মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় নিখোঁজের ৪দিন পর আরমানের লাশ উদ্ধার চকরিয়ায় পুকুরে গোসলে নেমে দুই বোনের মৃত্যু জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের কাজ শুরু করবে মঙ্গলবার, থাকবে এক মাস বাংলাদেশকে ২০০ একর জমি ফিরিয়ে দিচ্ছে ভারত আওয়ামী লীগ হাতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে ‍না পারলে , জনগণ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে না।: রিজভী কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর মিছিল ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ১ পেকুয়ায় লবণ ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা ছিনতাই উখিয়া ক্যাম্পে দুর্বৃত্তের গুলিতে ২ যবক নিহত মহেশখালীতে মাংসের দাম অতিরিক্ত রাখায় ৪ ব্যবসায়ীকে জরিমানা নায়িকারা ছোট কাপড় পরলে চলে, ঘরের বউদের চলে না : গোবিন্দের স্ত্রী

বৃষ্টির মৌসুমে বিশেষ আমল

মুহাম্মদ মঈন উদ্দীন সুমন:
পৃথিবীতে আল্লাহর অগণিত নেয়ামতের মধ্যে বৃষ্টি অন্যতম। ঋতুবৈচিত্র্যের এ দেশে রূপের পসরা সাজিয়ে ঋতুর পরে ঋতু আসে। কখনো শীতের হিম হিম পরশ আর কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে চারদিক। কখনো চৈতালী-বৈশাখী রোদ, আর ঝিঁঝিঁ পোকার গুঞ্জনে মুখরিত হয় সারাবেলা। কখনো আবার কাশফুলের শুভ্রতার সঙ্গে একাকার হয়ে মিশে থাকে শরতের সাদা মেঘ। আবার কখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে আসে বর্ষা। গ্রীষ্মের রোদে যখন প্রকৃতি শুষ্ক ও মৃতপ্রায়; তাপদাহে যখন মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত, তখনই আসমান থেকে দয়াময় আল্লাহর রহমতের ধারা নামতে শুরু করে।

মানব জীবনে বৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা এবং বৃষ্টির এমন গুরুত্বের কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বৃষ্টি-সংক্রান্ত বেশ কিছু শিষ্টাচার এবং আমল শিখিয়েছেন, যা আমরা তার সুন্নাহ থেকে জানতে পারি। সেসব আমল তুলে ধরা হলো।

ঝড়ো বাতাসের সময় আমল : হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হতো এবং ঝড়ো বাতাস বইত তখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেহারায় পেরেশানির ভাব ফুটে উঠত। এ অবস্থায় তিনি এদিক-সেদিক পায়চারি করতে থাকতেন এবং এ দোয়া পড়তে থাকতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা, ওয়া খাইরা মা ফিহা, ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউজু বিকা মিন শাররিহা, ওয়া শাররি মা ফিহা, ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি।’ অতঃপর যখন বৃষ্টি হতো, তখন তিনি শান্ত হতেন।’ আয়েশা (রা.) আরও বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে, লোকজন মেঘ দেখলে বৃষ্টির আশায় আনন্দিত হয়ে থাকে, আর আপনি এতে পেরেশান হয়ে থাকেন?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমি এ ভেবে শঙ্কিত হই যে তা আমার উম্মতের ওপর আজাব হিসেবে পতিত হয় কি না। কেননা পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপর এ পদ্ধতিতে আজাব পতিত হয়েছিল।’ (সহিহ মুসলিম)

বজ্রপাতের আওয়াজ শুনলে করণীয় : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন বজ্রপাতের আওয়াজ শুনতেন, তখন এ দোয়া পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বিগজবিকা, ওয়ালা তুহলিকনা বিআজাবিকা, ওয়া আফিনা কবলা জালিকা।’ অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি আমাকে আপনার গজব দিয়ে হত্যা করবেন না এবং আপনার আজাব দিয়ে ধ্বংস করবেন না। বরং এসবের আগেই আমাকে পরিত্রাণ দিন। (জামে তিরমিজি)

