বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৯ অপরাহ্ন
শাওন মাহমুদ:
ঈদ মানেই উৎসব, আনন্দ। ছোট বড় সবার জন্য বছর জুড়ে ঈদের অপেক্ষা এক বিশেষ উৎসবমুখর পরিবেশ নিয়ে আসে। করোনা কাল অনেক কষ্টে উতরে যাওয়ার সময় থেকে বিশ্বজুড়ে চলছে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, চলছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অসমাঞ্জস্যতা।
সারা বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ এমন অনেক বড় ছোট সমস্যা মিলিয়ে আমাদের মতো ছোট দেশগুলোয় ভীষণ রকমের অস্থিরতা কাজ করছে। মানসিকভাবে আমরা কেউ স্বস্তিতে নেই। যে কারণে পৃথিবীতে থেকে মায়া, দয়া, ভালোবাসা, আদরগুলো বিলীন হয়ে আসছে ক্রমশই।
এরপরেও আমরা পরিবার বন্ধুর সাথে মিলেমিশে ভাগেযোগে ছোট ছোট ভালোলাগায়, ছোট ছোট যোগাযোগে উৎসব করার জন্য সময় বের করে নেই। সঞ্চিত সঞ্চয়ের সমাপ্তি টানি। হ্যাঁ, এখানে আমি এখনো ধুঁকে ধুঁকে টিকে থাকা স্বল্প কিছু মধ্যবিত্ত পরিবারের কথা বলছি।
এবারের কোরবানি ঈদ এসেছে কিন্তু কোথাও গিয়ে নেই তেমন পুরোনো পশুর হাটের আমেজের ভিড়। ক্রেতার সংখ্যা দেখে বিক্রেতারা হতাশ। তারচেয়েও দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, হাটগুলোয় রয়েছে প্রচণ্ড রকমের অব্যবস্থাপনা।
ছোট বড় সবার জন্য বছর জুড়ে ঈদের অপেক্ষা এক বিশেষ উৎসবমুখর পরিবেশ নিয়ে আসে। করোনা কাল অনেক কষ্টে উতরে যাওয়ার সময় থেকে বিশ্বজুড়ে চলছে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, চলছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অসমাঞ্জস্যতা।
যাদের এখনো একটু হলেও সচ্ছলতা বা সামর্থ্য আছে তারা কোরবানির ঈদের জন্য হাটবাজারে গিয়েছেন ঠিকই, কেউ আবার ফিরেছেন শূন্য হাতে। কেউ আবার কিনেছেন অনেক কষ্টে। বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি আটশো থেকে সাড়ে আটশোতে উঠানামা করছিল কয়েক মাস ধরেই। সেই হিসেবে গরুর মূল্য কত বাড়তে পারে তা আপনি একটু হিসেব করলেই পেয়ে যাবেন।
এমনিতেই বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম অত্যধিক। খাদ্য থেকে শুরু করে ওষুধ এবং ইউটিলিটি বিল, স্কুলের খরচ, যাতায়াত, বাসা ভাড়াসহ মাস শেষ করতে আমাদের মতো সীমিত আয়ের মানুষ হিমশিম খাচ্ছি বারবার। তার সাথে যোগ হয়েছে ভেজাল, ওজনে কম, পচা বাসি খাবার বিক্রির প্রবণতা। বিষয়গুলো নিয়ে কথা বললেই আপনি পেয়ে যাচ্ছেন সহমত বিরোধী দলের তকমা।
সমস্যাটা আসলে আমাদের, কারণ ছোট্ট একটা দেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ বসবাস করি। এই সোনার বাংলার মাটিতে সব ধরনের চাষাবাদী উৎপাদন ফলন বাম্পার হয়ে থাকে। কিন্তু যখন মানুষ বেশি তখন যতই উৎপাদন হোক না কেন চাহিদা রয়েই যায়, জিনিসের মূল্য অত্যধিক হলেও যাদের হাতে অঢেল টাকা তাদের বাজার ঠিকই হয়ে যায়।
চারিদিকে শুধু তাই দুর্নীতি, ঠকবাজ আর দালালের আধিক্য। কাকে ঠকিয়ে কতটা অর্থ পাওয়া যাবে বা কাকে মেরে কতটা সম্পদ হাতানো যাবে, কার জমি দখল করে ভালো টাকার বিক্রি করা যাবে এমন অনৈতিক নেশায় মত্ত হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছেন নব্বই শতাংশ মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষ এবং মানসিক মূল্যবোধের অবক্ষয় সমাজের নিম্ন স্তর থেকে একেবারে প্রশাসন পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
সবচেয়ে মজার কথা হচ্ছে, এসব সমস্যা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই ধনী শ্রেণির মাঝে এবং সমস্যাগুলো সমাধানের সময় নেই জনগণের প্রতিনিধি রাজনৈতিক নেতাদের কাছে। প্রতি বছর কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে বাংলাদেশে। ব্যবসায়ীরা হয়ে উঠছেন রাজনীতিবিদ।
ঈদ মানেই সবাই মিলেমিশে উৎসব, কথাটি আগামীতে হয়তো আর থাকবে না। এখন বেশিরভাগ সচ্ছল বা ধনী মানুষ শুধুমাত্র নিজের ভালো থাকাকে প্রাধান্য দিতে পছন্দ করেন। নিজেরা ভালো খেতে বা বেড়াতে ভালোবাসেন…
এদের বুকে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলে একজনও বলতে পারবেন না যে তার অর্থের উৎস সৎ উপার্জনের। অথচ ইদানীং কালের নব্য কোটিপতিদের নিরানব্বই শতাংশ ধর্মভীরু বলে নিজেদের প্রকাশ করেন।
সত্য ধার্মিকেরা হারিয়ে যান ওনাদের ধন সম্পদের জৌলুশের চকমকে দুনিয়ায়। সত্য ধার্মিকেরা জানেন, সৎ উপার্জন ব্যতীত কোনো ধরনের দান বা কোরবানি সঠিক নয়।
নিম্নবিত্ত জনসংখ্যার ভারে নিমজ্জিত এই দেশে ধনী মানুষেরা নিজ পরিবারের চারিদিক ভরিয়ে রাখতে সেই ধর্মের লেবাসেই অন্যায় অবিচার আর দুর্নীতি করতে একটুও দ্বিধা করেন না। অথচ আমি এমনও সৎ মানুষের কথা জানি, যাদের পরিবার কারওয়ান বাজারে কোরবানির মাংস কম দামে কেনার জন্য লাইন ধরেন।
এমনও মানুষ আছেন যারা টাকায় কুলাতে না পেরে মুরগি কিনবেন ঈদের দিন রান্না করার জন্য। কোনো আত্মীয়ের যদি খানিকটা মায়া থাকে, হয়তোবা তার থেকে পাওয়া আধ কেজি মাংস দিয়ে কোরবানির ঈদ পালন করবেন কেউ।
ঈদ মানেই সবাই মিলেমিশে উৎসব, কথাটি আগামীতে হয়তো আর থাকবে না। এখন বেশিরভাগ সচ্ছল বা ধনী মানুষ শুধুমাত্র নিজের ভালো থাকাকে প্রাধান্য দিতে পছন্দ করেন। নিজেরা ভালো খেতে বা বেড়াতে ভালোবাসেন।
আমরা আসলে কোথাও গিয়ে একা হয়ে গিয়েছি একা আনন্দেই বাঁচতে শিখছি। তারপরও আশায় বুক বেঁধে রাখি, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তার নিজ রূপে সবার মননে ফিরে আসুক। আবারও সবাই মিলে হেসে উঠুক আমাদের রক্তঋণে পাওয়া প্রিয় ভূখণ্ডে।
শাওন মাহমুদ ।। শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা
ভয়েস/আআ