শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৯ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কবুল হজের আমল

মুফতি এনায়েতুল্লাহ:
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশে^র ১৬৪টি দেশ থেকে পনেরো লাখের বেশি হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এবার বিদেশি হাজির সংখ্যা বিশ লাখ অতিক্রম করবে।

বৈশি্বক মহামারী করোনার পর এবারই প্রথম বৃহৎ আয়োজনে হজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। করোনার আগে সাধারণত ২০-১৫ লাখ লোক হজপালন করতেন। ২০২০ সালে কঠোর বিধিনিষেধ মেনে শুধুমাত্র সৌদি আরবের ১ হাজার এবং ২০২১ সালে প্রায় ৬০ হাজার লোক হজপালন করেন। ২০২২ সালে বিভিন্ন দেশের হজযাত্রীসহ প্রায় ১০ লাখ হজপালন করেন। বাংলাদেশ থেকে এ বছর হজে যাবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। তন্মধ্যে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন।

হজ একটি ফরজ ইবাদত। আল্লাহতায়ালা মাবরুর হজের জন্য মহা পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন। হজরত রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হজে মাবরুরের একমাত্র প্রতিদান জান্নাত।’ -সহিহ বোখারি : ১৭৭৩

যে হজে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি এবং ভালো কাজ করা হয়, তাকে হজে মাবরুর তথা গ্রহণযোগ্য হজ বলে। ইসলামি স্কলারদের মতে, যে কারণে হজের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে, সেই রহস্যের নিগূঢ় তত্ত্ব ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য উপলব্ধি হজ মাবরুর তথা কবুল হওয়ায় যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ বান্দা যখন হজের বাস্তবতা ও লক্ষ্য উদ্দেশ্যের প্রতি গুরুত্ব রেখে হজের বিধানগুলো আদায় করবে এবং হজের মাধ্যমে তার আকিদা-বিশ্বাস ও জীবন চলার ধারাকে সঠিক করে নেবে তখন তার হজ অধিকতর গৃহীত হবে এবং মহা পুরস্কারে পুরস্কৃত হবে। আলেমরা বলেন, উল্লিখিত স্তরে শুধুমাত্র সেই পৌঁছতে পারবে- যে নিজের আত্মাকে প্রস্তুত করবে ও হজের হাকিকত, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সম্পর্কে পর্যালোচনা ও গবেষণা করবে। আর যে এমন করবে না, তার সব আমল, শ্রম, চেষ্টা ও সাধনা বৃথা যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

ইসলামের বিধানে বল হয়েছে, হজের পুণ্য লাভ করা সম্ভব নয় গোনাহ, পাপাচার, অন্যায় থেকে বিরত থাকা ও দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়া। তাছাড়া গোনাহ তো সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। তার পরও আল্লাহতায়ালা হাজিকে বিশেষভাবে গোনাহ পরিহারের আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হজের সুবিদিত কয়েকটি মাস আছে এসব মাসে যে হজের পূর্ণ নিয়ত করবে, তার পক্ষে স্ত্রীর সঙ্গে নিরাবরণ হওয়া, অশোভন কোনো কাজ করা, ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া হজের সময় জায়েজ নয়।’ -সুরা আল বাকারা : ১৯৭

এ নিষেধাজ্ঞা স্থান ও কালের উঁচু মর্যাদার কারণে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং যে এ ভূমিতে (মসজিদে হারামে) অন্যায়ভাবে কোনো ধর্মদ্রোহী কাজের ইচ্ছা করে, আমি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাব।’ -সুরা হজ : ২৫

