রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন
শায়খ ড. হুসাইন বিন আবদুল আজীজ আলে শায়খ:
সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের মধ্যে আরবি জিলহজ মাসের প্রথম দশক আগমন করতে যাচ্ছে। আল্লাহতায়ালা আমাদের দিনগুলোকে বরকতময় করুন এবং সৎকর্মে পরিপূর্ণ করুন। নিশ্চয় এ মৌসুমটি কল্যাণকর বিষয়ে প্রতিযোগিতা, সৎকাজের পাথেয় সংগ্রহ এবং ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলের প্রভুর সান্নিধ্য অর্জন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌসুম। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘শপথ ফজরের, শপথ দশ রাতের।’ সুরা আল ফাজর : ১-২
বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে, এ রাতগুলো হলো জিলহজ মাসের প্রথম দশক। কাজেই আল্লাহর বান্দারা! আপনারা এ সময় নানান সৎকাজ ও ভালো আমলের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন। এ মৌসুমের প্রতিটি মুহূর্তকে এমন কাজ দ্বারা মূল্যায়ন করুন, যা গোনাহগুলো মোচন করে ও বহু গুণ সওয়াব বৃদ্ধি করে। কেননা এগুলোই লাভজনক ব্যবসা। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এমন কোনো দিন নেই, যে দিনগুলোর সৎকাজ আল্লাহতায়ালার কাছে জিলহজ মাসের এই দশ দিনের সৎকাজ অপেক্ষা বেশি প্রিয়। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর পথে জিহাদ করাও কি নয়? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও তার চেয়ে বেশি প্রিয় নয়। তবে জানমাল নিয়ে যদি কোনো লোক আল্লাহর পথে জিহাদে বের হয় এবং এ দুটির কোনোটিই নিয়ে সে আর ফিরে না আসতে পারে তার কথা আলাদা।’ সহিহ বোখারি
আর সুনানে বায়হাকি ও দারেমির বর্ণনায় এসেছে, ‘আজহার অর্থাৎ জিলহজের দশ দিনে যে নেক আমল করা হয়, তার চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক পবিত্র ও অধিক সওয়াবের আর কোনো নেক আমল নেই।’ হাদিসটিকে বিশেষজ্ঞরা হাসান বলেছেন। ইমাম বাযযার তার মুসনাদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন হলো এ দশ দিন।’ অর্থাৎ জিলহজের প্রথম দশ দিন। ইমাম মুনজিরিসহ অনেকেই হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।
বিভিন্ন দলিল দ্বারা প্রমাণিত, এ মৌসুমে রোজাপালন করা মোস্তাহাব; এটা অধিকাংশ পূর্ববর্তী আলেমদের আমল ছিল। হাজি ও অন্যান্য সবার জন্য এ সময়ের উত্তম আমলের অন্তর্ভুক্ত হলো বেশি বেশি তাহলিল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, তাকবির আল্লাহু আকবার, তাহমিদ আলহামদুলিল্লাহ ইত্যাদি জিকির করা।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘এ দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। কাজেই তোমরা এ সময় বেশি বেশি তাহলিল, তাকবির ও তাহমিদ পাঠ করো।’ মুজাম তাবরানি
সহিহ বোখারিতে বর্ণিত হয়েছে, হজরত ইবনে উমর (রা.) ও হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বাজারে গিয়ে জিলহজের প্রথম দশ দিন উচ্চস্বরে তাকবির দিতেন, আর মানুষরাও তাদের তাকবির শুনে তাকবির ধ্বনি দিত। আর এ তাকবির ধ্বনি এই দশ দিনের প্রতিটি মুহূর্তেই উচ্চারিত হবে। আর বিশেষ তাকবির যা ফরজ ও নফল নামাজের পরে পাঠ করতে হয়, তার সময়সীমা হলো আরাফাতের দিনের ফজর থেকে আইয়ামে তাশরিকের শেষ দিন আসর পর্যন্ত। এটা যারা হাজি নন তাদের জন্য। আর হাজিরা এ বিশেষ তাকবির পাঠ করবেন কোরবানির দিন জোহরের নামাজের পর থেকে। সুতরাং আপনারা এ দিনগুলোতে সব ধরনের সৎ আমলের সাধনায় উদ্যোগ গ্রহণ করুন। বিনিময়ে বিশাল কল্যাণ ও সওয়াব অর্জন করবেন।
মনে রাখতে হবে, ইসলামি শরিয়ত যেসব বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে তার অন্যতম হলো কোরবানি করা। কাজেই সক্ষম ব্যক্তি যেন নিজের এবং তার পরিবারের জীবিত ও মৃতদের পক্ষ থেকে কোরবানি করে। এমতাবস্থায় যে ব্যক্তি এ বিষয়টি পালনার্থে কোরবানি করার ইচ্ছা পোষণ করবেন, তখন তার জন্য এ দশক শুরু হওয়ার পর থেকে কোরবানি করা পর্যন্ত স্বীয় চুল, নখ ও দেহের চামড়া কাটা নিষেধ, যা নবী করিম (সা.) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
বস্তুত সৎকাজের কোনো সীমা নেই। সুতরাং যেসব ইবাদত শরিয়তসম্মত হওয়ার ব্যাপারে দলিল রয়েছে তাই এমন আমল যেগুলোর সুযোগে সদ্ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। যেমনÑ কোরআন তিলাওয়াত, আল্লাহর বান্দাদের প্রতি বেশি বেশি ইহসান (দয়া) করা, দান-সদকা করা, পরোপকার করা ইত্যাদি। কাজেই আপনারা সৎকাজের সুযোগকে মূল্যায়ন করুন এবং সৎকর্মের উদ্যোগ গ্রহণ করুন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হও, যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিনের প্রশস্ততার মতো।’ সুরা আল হাদিদ : ২১
নফল হজ আদায়ের যে রীতি বা প্রচলন রয়েছে, তাতে উম্মতের আলেমদের সহমত রয়েছে। এটা মুসলমানদের দ্বীন-দুনিয়ার কল্যাণ ও স্বার্থ সুরক্ষার অন্তর্গত একটি বিষয়। মহান আল্লাহ নফল হজের জন্য বিশাল সওয়াব নির্ধারিত রেখেছেন। প্রকৃত মুমিন কোনো নফল বা মোস্তাহাব ইবাদত পালন করতে গিয়ে পাপে জড়িত হতে পারে না। এমন ব্যক্তির জন্য আল্লাহর এই বাণীর অধীন হুমকি রয়েছে। ‘আর কারও কাছে সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সেদিকেই তাকে আমি ফিরিয়ে দেব এবং তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করাব, আর তা কতই না মন্দ আবাস!’ Ñসুরা আন নিসা : ১১৫
পূর্ববর্তী আলেমদের কেউ কেউ নফল হজের ওপর দান-সদকাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। বস্তুত ইসলামের চাওয়া হলো আপনারা কল্যাণের কাজে প্রতিযোগিতা করুন, সৎকর্ম পালনে অগ্রণী হোন এবং জান্নাতের পথে ছুটে চলুন।
হে আল্লাহ! জীবিত ও মৃত মুসলিমদের আপনি ক্ষমা করুন। আমাদের আপনার সন্তোষজনক আমল করার তাওফিক দান করুন, আপনার ক্রোধ ও নিষিদ্ধ বিষয় থেকে দূরে রাখুন। মুসলিমরা পৃথিবীর যে যেখানে রয়েছে, তাদের আপনি হেফাজত করুন, মুসলিমদের দুশ্চিন্তা দূর করুন, দুর্দশাগ্রস্তদের দুর্দশা দূর করুন এবং তাদের আপনার বিশেষ তত্ত্বাবধানে হেফাজত করুন। আমিন।
১৬ জুন শুক্রবার, মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবা।
অনুবাদ মুহাম্মদ আতিকুর রহমান
ভয়েস/আআ