বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ০১:২৭ পূর্বাহ্ন
লাইফস্টাইল ডেস্ক:
তীব্র দাবদাহে অস্থির জনজীবন। গত কয়েকদিন ধরে প্রায় প্রতিদিনই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের তাপমাত্রা। এবার দেশের সব রেকর্ড ভেঙে ৪৩-৪৫ ডিগ্রি সেলিসিয়াসে তাপমাত্রা পৌঁছাতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রচণ্ড এই গরমে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এই ধরনের তাপমাত্রায় দিনের পর দিন বাইরে থাকলে বা কাজ করলে হিট এক্সহশন বা হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অস্টিনের মেডিসিন পালমোনারি ক্রিটিকাল কেয়ার বিভাগের অধ্যাপক ডা. রুমি আহমেদ খান।
তিনি বলেন, “হিট স্ট্রোক একটা মেডিকেল ইমার্জেন্সি এবং অতি দ্রুত স্পেসিয়ালাইজড মেডিকেল ফ্যাসিলিটিতে না নিয়ে চিকিৎসা করালে মৃত্যুর সম্ভাবনা খুব বেশি।”
ডা. রুমি আরও বলেন, “এই গরমে বেশিক্ষণ বাইরে থাকার কারণে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। আমাদের শরীর খুব তাপমাত্রা সেনসিটিভ। তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে আমাদের শরীর বিভিন্নভাবে তাপমাত্রা কমাতে কাজ শুরু করে দেয়। এর প্রধানতম পদ্ধতি হচ্ছে ঘাম তৈরি। যখন আমাদের বডির সারফেস থেকে ঘাম ইভাপোরেট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনে। তবে এই ঘামের মাধ্যমে তাপমাত্রা কমানোর একটা লিমিটেশন আছে। হিউমিডিটি যদি ৭৫% এর বেশি হয় তাহলে এই পদ্ধতি খুব একটা কাজ করে না “
তবে ঢাকার হিউমিডিটি শনিবার ৭৮%-এ পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসকের মতে অতিরিক্ত গরমে কারণে যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে, সেগুলো হলো-
তীব্র গরমে অসুস্থতার প্রথম ধাপে যা হয়, তা হচ্ছে “হিট ক্রাম্প”। অতিরিক্ত ঘামের কারণে লবন ও পানির অভাব হয় এবং এর প্রভাবে মাসল (বিশেষ করে পায়ের) মাসল ক্র্যাম্প (কামড়ানো) শুরু করে।
এরপর হচ্ছে এক্সহশন। হিট এক্সহশন এক দফায় হিট এক্সপোজার এর কারণে না হয়ে অনেক দিনের কিউমিলিভ এফেক্টেও হতে পারে। যেমন, আপনি পর পর তিন চারদিন দু্ই-তিন ঘণ্টা করে বাইরে গরমে থাকলেন। পঞ্চম দিনে গিয়ে আপনার হিট এক্সহশন এর উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বয়স্ক, অতিরিক্ত কম ওজন সম্পন্ন ব্যক্তি, শিশু, গর্ভবতী ও উচ্চরক্তচাপে ভোগাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি।
হিট এক্সহশন এর লক্ষণ হচ্ছে, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, দুর্বলতা, মাথা ধরা, মাথা ব্যাথা, বমিবমি ভাব আর ফেইন্ট ভাব হওয়া। থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মেপে দেখতে পারেন হিট এক্সহশন নিশ্চিত হওয়ার জন্য। হিট এক্সহশন এর একপর্যায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস ও হার্ট রেট দ্রুত হতে শুরু করবে।
হিট এক্সহশনের চিকিৎসা
হিট এক্সহশনে আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রথমে ছায়ায় নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. রুমি আহমেদ খান। এরপর রোগীর রিহাইড্রেশন শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে ওরস্যালাইন সবচেয়ে ভালো। শুধু ঠান্ডা পানি হলেও চলবে প্রথমে।
আশেপাশে পুকুর থাকলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে গলা পর্যন্ত পুকুরের পানিতে নামিয়ে দিন। পুকুর না থাকলে বাথটাবে শুইয়ে দিন এবং পানির মধ্যে কিছু বরফ ঢেলে দিন। তাও না থাকলে ঠান্ডা পানিতে গোসল করিয়ে দিন তারপর টেবিল ফ্যান দিয়ে শরীর শুকিয়ে দিন। টেম্পারেচার না নামলে আবার ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে দিন এবং টেবিল ফ্যানের সর্বোচ্চ গতি দিয়ে শরীর শুকিয়ে দিন।
মনে রাখতে হবে, ঠান্ডা পানির রিহাইড্রেশন খুব জরুরি। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, শুধু পানি অতিরিক্ত খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। সেজন্য ওরস্যালাইন উপকারী।
যদি হিট এক্সহশন এর ঠিকমতো চিকিৎসা করা না যায়, অথবা ডায়াগনোসিস করা না যায় তাহলে হিট স্ট্রোক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি বলে জানান ডা. রুমি আহমেদ খান।
তিনি বলেন, যদি দেখেন স্কিন শুকনা লাল হয়ে গেছে; ঘাম হচ্ছে না, পালস হাই হয়ে গেছে, রোগী উল্টা-পাল্টা কথা বলছে অথবা কোনো কথা বলছে না, কিংবা অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে হিট স্ট্রোক হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, “এর পরের ধাপে একের পর এক অর্গান ফেইল করা শুরু করবে। প্রথমে ব্রেইন এর নিউরোন গুলো ড্যামেজ হবে, এরপর আমাদের লিভার ও রক্তনালীর সেল গুলোর ড্যামেজ শুরু হবে। ইভেঞ্চুয়ালি সব অর্গানই ফেইল করবে। রোগী এই অবস্থায় পৌঁছে গেলে উপরের স্টেপগুলো তো নিতে হবেই, পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব আইসিইউ আছে এমন হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।”
তবে রোগীকে ঢাকা পাঠানোর নামে আরও দশ ঘণ্টা গরমের মধ্যে ট্রাফিক জ্যামে ফেলে রাখার কোনো মানে হয় না উল্লেখ করে ডা. রুমি আহমেদ খান বলেন, “আপনার স্থানীয় ওষুধের দোকানে বলুন কিছু স্যালাইনের ব্যাগ ফ্রিজে রেখে দিতে (ডিপ ফ্রিজ নয়)। রোগীকে ওই ঠাণ্ডা স্যালাইন ইন্টারভিনাস দিতে পারলেও অনেক কাজ হবে। তবে মূল লক্ষ্যটা হবে কেউই যাতে হিট এক্সহশন পর্যায়ে না যায়। ঘরের বাইরে যেতে হলে সঙ্গে বড় ঠাণ্ডা পানির ফ্লাস্ক বা বোতল রাখুন এবং কিছু পরপর পানি খেয়ে মুখ ভিজিয়ে রাখুন।”
যদিও এই সময়ে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। তবু শিশুরা যেন বাইলে গিয়ে খেলাধুলা না করে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে বলেন এই চিকিৎসক।
তিনি আরও বলেন, “এই গরমে যত হালকা পাতলা খোলামেলা পোশাক পরা যায় তত ভালো। তবে আমাদের ধর্মীয় রক্ষণশীল সমাজে নারীদের জন্য এই অ্যাডভাইসটা তো প্র্যাকটিকাল না। ওনাদের এই সময়গুলোতে ঘরের বাইরে বের না হওয়াটাই নিরাপদ। আরেকটা কথা, নারীরা কিন্তু ঘরের ভেতরেই রান্নাঘরে একটা রিস্কি এনভায়রনমেন্ট আছেন। গরমের দিন রান্নাঘরের তাপমাত্রা অন্যান্য রুমের চেয়ে অনেক বেশি। এই ব্যাপারটাও অনুগ্রহ করে মাথায় রাখবেন।”
ভয়েস/আআ