সোমবার, ৩০ Jun ২০২৫, ০২:৩৩ পূর্বাহ্ন
মুফতি এনায়েতুল্লাহ:
বিশিষ্ট সাহাবি হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে পাঁচটি বস্তু দেওয়া হয়েছে, যা আমার পূর্বে কাউকে দেওয়া হয়নি। শত্রুর মনে ভীতি সঞ্চার করে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে, যা এক মাসের রাস্তার সীমা পর্যন্ত প্রযোজ্য। জমিনকে আমার জন্য মসজিদ তথা নামাজ আদায়ের যোগ্য ও পবিত্রতা অর্জনের যোগ্য করে দেওয়া হয়েছে। আমার উম্মতের যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো স্থানে নামাজের সময় হলেই নামাজ আদায় করতে পারবে। আর আমার জন্য গনিমত তথা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হালাল করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে কারও জন্যই হালাল ছিল না। আমাকে (কেয়ামত দিবসে) শাফায়াত তথা সুপারিশ করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। প্রত্যেক নবীকে বিশেষভাবে তার সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে আর আমি সব মানুষের কাছে প্রেরিত হয়েছি। সহিহ বোখারি : ৩৪৫
বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কিছু মর্যাদার কথা বর্ণিত হয়েছে, যা তিনি ব্যতীত অন্য কোনো নবী বা রাসুলকে দেওয়া হয়নি। কাজেই তা অন্য কোনো অলি-আউলিয়া বা পীর-মুর্শিদের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই প্রযোজ্য নয়। বৈশিষ্ট্যগুলোর অন্যতম হলো আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় রাসুলের (সা.) শত্রুদের মনে এমন অস্থিরতা ও ভীতি সঞ্চার করে দেন, যাতে তারা এক মাসের দূরত্বের রাস্তায় থাকলেও রাসুলের ভয়ে তটস্থ ও বিচলিত থাকে। একজন নবী বা রাসুলের দাওয়াতি মিশনে সফলতা লাভের জন্য এ ধরনের বিশেষত্ব খুবই তাৎপর্য বহন করে। আর এটি শেষ নবীর প্রতি তার রবের পক্ষ থেকে অন্যতম উপহার।
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো পূর্ববর্তী উম্মতদের জন্য আহলে কিতাব ও অন্যদের নির্দিষ্ট ইবাদতখানায় ইবাদত-বন্দেগি করা অপরিহার্য হলেও শেষ নবী ও তার উম্মতের জন্য পুরো জমিনকে নামাজের স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং মাটি দ্বারা তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের বিধান দেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে এ দুর্লভ সুযোগ তাদের দীন পালনে অত্যন্ত সহায়ক ও আরামদায়ক। অতএব যখন যেখানে নামাজের সময় হবে তখন সেখানে নামাজ আদায় করা যাবে। (অবশ্য পরবর্তী সময় অন্য হাদিস দ্বারা শুধু কবরস্থান, গোসলখানা ও অপবিত্র স্থানে নামাজ আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে।)
তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হলো শেষ নবী ও তার উম্মতের জন্য যুদ্ধলব্ধ গনিমতের মাল (কাফেরদের পরাজিত করার পর তাদের কাছ থেকে নেওয়া সম্পদ) হালাল করা হয়েছে, যা পূর্বে কোনো নবীর জন্য বৈধ ছিল না। পূর্বেকার নবী-রাসুলরা শত্রুদের পরাজিত করে যে সম্পদ লাভ করতেন তা নির্দিষ্ট এক স্থানে রেখে দেওয়া হতো এবং আগুন এসে সেগুলোকে ভস্মীভূত করে দিত। হাদিসের কোনো কোনো ভাষ্যকার অভিমত দেন যে, এটিকে তাদের জিহাদ তথা আল্লাহর পথে লড়াইয়ে নিয়তের বিশুদ্ধতা বা একনিষ্ঠতার প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হতো।
চতুর্থ বৈশিষ্ট্য হলো হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে কেয়ামত দিবসে শাফায়াত বা সুপারিশ করার অনুমতি দেওয়া হবে এবং তার সুপারিশ গ্রহণ করার ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা অঙ্গীকার করেছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী কারিম (সা.)-কে বলা হবে তুমি সুপারিশ করো, তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। আলোচ্য হাদিসে বর্ণিত এই সুপারিশ দ্বারা কোনো সুপারিশকে বোঝানো হয়েছে তা নিয়ে ইসলামি বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন উক্তির অবতারণা করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, এই সুপারিশ দ্বারা কেয়ামত দিবসের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাওয়ার সুপারিশকে বোঝানো হয়েছে। কারও মতে, এটা দ্বারা এমন সুপারিশকে বোঝানো হয়েছে, যা আল্লাহতায়ালা কখনো প্রত্যাখ্যান করবেন না। কোনো কোনো আলেমের মতে, এই সুপারিশ দ্বারা যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ ইমান রয়েছে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনার সুপারিশকে বোঝানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, বেহেশতের মধ্যে স্তর উন্নয়ন বা মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য যে সুপারিশ করা হবে, তা বোঝানো হয়েছে। কারও মতে, যাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গেছে, তাদের তা থেকে রক্ষা করার সুপারিশকে বোঝানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, বিনা হিসাবে বিশেষ কোনো দলকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য যে সুপারিশ করা হবে তাকে বোঝানো হয়েছে। উমদাতুল কারি শরহু সহিহিল বোখারি : ৪/১০
পঞ্চম ও সর্বশেষ বৈশিষ্ট্য হলো সকল নবীকে তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে, আর আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সাদা, কালো, আরব, অনারব নির্বিশেষ গোটা মানবজাতির কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির নিকট সুসংবাদদানকারী ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এ বিষয়ে জ্ঞান রাখে না।’ সুরা সাবা : ২৮। এ আয়াতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, নবী কারিম (সা.)-কে সমগ্র মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
muftianaet@gmail.com