সোমবার, ৩০ Jun ২০২৫, ০২:০৯ পূর্বাহ্ন
খেলাধুলা ডেস্ক:
চাপে পড়লেই কুপোকাত দক্ষিণ আফ্রিকা। সেঁটে যাওয়া চোকার্স তকমা কি এবার মুছে ফেলতে পারবে তারা? শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু, তারপর থেকে বলতে গেলে প্রত্যেক ম্যাচেই শিরদাঁড়া কাঁপিয়ে জিততে হয়েছে। বেশ কিছু ম্যাচে হারের শঙ্কায় পড়েও ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতে সেমিফাইনালে উঠেছে ভারতের পর দ্বিতীয় অপরাজিত দল হিসেবে। গ্রুপ পর্ব ও সুপার এইটে মিলে সাত ম্যাচের সবগুলো জিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তৃতীয়বার সেমিফাইনাল খেলতে যাচ্ছে প্রোটিয়ারা। দুই ফরম্যাটের বিশ্বকাপ মিলে সাতবার সেমিফাইনালে খেললেও ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ তারা, এবার কি পারবে সেই খরা কাটাতে?
দক্ষিণ আফ্রিকাকে এজন্য পার হতে হবে আফগানিস্তান বাধা, যারা এই বিশ্বকাপে চমকের পর চমক দেখিয়েছে। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারিয়েছে। বাংলাদেশকে মাত্র ১১৬ রানের টার্গেট দিয়েও দুর্দান্ত জয়ে প্রথমবার যে কোনও ফরম্যাটের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে আফগানরা। ২০ বছর আগে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল দিয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক ম্যাচ খেলা দলটির বদলে যাওয়ার চিত্র বিস্ময় জাগানিয়া।
২০০৪ সালে ১৫ দলের এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল ট্রফিতে খেলেছিল আফগানিস্তান। অভাবনীয় উত্থান দেখিয়ে এবার ২০ দলের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। মাত্র ২০ বছরেই তারা যা অর্জন করেছে, সেটা পেতে অনেক দলকেই হয়তো অর্ধশত বছর পার করতে হতো। দলটি এখন অনেক পরিণত। তাদের অধিনায়ক ও লেগস্পিনার রশিদ খান যে বিশ্বের সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাদের দ্বিতীয় স্পিনার নুর আহমেদ রশিদের বাঁহাতি সংস্করণ। ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ পাওয়ার প্লেতে প্রতিপক্ষের জন্য ত্রাস। টি-টোয়েন্টিতে পরবর্তী ট্রেন্ট বোল্ট ভাবা হচ্ছে ফজলহক ফারুকীকে। আফগানিস্তানের বোলিং কনসালট্যান্ট ও টি-টোয়েন্টি লিজেন্ড ডোয়াইন ব্রাভোর গ্রুমিংয়ে ধারালো হয়ে উঠেছেন নাভিন উল হক। গত সোমবার কিংসটাউনে বাংলাদেশকে হারানো একাদশের আটজনই সবশেষ আইপিএলে খেলেছেন।
দলে সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় মোহাম্মদ নবী। ২০০৪ সালে আফগানিস্তানের প্রথম আনুষ্ঠানিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলা একমাত্র সদস্য। ক্যারিয়ারে ৪৫ দলকে হারানোর অভিজ্ঞতা, এবার এই অলরাউন্ডার সেই খাতায় যোগ করতে চান দক্ষিণ আফ্রিকার নাম।
বোলিংয়ে আফগানিস্তানের গভীরতা কতটা, সেটা বলে দিবে এই পরিসংখ্যান- এই বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের (৫৭) চেয়ে বেশি উইকেট নিতে পারেনি আর কেউ এবং ৬.৭৫ ইকোনমি রেট, সুপার এইটে খেলা দলগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সেরা। ৬.১০ ইকোনমি রেট নিয়ে সবার সেরা প্রোটিয়ারা।
তবে আফগানিস্তানের ব্যাটিং গভীরতা কিছুটা দুশ্চিন্তার, বিশেষ করে মিডল অর্ডারে। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান চার ম্যাচে পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটি গড়েছেন। কিন্তু রান তাড়া করতে নেমে তাদের জুটি পাপুয়া নিউগিনি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের বিপক্ষে ছিল ৮, ০ ও ১৩।
সুতরাং আফগানিস্তানকে বড় ধাক্কা দিতে হলে ওপেনিং জুটি বিচ্ছিন্ন করতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। সেক্ষেত্রে ডানহাতি ব্যাটিং লাইন সমৃদ্ধ আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাদের প্রধান অস্ত্র বাঁহাতি স্পিনার কেশব মহারাজ। বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার তাবরাইজ শামসিও তার বৈচিত্রময় বোলিং দিয়ে আফগানদের জন্য বড় হুমকি হতে পারেন।
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনও বেশ শক্তিশালী। কুইন্টন ডি কক দারুণ ফর্মে আছেন। যদিও টপে রিজা হেনড্রিকস ভুগছেন। মিডল অর্ডারে এইডেন মারক্রাম, ট্রিস্টান স্টাবস ও আনরিখ ক্লাসেন আফগান স্পিনের বিপক্ষে পাল্টা জবাব দিবেন। ব্যাটিং লাইনে আছেন ফিনিশিংয়ে দক্ষ ডেভিড মিলার।
হাড্ডাহাড্ডি আরেকটি লড়াইয়ের অপেক্ষায় ক্রিকেট বিশ্ব। বহুবার চাপে ভেঙে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকা এবার কি পারবে তাদের ফাইনাল খরা কাটাতে? নাকি অব্যাহত থাকবে ইতিহাস গড়া আফগানিস্তানের স্বপ্নযাত্রা!
ভয়েস/আআ