অতএব যে হজের সফরে সরাসরি নাফরমানিতে লিপ্ত হবে, ইসলামের বিধানের বিপরীত কাজে জড়াবে- তার শাস্তি কী হতে পারে; এটা সহজেই অনুমেয়। বর্তমানে মানুষের হজপালনের বাস্তবচিত্র লক্ষ করলে অনেক ভুল ও নিষিদ্ধ কর্মকা- চোখে পড়ে। আলেম-উলামারা এসব থেকে হজযাত্রীদের বারবার সতর্ক করে আসছেন। নানা ধরনের বিধিনিষেধও দেওয়া হচ্ছে এগুলো পালনে, তারপরও পরিস্থিতি কাক্সিক্ষত মানে উন্নতি হয়নি। বরং নিত্যনতুন সমস্যা প্রতিনিয়ত সামনে আসছে। এগুলোর উৎপত্তি মনে আল্লাহর ভয় কম থাকা। অনুরূপ অন্যায় বলে বিবেচিত হবে স্থান ও কালের মর্যাদা প্রতি লক্ষ না করা। যা সাধারণত শরিয়ত সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়া ও সামাজিক প্রচলনের অনুসারী হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। এসব বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা কাম্য।

অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, হজের সফরে অনেকেই নানাবিধ ভুল ও নিষিদ্ধ কাজে জড়িয়ে যায়। এর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- প্রয়োজন ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে ইহরামের নিষিদ্ধ বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়া, ছবি ও সেলফি তোলা, মনে গর্ব নিয়ে হজের কথা মানুষকে জানানো, কথা ও কাজে মুসলমানদের কষ্ট দেওয়া, উত্তম ওয়াক্ত হতে বিলম্ব করে নামাজ আদায় করা, পরনিন্দা, চোগলখোরি, অনর্থক কাজ, ঝগড়া-বিবাদ, অনর্থক কথাবার্তা, অপচয়, কৃপণতা, খাদ্য নষ্ট, মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ কিছু গোনাহকে স্বাভাবিক মনে করা। যেমন- অবৈধ দৃষ্টি, অবৈধ বিষয়াদি শ্রবণ, নারী-পুরুষের অবাধ চলাফেরা, নারীর আবৃত অঙ্গ অনাবৃত রাখা, নির্দিষ্ট সময়ে পালনীয় বিধান দ্রুত বা বিলম্বে আদায় করা, অনুরূপ নির্দিষ্ট স্থানে পালন করা। এগুলো কতই নির্বুদ্ধিতা। উপরোক্ত কাজে জড়ানোর অর্থ হলো- সীমাহীন পরিশ্রম ও প্রচুর অর্থসম্পদ ব্যয় করে নিজের অবস্থা ও সৌন্দর্যের পরিবর্তন করে, অপরের বোঝা ও আল্লাহর ক্রোধ বহন করে বাড়ি ফেরা।

হজ সম্পর্কিত একাধিক আয়াতে হজপালনের সময় অধিকহারে ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থাকতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা তোমরা যা কিছু সৎকাজ করো আল্লাহতায়ালা তা জানেন। আর তোমরা পাথেয় সঙ্গে নিয়ে নাও, নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে- খোদাভীতি।’ -বাদায়েউল ফাওয়ায়েদ : ৩/৩০

এমনিতে হজ একটি আধ্যাত্মিক সফর। নিজেকে মাওলার সামনে সম্পূর্ণভাবে নিবেদন করতে হয়। তাই হজ পালনকালে হাজিদের বেশি বেশি ইবাদতে মশগুল থাকার পরামর্শ দেন। আর এটা মাবরুর হজের অন্যতম উপাদানও বটে। মনে রাখতে হবে, হজ চাওয়া-পাওয়ার মৌসুম। এই সময়ে আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে ধরনা দেওয়া উচিত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সর্বোত্তম দোয়া হলো- আরাফার দোয়া।’ -জামে তিরমিজি : ৩৪৮৮

তিনি আরও বলেন, ‘হাজিরা ও ওমরাহ আদায়কারীরা আল্লাহর মেহমান। তিনি তাদের ডেকেছেন, তারা তার ডাকে সাড়া দিয়েছে এবং তারা তার কাছে যা প্রার্থনা করেছে তিনি তাদের সে প্রার্থনা নিশ্চিত কবুল করেছেন।’ -সহিহ আল জামে : ৩১৭৩

লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক

muftianaet@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION