সোমবার, ৩০ Jun ২০২৫, ০৭:২২ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

অবৈধ বিদেশিদের দেশে ফেরার নাম নেই

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশে অবস্থান করা বহু বিদেশি নাগরিকের পাসপোর্ট ও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তারা নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার নাম নিচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ সরকার তাদের নিজ দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে দেশের নানা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও বর্তমানে অবৈধ হয়ে যাওয়া এসব বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশেই থেকে গেছে। শুধু তাই নয়, তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অর্থ পাচার ও জঙ্গি কার্যক্রমসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

গোয়েন্দাসহ নানা সূত্র বলছে, বর্তমানে প্রায় দুই লাখ বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে কর্মরত। আর প্রায় ১২ হাজার নাগরিক বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছে। তবে তাদের বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য নেই বাংলাদেশ সরকারের কাছে।

অবৈধভাবে অবস্থান করা এসব বিদেশি তথ্য গোপন করে বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কাজও করছে। সরকারের কর ফাঁকি দিয়ে উপার্জিত অর্থ পাচার করছে হুন্ডির মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের সঙ্গেও তারা জড়িত বলে তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। বিভিন্ন অপরাধে প্রায় দুইশ বিদেশি নাগরিক বর্তমানে কারাগারে বন্দি রয়েছে।

এমনিতেই কারাগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি বন্দি রয়েছে। সেটি সামাল দিতে কারা কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে। এর ওপর বিদেশিদের বন্দি রাখার বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ অবস্থায় অবৈধদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার একাধিক বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সভায় বাংলাদেশে অবস্থানরত সব বিদেশি নাগরিকের ডেটাবেজ প্রস্তুত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এজন্য পুলিশের বিশেষ শাখা বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক সংগঠনের সহায়তা নিচ্ছে। কোন কোন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কতজন বিদেশি কাজ করছেন, তাদের তালিকা চূড়ান্তভাবে প্রস্তুতও করা হয়েছে। সবার ডেটা বেইজ চূড়ান্ত হচ্ছে। সব শেষে সরকারের কাছে তালিকা দেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গ্রেপ্তার হওয়া বিদেশি অপরাধীদের অনেকেই ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কোনো উদ্যোগ নেয় না। যে কারণে বাংলাদেশ সরকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের মধ্যে চিঠি চালাচালি করা হয়। এরপরও কোনো ধরনের ইতিবাচক সাড়া পায় না মন্ত্রণালয়। আবার কোনো কোনো দেশের দূতাবাস না থাকায় তাদের ফেরত পাঠাতে জটিলতার সৃষ্টি হয়।

নিয়মানুযায়ী কোনো বিদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার হলে দাপ্তরিকভাবে বিষয়টি যার যার দেশের দূতাবাস বা চ্যান্সারি অফিসকে জানানো হয়। তবে এদেশে যেসব দেশের দূতাবাস বা চ্যান্সারি অফিস নেই, সেসব দেশের নাগরিক গ্রেপ্তার হলে তাদের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে কালক্ষেপণের বেড়াজালে পড়তে হয়।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের গতিবিধি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে। অনেকের ভিসা ও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তারা অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তারা সোনা ও মাদক চোরাচালান, জাল মুদ্রা তৈরি, এটিএম কার্ড জালিয়াতির মতো অপরাধ কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ছে। অনেকের বিরুদ্ধে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে মদদ দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে কারাগারে রয়েছে। যারা অপরাধে জড়াচ্ছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও বলেন, আটক বিদেশিদের নিজ দেশে ফেরত নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের জানানো হয়েছে। নাম-ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশের দূতাবাস সাড়া দিয়ে বেশ কয়েকজন নাগরিক তাদের দেশে ফেরতও নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও ফেরত পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, দেশে অবৈধভাবে অবস্থান করা ১২ হাজারের বেশি বিদেশি নাগরিককে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিদেশিদের পরিসংখ্যান সঠিক রাখার জন্য তাদের ডেটা বেইজ করা হচ্ছে। বিদেশি বন্দিদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে চিঠি পাঠানো হয়। বন্দিদের ঠিকানা, পিতা-মাতাসহ পাসপোর্টে উল্লিখিত তথ্য যাচাই-বাছাই করে দূতাবাসের মাধ্যমে স্বদেশে ফেরত নিতে অনুরোধ জানানো হয়। এরই মধ্যে বিশ্বের ১২টি দেশের অবৈধ বসবাসরত শতাধিক নাগরিককে স্বদেশে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের ভ্রমণ ভিসাসহ অন্যান্য কাগজ যাচাইয়ে পুলিশের বিশেষ শাখা নিয়মিতভাবে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, দেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, ক্যামেরুন, ফিলিপাইন, আফগানিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিক রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ ব্যবসায়িক বা ভ্রমণ ভিসায়, আবার কেউ কেউ ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসায় বাংলাদেশে এসে অবৈধভাবে রয়ে গেছে। তারা প্রতারণা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার মতো অপরাধ কার্যক্রম করছে। তবে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগ ব্যবসায়িক বা ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের একটি অংশ চতুরতার সঙ্গে পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে বলে বিভিন্ন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। এরপর জিডির সুবাদে অবৈধভাবে অবস্থান করে থাকে। এরপরও সার্বিকভাবে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) বিদেশি নাগরিকদের বিশেষ নজরদারিতে রাখছে।

সূত্র বলছে, যেসব বিদেশি বিশেষ প্রতারণায় যুক্ত রয়েছে, তাদের বেশিরভাগই রাজধানীর উত্তরা, আশকোনা ও খিলক্ষেত এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বা হোটেলে অবস্থান করে। নিজেদের ফুটবলার বা বায়িং হাউসের ব্যবসায়ী বলেও পরিচয় দিয়ে থাকে তারা।

এ ছাড়া যেসব নাইজেরিয়ান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে, তারা নতুন আসা নাইজেরিয়ানদের নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে সহায়তা করে। তাদের দেশের নামে বাংলাদেশের সঙ্গে নাম জুড়ে দিয়ে ভুয়া সংগঠনের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে নাইজেরিয়ান অপরাধীদের মামলাসংক্রান্ত যাবতীয় খরচ বহনসহ অপরাধীদের দায়মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়। শুধু তাই নয়, নাইজেরিয়ার নাগরিকরা বাংলাদেশে অবস্থানকালে বিদেশি নাগরিক হিসেবে শুল্কমুক্ত (ডিউটি ফ্রি) বিদেশি মদ ও বিয়ার কেনার সুযোগ পাচ্ছে। এ সুযোগে কিছু বাংলাদেশির সঙ্গে তাদের বিশেষ সখ্য গড়ে উঠেছে। অপরাধ করে কারাবন্দি হওয়ার পর নাইজেরিয়ানরা কারাগারেই অবাধে বাংলাদেশি বন্দিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে এক হয়ে আবারও অপরাধে জড়ায়। একাধিকবার কারাবরণ করার পরও বাংলাদেশে অবস্থান করে নানা কৌশলে অপরাধ করছে তারা। এরপরও আইনের মারপ্যাঁচে বাংলাদেশেই থেকে যাচ্ছে তারা।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION