রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ১২:৩০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

বড় আদেশকারীর আদেশের গুরুত্বও বড়

মুফতি এনায়েতুল্লাহ:
ইমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে নামাজ। আল্লাহতায়ালা কোরআন মাজিদে বিভিন্নভাবে নামাজের ওপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি বিচিত্ররূপে নামাজের প্রতি আহ্বান করেছেন। বিধানগতভাবে ফরজ নামাজ একা আদায় করার চেয়ে জামাতের সঙ্গে মসজিদে আদায় করা উত্তম, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জামাতে নামাজের ফজিলত একাকী নামাজের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি।’ -সহিহ বোখারি

নবী কারিম (সা.) সারা জীবন জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। এমনকি ইন্তেকালপূর্ব অসুস্থতার সময়ও জামাত ছাড়েননি। পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই জামাতে আদায় করা সুন্নতে মোয়াক্কাদা, যা ওয়াজিবের সঙ্গে তুলনীয়। প্রাসঙ্গিকভাবে মসজিদকে কেন্দ্র করে বিগত কয়েক সপ্তাহের লেখার সঙ্গে নামাজের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তাই নামাজের গুরুত্ব প্রসঙ্গে এই লেখার অবতারণা।

কোরআন মাজিদে নামাজের সুস্পষ্ট আদেশ বারবার বিভিন্নভাবে করা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত আদায় করো এবং রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ -সুরা বাকারা : ৪৩

অপর আয়াতে নবীজীকে লক্ষ করে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আমার বান্দাদের বলে দিন যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তারা নামাজ কায়েম রাখুক এবং আমার দেওয়া রিজিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করুক ওই দিন আসার আগে, যেদিন কোনো বেচাকেনা নেই এবং বন্ধুত্বও নেই।’ -সুরা ইবরাহিম : ৩১

বর্ণিত আয়াতে আল্লাহতায়ালা নবী কারিম (সা.)-এর মাধ্যমে তার বান্দাদের নামাজের আদেশ করেছেন। এ থেকে বোঝা যায়, নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কেয়ামতের কঠিন সময়ে তা উপকারে আসবে।

এখানে একটি কথা স্পষ্ট, নামাজের আদেশ করেছেন স্বয়ং আল্লাহ। আর আমরা জানি, আদেশমাত্রই গুরুত্বপূর্ণ। আদেশকারীর মর্যাদা এবং আদেশের ধরন ও অবস্থা অনুপাতে গুরুত্ব আরও বেশি হয়। আদেশকারী যত বড় হয় আদেশ তত বেশি গুরুত্ব বহন করে। এমনিভাবে যখন বারবার ও বিভিন্নভাবে আদেশ করা হয়, তখনো আদেশের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। নামাজের আদেশ যেহেতু স্বয়ং আল্লাহতায়ালা করেছেন, তিনি সবচেয়ে বড় এবং বিভিন্নরূপে করেছেন, সরাসরি বান্দাদের করেছেন, নবীর মাধ্যমে করেছেন, সরাসরি নবীকে করেছেন, নবীপতœীদের করেছেন, তাই নামাজের মর্যাদা ও গুরুত্ব বেশি। সেই আদেশকে উপেক্ষা করে, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সপ্তাহের একদিন জুমার নামাজ আদায় করে, আল্লাহর আদেশ কতটা পালন করা হচ্ছে- তা আলোচনার দাবি রাখে।

আমরা জানি, একমাত্র মুমিনই সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহর কাছে মর্যাদাশীল। আর কোরআন মাজিদের বহু জায়গায় মুমিনদের একটি গুণ এই উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা নামাজ কায়েম করে। এর মধ্য দিয়ে আল্লাহতায়ালা বস্তুত নামাজের ওপর গুরুত্বারোপ করছেন যে, ‘যদি মুমিন হও, তাহলে নামাজ কায়েম করো।’ যেমন আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের বন্ধু তো কেবল আল্লাহ, তার রাসুল ও মুমিনরা, যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত আদায় করে এবং তারা বিনয়ী।’ -সুরা মায়েদা : ৫৫

এখানে মুমিনদের বন্ধু কারা এ প্রসঙ্গে কেবল তিন শ্রেণির কথা উল্লেখ করা হয়েছে- ক. মহান আল্লাহ। খ. রাসুল। গ. মুমিনরা। তারপর মুমিনদের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমেই বলা হয়েছে, তারা নামাজ কায়েম করে। এর মাধ্যমে বুঝে আসে নামাজের গুরুত্ব কতখানি। এই বোধটা মুসলিমদের ভেতরে জাগ্রত না হওয়া গভীর দুঃখের ও বেদনার।

সফল মুমিনদের দ্বিতীয় গুণ হলো, তারা তাদের নামাজমূহের প্রতি যতœবান থাকে। এই যতেœর মধ্যে সময়মতো নামাজ পড়া, নিয়মিত নামাজ পড়া এবং নিয়মনীতি, হক ও আদবসমূহ লক্ষ করে নামাজ পড়া সবই শামিল।

অপর এক সুরায় আল্লাহতায়ালা নামাজিদের গুণাবলি সম্পর্কে বলেছেন, ‘যারা তাদের নামাজ আদায় করে নিয়মিত। এবং যাদের সম্পদে আছে নির্ধারিত হক, যাচক ও বঞ্চিতের জন্য। এবং যারা বিচার দিবসে বিশ্বাস রাখে। এবং যারা তাদের রবের শাস্তি সম্পর্কে ভীতসন্ত্রস্ত। নিশ্চয় তাদের রবের শাস্তি এমন নয় যে, তা থেকে নির্ভয় থাকা যায়। এবং যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, তাদের স্ত্রী বা তাদের মালিকানাভুক্ত দাসীদের ছাড়া। কেননা (এ ক্ষেত্রে) তারা নিন্দনীয় নয়। আর যারা এ ছাড়া (অন্যপথ) অন্বেষণ করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। এবং যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা আপন সাক্ষ্য যথাযথভাবে প্রদান করে। এবং যারা তাদের নামাজের প্রতি যত্নবান থাকে। তারা জান্নাতে থাকবে সম্মানজনকভাবে।’ -সুরা মাআরিজ : ২৩-৩৫

এখান থেকে আমরা প্রকৃত নামাজির পরিচয় জানতে পারলাম। প্রকৃত নামাজি হচ্ছে- যার মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলি রয়েছে, যেগুলোর শীর্ষে রয়েছে নিয়মিত এবং যত্নের সঙ্গে নামাজ পড়া।

আরেকটি বিষয় উল্লেখ করার মতো, সুরা মুমিনুনে বলা সফল মুমিনের সাতটি গুণের মধ্যে দুটি গুণই হচ্ছে- নামাজ সম্পর্কিত। এমনিভাবে সুরা মাআরিজে উল্লিখিত নামাজির ৯টি গুণের মধ্যে দুটি গুণই হচ্ছে- নামাজ সংক্রান্ত এবং উভয় সুরায় গুণগুলোর আলোচনা শুরু হয়েছে নামাজ দিয়ে এবং শেষও হয়েছে নামাজ দিয়েই। এ থেকেই অনুমেয়, নামাজ কত গুরুত্বপূর্ণ এবং ইমানের সঙ্গে এর কী গভীর সম্পর্ক! সেই নামাজ নিয়ে অলসতা ও উদাসীনতা যেমন কাম্য নয়, তেমনি ফরজ ইবাদত নামাজ ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর রহমত প্রত্যাশা ও ক্ষমা কামনা করা নিতান্তই বোকামি। মনে রাখতে হবে, নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বোত্তম ইবাদত। নামাজের প্রাণ হচ্ছে- আল্লাহর জিকির ও স্মরণ। এটা নামাজের অনন্য বৈশিষ্ট্য। আমাদের উচিত, এই ইবাদতটি গভীর মহব্বত ও মনোযোগের সঙ্গে আদায় করা।

লেখক: শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক

muftianaet@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION