শ্রেণি-সংঘাতে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব এখন আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, সেই জায়গা দখল করেছে আশকেনাজি-মিজরাহি দ্বন্দ্ব।

‘দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই’ আজকাল ইসরায়েলের রাজনীতিতে ‘সেকেলে’ টার্মে পরিণত হয়েছে; শিগগির যে হালফ্যাশনে ফিরবে, তেমন সম্ভাবনা চোখে পড়ছে নাযদি না কোনো অভিজাত অ্যান্টিক সংগ্রাহক কুড়িয়ে আবার তা রাজনীতির মাঠে নিয়ে আসেন। অবশ্য ভিনটেজ শপেও এখন ‘দুই জাতির দুই রাষ্ট্র’ সেøাগানের দাম তেমন নেই। সত্যি বলতে কি, ‘শান্তি’ শব্দের চাহিদাই নেই এখন।

তাহলে কীভাবে আশা করি যে, ইসরায়েলের মেইনস্ট্রিম আবার রাজনীতির অগ্রদূত হিসেবে আবির্ভূত হবে, পুরনো চিন্তাধারা ফিরিয়ে আনবে এবং দখলদারিত্বের বিতর্ক পুনরায় জাগিয়ে তোলার সাহস করবে? যদিও ৫৬ বছরের জবরদখল শেষে আজজেমসনের সেই উক্তি মতে দখল-সীমান্ত ছাড়া ইসরায়েল অস্তিত্ব কি চিন্তাও করা যায়? যায় না।

দেশের ভেতরে বিক্ষোভ চলছে। সফলও হচ্ছে। কোনো জাতি যখন সত্যিকার অর্থে কিছু চায়, তা পায়। কিন্তু আমাদের ইসরায়েলি জাতির এখনকার সত্যিকারের দাবিটা কী? এটা কি আমরা জানি? জাতি যে বিরক্ত এবং ক্লান্ত দখলের প্রশ্ন এলে তো সে-কথা গিলে ফেলা হয়, প্রকাশ করা হয় না। প্রতিবাদ হয় শুধু সেই দুই বিপরীত মেরু সামনে এলে গণতন্ত্র থাকবে নাকি স্বৈরাচার। যদি এমন হয় যে, পরিস্থিতি ইসরায়েল রাষ্ট্র ধ্বংস হওয়ার মতো নাজুক হয়েছে, আমাদের প্রতিবাদ তখন রাষ্ট্রকে সতর্ক করে মাত্র। কেন? কারণ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের চেয়ে ধ্বংসের আশঙ্কায় জেগে ওঠা সহজ।

পরবর্তী পদক্ষেপে যাওয়ার আগে সবার প্রথম বুঝতে হবে যে, আমাদের যাবতীয় সমস্যার উৎপাদন এই দখলদারিত্ব থেকে। এবং একটিরও সমাধান হবে না ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিরোধের সমাধান যতদিন না হবে। বিরোধ যদি না মেটে নাগরিক ও রাষ্ট্রের মধ্যে এবং ইসরায়েলের বিভিন্ন ‘উপজাতি’র মধ্যে নতুন সামাজিক চুক্তি অধরাই থেকে যাবে। বিরোধের নিষ্পত্তি ছাড়া ইসরায়েলের আরব নাগরিকদের বৈষম্যেরও সমাধান হবে না; জাতিগত বিভাজন বা বর্ণবাদ সংক্রমণেরও নিরাময় দেখা দেবে না। জাতীয় ‘ক্ষত’ খোলা রাখলে কোনো ঘা-ই শুকাবে না। এবং এটা স্পষ্ট যে, ততদিন আমাদের পক্ষে কোনো সংবিধান প্রণয়ন করা সম্ভব হবে না। আচ্ছা, কেউ কি এমন একটা সীমান্তহীন দেশের কথা ভাবতে পারে, যার সংবিধান আছে? ইসরায়েল-আরব শান্তি চুক্তি না হলে ইসরায়েলের ভেতরেও কি শান্তি আসবে? না, আসবে না।

যত কঠিনই হোক, ইসরায়েলের মূলধারাকে দাবি অবশ্যই তুলতে হবে, যাতে রাষ্ট্র এই বিরোধের সমাধান করে। আবারও রাজনৈতিক বিরোধের গোড়ায় আনতে হবে ইসরায়েলের প্রধান সমস্যা ফিলিস্তিনের সীমানা দখল, অর্থাৎ দখলদারিত্ব। বিরোধকে ঘিরেই রাজনৈতিক বিভাজনের পুনর্গঠন দরকার। বিশ্বদৃষ্টিতে সে ডান হোক বা বাম প্রত্যেকের অবশ্যই ইসরায়েলের নিজ উদ্যোগে সংঘাত সমাধানের দাবি জানাতে হবে। অন্য কথায়, তাদের উচিত, ইসরায়েল রাষ্ট্রের সমাপ্তি কল্পনা না করে দখলদারিত্ব অবসানের কল্পনা শুরু করা।

লেখক : ইসরায়েলের হারেৎজ পত্রিকার এডিটরিয়াল বোর্ডের সদস্য। ইসরায়েলের হারেৎজ পত্রিকা থেকে অনুবাদ মনযূরুল হক

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION