রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৫০ পূর্বাহ্ন
মাওলানা আবদুল জাব্বার:
ইসলাম ধর্মে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতাকে সর্বোত্তম কাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং মানবতার মঙ্গল সাধনে এই গুণটির গুরুত্ব অত্যধিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, অন্যের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ ইসলাম ধর্মে এক ধরনের ইবাদত হিসেবে স্বীকৃত। এর ফলে আল্লাহর সঙ্গে মানুষের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়।
এ ক্ষেত্রে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি মানুষের প্রতি সহমর্মী এবং সহানুভূতিশীল। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অবশ্যই তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য হতেই একজন রাসুল এসেছেন, তোমাদের যে দুঃখ-কষ্ট হয়ে থাকে তা তার জন্য বড়ই বেদনাদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি তিনি করুণাশীল ও অতি দয়ালু।’
সহানুভূতি অর্থ হচ্ছে অন্যের অনুভূতি ও অবস্থা উপলব্ধি করার যোগ্যতা। অন্যভাবে বলা যায়, সহমর্মী ও সহানুভূতিশীল ব্যক্তি নিজেকে অপর মানুষের স্থানে বসাতে পারে। তবে অন্যের অনুভূতিকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করার পাশাপাশি সেই অনুভূতির উপযুক্ত জবাব দেওয়া জরুরি। অন্যের ক্ষোভ, ভীতি ও দুঃখ-কষ্টকে বুঝে সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য প্রথমেই নিজের সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি।
যিনি নিজের আবেগ-অনুভূতি ও মন-মানসিকতা সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন নন তিনি সঠিকভাবে অন্যকে সহানুভূতি প্রকাশ করতে পারেন না, প্রত্যাশিত সহমর্মী হওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। যারা অন্যের সহমর্মী হতে জানেন তাদের কিছু অভিন্ন বৈশিষ্ট্য থাকে। এ ধরনের অভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হলো তারা মানুষকে ভালোবাসে। সবাইকে সম্মান দেখায় এবং বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। এ ধরনের মানুষ বন্ধু পেয়ে যায় সহজেই। অন্যেরাও তাকে ভালোবাসে। এ ধরনের দক্ষতার অধিকারী ব্যক্তিরা নানা সুবিধা পান।
দূর থেকে সহানুভূতি জানানোর চেয়ে সহমর্মী হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো অনেক বেশি জরুরি। আর এ জন্য প্রথমেই প্রয়োজন অন্যের দুঃখ উপলব্ধি করা, প্রথমেই কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে ভুক্তভোগীর অবস্থান থেকে তাকে বুঝতে শেখা জরুরি। এর ফলে আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়ে তেমনি ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা শানিত হয়, আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়, পারস্পরিক সম্পর্ক গাঢ় হয়, সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক ঝুঁকি ও বিপদ কমে এবং অন্যকে ভালোভাবে চেনার পাশাপাশি সম্পর্ক বিস্তারে সহায়ক হয়।
সহানুভূতি ও সহমর্মিতার দক্ষতা না থাকলে নিজের অজান্তেই এমন আচরণ প্রকাশ পায় যা সহমর্মিতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ধরনের আচরণগুলোর মধ্যে রয়েছে, অন্যের সমালোচনা, অন্যকে অপবাদ দেওয়া, অন্যের বিষয়ে মনগড়া মন্তব্য করা, সমস্যাকে বড় করে তুলে ধরা অথবা সমস্যাকে ছোট করে দেখা, পরস্পরের সঙ্গে তুলনা করা, অপমান-অপদস্থ করা, উপদেশ দেওয়া, দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং অযাচিতভাবে সমস্যার সমাধান বাতলে দেওয়া।
আপনি যদি মনে করেন, আপনার মধ্যে সহমর্মিতার দক্ষতা নেই, তাহলেও উদ্বিগ্ন হবেন না। আপনি কিছু উপায় অনুশীলনের মাধ্যমে এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন ইনশাআল্লাহ।
এই দক্ষতা বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা হলো সচেতনভাবে অন্যের কথা শোনা। কেউ যখন আপনার সঙ্গে কথা বলবে তখন মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনুন এবং প্রয়োজনীয় উত্তর দিন। প্রথমেই আপনি আপনার চলমান কাজটি বন্ধ রাখুন এবং কথা শোনার ক্ষেত্রে পূর্ণ মনোযোগ দিন। যার কথা শুনছেন তার সঙ্গে আই কন্টাক্ট করুন অর্থাৎ তার চোখে চোখ রাখুন এবং তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজও বোঝার চেষ্টা করুন।
আপনি যে তার কথা শুনছেন তা বোঝানোর জন্য মাঝে মধ্যে মাথা নাড়ান, এ ধরনের নানা ভঙ্গিমার মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করুন যে, আপনি তার কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনছেন। তাকে ভালোভাবে বোঝার জন্য নিজেকে তার জায়গায় কল্পনা করুন এবং এটা ভাবুন যে, আপনি যদি তার স্থানে থাকতেন তাহলে কী করতেন।
আপনি নিজেও তা চর্চা করতে পারেন এভাবে চারপাশের বৈষম্যের শিকার হওয়া মানুষ ও তাদের মনোজগৎ নিজের অনুভূতির মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করুন। তাদের প্রতি আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত এবং তাদের উন্নয়নে কী করা যায়, তা নিয়ে ভাবুন এবং আপনার আইডিয়া অন্যের সঙ্গে শেয়ার করুন, অন্যদের মতামত নিন। বিশ্বজুড়ে এত যুদ্ধ-হানাহানির মূলে রয়েছে অন্যের প্রতি আমাদের সহমর্মিতার অভাব, অন্যকে বুঝতে না পারা।
ভয়েস/আআ