বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কেউ কি একটি ল্যাপটপ সহযোগিতা দিতে পারেন

তোফায়েল আহমদ:
দুঃখীনী মা লাকি নন্দী। এত দুঃখের মাঝেও তিনি গর্বিত মা। দীর্ঘ ২৬ বছরের বিবাহিত জীবন তার। টানা ১৪ বছর ধরে নানা পেশাজীবীর কাছে রান্না করা খাবার পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিনিময়ে কেবল নিজেদের জীবন বাঁচিয়ে রাখেননি সেই সাথে ৪ টি সন্তান কে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ গড়ার সাধনাও অত্যন্ত নিপুণ কৌশলে করে চলেছেন।

লাকি নন্দীর জীবন যুদ্ধ শুনলে যেমন চোখের পানি ধরে রাখা কষ্ট হয় তেমনি দুই মেধাবী কন্যা আর পরিশ্রমী দুই কিশোর সন্তানের এগিয়ে চলার কথা শুনলে শান্তিতে বুক ভরে যায়। ছোট দুই সন্তান মাধ্যমিকের ছাত্র। তারা দুই ভাই পালা করে ১০ পেশাজীবির কাছে মায়ের রান্না করা দুই বেলা ভাত পৌঁছে দেয়। লেখাপড়ায়ও পিছিয়ে নেই কিশোর ভ্রাতাদ্বয়।

মা লাকি নন্দী চাকরিজীবী, দোকানী সহ নানা পেশার লোকজনের কাছে রান্না করা খাবার সরবরাহ দিয়ে আসছেন গত ১৪ বছর ধরে। আগে প্রতিজন পিছু এক বেলা খাবার বাবদ টাকা নিতেন ৪০ টাকা করে। কভিডের পর দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় ৬০ টাকা করে নিচ্ছেন। তারপরও পুষিয়ে নেয়া কষ্টসাধ্য। তবুও সংসারের ৫/৬ জনের খাবারটা কোন রকমে হয়ে যায়। নিজেই বাজার করেন আর নিজেই করেন রান্না। মাঝে মধ্যে মেয়ে সহযোগিতা করেন।

লাকি নন্দীর স্বামী থেকেও যেন অসুস্থতার কারণে না থাকার মত। বড় কন্যাটা অনার্সের ছাত্রী। তিনি পড়ালেখার সাথে একটি এনজিওতে চাকরি করেন। বোনটা ছোট দুই ভাইয়ের পড়ালেখার যোগান দিয়ে থাকে। মেঝ মেয়ে এসএসসি ও এইচএসসি দুটাতেই গোল্ডেন এ প্লাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাথে ভর্তির সুযোগ পেয়েও একটি ল্যাপটপের অভাবে ভর্তি হতে পারননি মেধাবী মেয়েটা।

লাকি নন্দীর দুই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে যায় – এ কথাটা বলতে গিয়ে। তিনি অনেক স্বজন থেকে শুরু করে ধনাঢ্য লোকজনের কাছেও গিয়েছেন একটি ল্যাপটপের জন্য। কিন্তু কারও সহযোগিতা পাননি। অমনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যামিস্ট্রিতে ভর্তির সুযোগ এসে হাজির। লাকি নন্দী বিধাতার কাছে পড়েই ছিলেন মেয়ের এমন বিরল সুযোগের জন্য। সেই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ের খরচ নিজেই যোগাড় করে টিউশনির মাধ্যমে।

মানুষের কাছে রান্না করা খাবার বিক্রেতা একজন দুঃখীনী লাকির চার সন্তানের লেখাপড়ায় এগিয়ে যাওয়ার কথা শুনে গত শনিবার তার ভাড়া বাসায় গিয়েছিলাম। কিশোর দুই ভ্রাতা তখন ভাতের টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে বের হচ্ছিল। আমি ওদের ছবি তুলতে চাইতেই দুই ভাই বলে উঠল- ‘ আংকেল আমাদের বন্ধুরা টিপ্পনী কাটবে।’ ওদের বললাম, বিশ্বখ্যাত এক ব্যক্তির পিতা ছিলেন মুচি। ভারতের একজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন চা বিক্রেতা। তারা তখন সাহসের সাথে আমার কথায় সুর মিলাল। ওহে সন্তান, তোমরাই পারবে- এই বলে শুভ কামনা করলাম ওদের জন্য। বাচ্চাগুলোর কথা শুনে আমি ওদের নাম ঠিকানা দিলাম না।

তবু্ও আমি পরিবারটিকে সাধুবাদ জানাচ্ছি, এরকম তিল তিল করে গড়ে তোলার জন্য। একজন মা লাকির অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ এবং সাহসিকতায় এগিয়ে যাচ্ছে চারটি সন্তান। হয়তোবা এমন একদিন আসবে যে মেধাবী মেয়ে একটি ল্যাপটপের অভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেনি সেই মেয়েটাই আরেক জন দরিদ্র মেধাবী সন্তানকে ল্যাপটপ হাতে দিয়ে লেখাপড়ার সুযোগ করে দিবেন। তবুও লাকি নন্দীর আফসোস থেকেই গেল- ” যদি আমাদের ঘরে একটি ল্যাপটপ থাকত আমার চার সন্তান হয়তোবা আরো এগিয়ে যেত। ”

কোন সহ্রদয়বান ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কি আছেন পড়ুয়া এ চার সন্তানের জন্য একটি ল্যাপটপ সহযোগিতার হাত বাড়াবেন ?

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, দৈনিক কালের কন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION