রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৫১ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ইসালে সওয়াবে দুই আমল

ধর্ম ডেস্ক:
‘ইসালে সওয়াব’ ফারসি শব্দ। আরবিতে হবে ‘ইসালুস সওয়াব’ (তবে এ ক্ষেত্রে আরবিতে অন্য শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয় যেমন ‘ইহদাউস সওয়াব’)। এর আভিধানিক অর্থ সওয়াব পৌঁছানো। পরিভাষায় ইসালে সওয়াব হলো- কোনো নেক আমল করে এর সওয়াব মৃত ব্যক্তিকে দান করা। যেকোনো নেক কাজের ইসালে সওয়াব করা জায়েজ। তবে সব পদ্ধতির গুরুত্ব ও মর্যাদা এক পর্যায়ের নয়। এখানে দুটো পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত

কোরআন মাজিদ অমূল্য নেয়ামত, যা বিশ্ববাসীর হেদায়েতের জন্য নাজিল হয়েছে। এর আদ্যোপান্ত আলো ও হেদায়েত। এতে রয়েছে মানবজাতির পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ পথনির্দেশনা। এর তেলাওয়াতে হৃদয় ভুবন আলোকিত হয়। অর্থ-মর্মে মনন-মেধা উদ্ভাসিত হয়। অনুসরণে জীবন-জগৎ জ্যোতির্ময় হয়।

এই হেদায়েতে জীবন পরিচালিত করা এবং এই আলোতে জীবন উদ্ভাসিত করার পক্ষে এক বড় সহায়ক হলো কোরআন তেলাওয়াত। কোরআন তেলাওয়াত একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। তাই বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা পরম সৌভাগ্যের বিষয়। হাদিসে এ ব্যাপারে জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কোরআন তেলাওয়াতের ইসালে সওয়াব করা জায়েজ। রোজা আর কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। দুটোই ইবাদতে বাদানিয়া এবং নিম্নোক্ত বর্ণনাগুলো থেকেও এর বৈধতা বোঝা যায়।

১. মাকিল ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের মাইয়্যিতের জন্য সুরা ইয়াসিন পাঠ করো। -সুনানে আবু দাউদ : ৩১২১

২. শাবি থেকে বর্ণিত, আনসার (সাহাবিরা) মাইয়্যিতের কাছে সুরা বাকারা তেলাওয়াত করতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ১০৯৫৩

৩. আবু উমায়্যা আযদি থেকে বর্ণিত, জাবির ইবনে যায়েদ (রহ.) মাইয়্যিতের কাছে সুরা রাদ তেলাওয়াত করতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ১০৯৫৭

ইমাম ইবনে কুদামা (রহ.) কোরআন তেলাওয়াতের সওয়াব রেসানির বৈধতার দলিল আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, এতে মুসলমানদের ইজমা আছে। প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক শহরে তারা সমবেত হয়ে কোরআন তেলাওয়াত করে সওয়াব রেসানি করেছে। এতে কেউ কোনো আপত্তি করেনি। -আলমুগনি : ৩/৫২২

শাফেয়ি ফকিহদের মধ্যেও অনেক ফকিহের মত এটাই যে, কোরআন তেলাওয়াতের ইসালে সওয়াব করা জায়েজ। বিশেষত যদি আল্লাহর কাছে এই দোয়া করা হয় যে, তিনি যেন এই সওয়াব মাইয়্যিতের কাছে পৌঁছে দেন।

ইমাম ইবনুস সালাহ (রহ.)-এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কোরআন পড়ে পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজন কিংবা সাধারণ মুসলমানকে সওয়াব পৌঁছানো যাবে কি না? উত্তরে তিনি বলেছেন, এতে ফকিহদের মতভেদ আছে। তবে অধিকাংশ মানুষ তা জায়েজ মনে করে। এক্ষেত্রে এই দোয়া করা উচিত যে, হে আল্লাহ! আপনি এর সওয়াব অমুককে পৌঁছে দিন। -ফাতাওয়া ইবনুস সালাহ : ১/১৯৩

মালেকি ফকিহদেরও এক জামাত এই মত পোষণ করেন। ইমাম ইবনে রুশদ (রহ.)-কে কোরআনের সওয়াব রেসানি জায়েজ কি না জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, কোরআন তেলাওয়াত করে মাইয়্যিতকে সওয়াব রেসানি করা জায়েজ, সে এর সওয়াব পাবে এবং এটা তার উপকারে আসবে ইনশাআল্লাহ। -নাওয়াযিলে ইবনে রুশদ : ১৪৪৬

আহলে হাদিসদের মধ্যেও একাধিক আলেম একই মত গ্রহণ করেছেন। শায়েখ উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরি (১৪১৪হি.) বলেন, দোয়া-ইস্তিগফার, দান-খায়রাত, হজ ও কোরবানির মতো কোরআন তেলাওয়াতের সওয়াবও মাইয়্যিতের কাছে পৌঁছে। -ফাতাওয়া শাইখুল হাদিস মুবারকপুরি : ১/৪৫৯

যেকোনো নেক আমল

নেক আমলের জগৎ অনেক বিস্তৃত। কোরআন-সুন্নাহতে যেসব নেক কাজ সুস্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর তালিকাও বেশ লম্বা। তবে যেকোনো নেক কাজের ইসালে সওয়াব করা যাবে। হজরত আবু বকর আলখাল্লাল (রহ.) আল উকুফ ওয়াত তারাজ্জুল গ্রন্থে (পৃ. ৮৫) মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহইয়া থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ইমাম আহমদ (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করেছেন, মানুষ নামাজ, সদকা ইত্যাদি নেক কাজ করে এর অর্ধেক সওয়াব পিতা বা সন্তানকে দান করে (এ কি তার কাছে পৌঁছবে)? উত্তরে তিনি বলেন, আশা করি। তিনি আরও বলেন, সদকা ইত্যাদি সব মাইয়্যিতের কাছে পৌঁছে।

মালেকি মাজহাবের বিশিষ্ট ইমাম আবু বকর ইবনে আরাবি (রহ.) বলেন, মৃতের নামে করা জীবিত ব্যক্তির আমলের কল্যাণ সর্বসম্মতিক্রমে মাইয়্যিতের কাছে পৌঁছে।

আমির সানআনি (রহ.) বলেন, যেকোনো আমলের সওয়াব অন্যকে দান করা যায়। তা নামাজ হোক বা রোজা বা হজ বা সদকা বা কোরআন তেলাওয়াত অথবা জিকির কিংবা অন্য কোনো সৎকর্ম।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION