সোমবার, ৩০ Jun ২০২৫, ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র হওয়ার গুণ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ:
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু মুসা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিন মুমিনের জন্য প্রাচীরস্বরূপ, একে অপরকে শক্তি জোগায়। এ কথা বলে তিনি তার দুই হাতের আঙুল প্রবিষ্ট করে দেখালেন।’ -সহিহ বোখারি : ৬০২৫

বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, প্রাচীরের একেকটি ইট অপরটির সঙ্গে দৃঢ়ভাবে লেগে থাকে। কোথাও সামান্য ফাঁকা থাকে না। যার ফলে প্রাচীরটি দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। এমন মজবুত হয়, ঝড়-তুফান এবং শত্রুর আক্রমণেও তা টলে না। তেমনি মুমিনরাও যেন হয় প্রাচীরের মতো। তারা একে অপরের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে জুড়ে থাকবে, পরস্পর ঐক্যবদ্ধ থাকবে, তাদের মধ্যে কোনো বিভেদ-বিচ্ছিন্নতা থাকবে না। কেউ কারও ক্ষতির কারণ হবে না। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত নোমান ইবনে বাশির (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনদের দেখবে পরস্পরের প্রতি মমতা, হৃদ্যতা ও দয়ার্দ্রতায় এক দেহের ন্যায়। দেহের একটি অঙ্গ পীড়িত হলে গোটা দেহ অনিদ্রা ও জরাক্রান্ত হওয়ার মাধ্যমে তার প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে।’ -সহিহ বোখারি : ৬০১১

মুমিনদের পরস্পরের মধ্যে ইমানি বন্ধন কেমন সুদৃঢ় হওয়া উচিত, তা আমরা এই হাদিস থেকে পাই। মুমিনদের যে কেউ দেখলেই যেন উপলব্ধি করতে পারে, শুধু ইমানি যোগসূত্রের কারণেই তারা একে অপরকে ভালোবাসে, একে অপরের প্রতি মমতা ও হৃদ্যতা পোষণ করে। পৃথিবীর কোথাও কোনো মুমিন আক্রান্ত হলে সবাই তার জন্য এগিয়ে আসে, পাশে দাঁড়ায়, সহমর্মিতা প্রকাশ করে, ইমানের দাবিদার হয়েও যদি কারও মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য না থাকে, তাহলে তার উপলব্ধি করা উচিত যে, এখনো তার প্রকৃত ও পূর্ণাঙ্গ ইমান নসিব হয়নি।

ইমানদারদের এই বৈশিষ্ট্যের কথাই কোরআন মাজিদে এসেছে, ‘আপসের মধ্যে একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র’ সংক্ষিপ্ত অথচ সারগর্ভ বাক্যে। ‘আপসের মধ্যে একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র’ কথার মর্ম অনেক বিস্তৃত। যেমন মুমিন নিজের জন্য যা পছন্দ করে অন্যের জন্য তাই পছন্দ করবে। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ মুমিন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ না করে।’ -সহিহ বোখারি : ১৩

মানুষের সঙ্গে আচরণের বিষয়ে অতি সহজ, সুন্দর ও স্বভাব অনুকূল একটি মূলনীতি এই হাদিস থেকে পাই। বাস্তব জীবনে যদি এই মূলনীতি প্রয়োগ করা হয় তাহলে আচরণ হবে নির্ভুল, প্রশান্তিময় ও স্নিগ্ধতাপূর্ণ। এভাবেই হাদিসে মানবের চূড়ান্ত সফলতা, জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের উপায় হিসাবে আল্লাহর রাসুল (সা.) ইমানের পর উত্তম আচার-ব্যবহারের কথা বলেছেন।

আমরা জানি, মুমিনদের পরস্পরের সম্পর্ক হলো ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক। ভ্রাতৃত্বের এক গুরুত্বপূর্ণ দাবি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। জমিজমা, জীবিকা এসব নিয়ে দুনিয়াতে মানুষের কত আয়োজন, কত দৌড়ঝাঁপ। একে ঘিরে তার কত দুশ্চিন্তা, কত অস্থিরতা! এসব ক্ষেত্রে মুমিন যেন তার মুমিন ভাইকে সুরক্ষা দেয়, তার আড়ালে-অনুপস্থিতিতেও তাকে যেন সে আগলে রাখে। কোনো মুমিনের মাধ্যমে যেন অন্য মুমিনের কোনো ক্ষতি না হয়। কোনো রকম পেরেশানি না হয়। কোনো সন্দেহ নেই যে, এটা যেন ভাইয়ের কাছে ভাইয়ের দাবি, তেমনি তা ভাইয়ের পক্ষ থেকে ভাইয়ের জন্য বড় পাওয়াও বটে!

হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক মুমিন অন্য মুমিনের ভাই। সুতরাং কোনো মুমিনের জন্য জায়েজ নেই তার ভাইয়ের বিক্রয়-প্রস্তাবের ওপর নিজে প্রস্তাব এবং তার ভাইয়ের বিবাহ-প্রস্তাবের ওপর নিজে প্রস্তাব করা। হ্যাঁ, যদি সে ছেড়ে দেয় (তাহলে সেখানে প্রস্তাব করতে পারে)।’ -সহিহ মুসলিম : ১৪১৪

মানবজীবনে এমন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়া মুমিন নামের দাবি। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন সেই, যার থেকে মানুষ (সবদিক থেকে) নিশ্চিন্ত থাকে, মুসলিম সেই যার জিহ্বা এবং হাত থেকে মুসলমানরা নিরাপদ থাকে। আর মুহাজির হলো ওই ব্যক্তি, যে অন্যায় বর্জন করে চলে।’ -মুসনাদে আহমদ : ১৬৫৬১

মুমিনের গুণ হিসেবে আরও কিছু বিষয় উল্লেখ করা যায় আমানতদারি মুমিনের অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য, কোরআন-সুন্নাহর ভাষায় বান্দার প্রতি আল্লাহর সমস্ত হক (হুকুকুল্লাহ) আমানতের অন্তর্ভুক্ত। তদ্রƒপ মানুষের পরস্পরের আস্থা ও নির্ভরতার যত ক্ষেত্র আছে, সবই আমানতের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং গচ্ছিত অর্থ-সম্পদ, অর্পিত দায়-দায়িত্ব, প্রার্থিত মতামত ও পরামর্শ এবং একান্ত কথাবার্তা ইত্যাদি সব একেকটি আমানত।

মুমিনের আরও বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচার এবং অতিথির সেবা করা। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘মুমিন হয় ভালো কথা বলবে, না হয় নীরব থাকবে। ’

এসব গুণ জীবনে ধারণ করতে পারলেই পূর্ণাঙ্গ মুমিন হওয়া সম্ভব। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইমানের দিক থেকে মুমিনদের মধ্যে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ ওই ব্যক্তি, যে সবচেয়ে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৬৮২

muftianaet@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION