রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৫৫ অপরাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
গণমাধ্যমের ওপরও মার্কিন ভিসানীতি আরোপ হতে পারে— ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের এই ব্ক্তব্যটি আরও একবার উত্থাপন করা হয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রেস ব্রিফিংয়ে। স্থানীয় সময় সোমবার (২ অক্টোবর) এই ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে জবাবে দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার জানান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিশেষ কোনও দলকে সমর্থন করে না। এমনকি বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলকে যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবিত করতে চায় না।
বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ’ করার লক্ষ্যে গত ২৪ মে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বলা হয়, যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের ওপর এই ভিসানীতি প্রয়োগ করা হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছিল, নির্বাচনের পর এই ভিসানীতির প্রভাব দেখা যেতে পারে। তবে তার আগেই গত ২২ সেপ্টেম্বর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ শুরু হয়েছে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। বেশ কয়েকজন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের এরই মধ্যে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়। যদিও তাদের নাম কিংবা সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। এরই মধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জানান, গণমাধ্যমও মার্কিন ভিসা নীতির আওতায় আসতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন। জবাবে দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, মার্কিন ভিসার রেকর্ড গোপনীয় তথ্য। তাই কোনও তালিকা বা নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করা হয়নি। স্পষ্ট করা হয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নীতি কার্যকর হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সোমবার আরও একবার প্রশ্নের মুখোমুখি হন ম্যাথু মিলার। ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ওপর সম্ভাব্য ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘বাংলাদেশে তালেবানি ব্যবস্থা সমর্থনকারী একটি কট্টরপন্থি গোষ্ঠী ও বিরোধী দলের নেতারা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, এমনকি উগ্র মতাদর্শের সমালোচনাকারী সাংবাদিকদের তালিকাও প্রচার করা হচ্ছে। অন্যদিকে, সাধারণ নাগরিক ও মানবাধিকারকর্মী, যুদ্ধাপরাধ-বিরোধী প্রচারকর্মী, সম্পাদক, সাংবাদিক, লেখক, সংখ্যালঘু নেতারা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্যকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রতি অবমাননা হিসেবে মনে করছেন। যেখানে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কেন্দ্রে আছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা।
দফতরের মুখপাত্রের কাছে প্রশ্ন রেখে ওই সাংবাদিক বলেন, ‘আপনি কি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যকে সমর্থন করেন এবং ধর্মনিরপেক্ষ জাতির সমর্থনকারী এত বড় উদারপন্থি গোষ্ঠীর উদ্বেগকে কি সরাসরি অস্বীকার করেন?’
জবাবে মিলার বলেন, ‘আমি গত সপ্তাহে যা বলেছি, তা আবার একটু ভিন্ন ভাষায় বলতে চাই; তা হলো— (নির্বাচন বিষয়ে) বাংলাদেশিরা যা চায়, যুক্তরাষ্ট্রও তা-ই চায়; শান্তিপূর্ণভাবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। বাংলাদেশের সরকার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম—সবাই তাদের এই ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছে যে, তারা চায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হোক। আমরাও তাই চাই।’
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এই মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নিষেধাজ্ঞার নীতি ঘোষণা করেছে, তা সবার উদ্দেশ্যকে সমর্থন করে এবং বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনভাবে নেতা নির্বাচনের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটাকেও সমর্থন করে। আমি শুধু বলতে চাই, যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ কোনও দলকে সমর্থন করে না এবং নির্বাচনের ফলাফলকেও প্রভাবিত করতে চায় না। আমরা শুধু এটুকুই নিশ্চিত করতে চাই যে, বাংলাদেশের জনগণ যেন স্বাধীনভাবে তাদের নেতা নির্বাচন করতে পারে।
ভয়েস/জেইউ।