বৃষ্টিতে বরকত লাভের দোয়া : বৃষ্টি দেখে দোয়া পড়া সুন্নত। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টি হতে দেখলে বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ছাইয়িবান নাফিয়া’, অর্থাৎ হে আল্লাহ, এমন বৃষ্টি আমাদের ওপর বর্ষণ করুন যাতে ঢল, ধস বা আজাবের মতো কোনো অমঙ্গল নিহিত নেই। (সহিহ বুখারি)

হজরত ইবনে সামুরাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টির সময় এ দোয়া পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা দা’ ফি আরদিনা বারকাতাহা ওয়া জিনাতাহা ওয়া সাকানাহা’, অর্থাৎ হে আল্লাহ, আপনি আমাদের জমিনে এর বরকত, স্বচ্ছতা ও উপকার দান করুন। (আল মুজামুল কাবির)

অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির সময়ের দোয়া : হজরত আনাস (রা.) বলেন, একদা জুমার দিন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) খুতবা দেওয়া অবস্থায় জনৈক সাহাবি মসজিদে প্রবেশ করে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! জীবজন্তু মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে, পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে, মহান আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য বৃষ্টি প্রার্থনা করুন। তৎক্ষণাৎ হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দুই হাত সম্প্রসারিত করে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ, আমাদের বৃষ্টি দান করুন। হে আল্লাহ, আমাদের বৃষ্টি দান করুন। হে আল্লাহ, আমাদের বৃষ্টি দান করুন। আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহর শপথ! তখন আকাশে বিন্দুমাত্র মেঘের ছোঁয়াও ছিল না, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দোয়ার পর দিগন্তে মেঘের উদ্ভাস হয়, কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো আকাশ ছেয়ে ফেলে, অতঃপর মুষলধারে বৃষ্টি আরম্ভ হয়। আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহর শপথ! পরবর্তী ছয় দিন ধরে আমরা সূর্য দেখিনি। সপ্তাহান্তে পরবর্তী জুমায় ফের ওই ব্যক্তি যখন মসজিদে প্রবেশ করে তখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) খুতবারত অবস্থায়, ওই ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ধন-সম্পদ সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পানিতে পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে, মহান আল্লাহর কাছে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার প্রার্থনা করুন। আনাস (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দুই হাত উঁচিয়ে দোয়া করলেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা’, অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের ওপর থেকে আশপাশের অঞ্চলে সরিয়ে দিন, পাহাড়-মরু, খাল-বিল ও বনাঞ্চলের দিকে সরিয়ে নিনি। বর্ণনাকারী বলেন, তখনই বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর আমরা নামাজের পর রোদের মধ্যে বের হই। (সহিহ বুখারি)

বৃষ্টির পানি স্পর্শ করা : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টির পানি খুবই পছন্দ করতেন। তাই সুন্নত হলো বৃষ্টির পানি স্পর্শ করা। হজরত আনাস (রা.) বলেন, একদা আমরা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। সে সময় একবার বৃষ্টি হচ্ছিল। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তার গায়ের পোশাক কিছুটা সরিয়ে নিলেন যাতে তার গায়ে বৃষ্টি পড়ে। (সহিহ মুসলিম)

বৃষ্টি চলাকালে দোয়া করা : বৃষ্টি চলমান সময়ে দোয়া কবুল হয়। তাই এ সময়টি দোয়ার জন্য লুফে নেওয়া সুন্নত। হজরত সাহল বিন সাদ (রা.) বলেন, দুই সময়ের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না। আজানের সময়ের দোয়া এবং রণাঙ্গনে শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার সময়ের দোয়া। অন্য বর্ণনা মতে, বৃষ্টির সময়ের দোয়া। (সুনানে আবু দাউদ)

বৃষ্টির পরে দোয়া পড়া : জায়েদ ইবনে খালেদ জুহানি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হুদায়বিয়ায় রাতে বৃষ্টির পর আমাদের নিয়ে নামাজ পড়লেন। নামাজ শেষে তিনি লোকজনের মুখোমুখি হলেন। তিনি বললেন, তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন? তারা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। তিনি বলেছেন, আমার বান্দাদের কেউ আমার প্রতি ইমান এনে আর কেউ কেউ আমাকে অস্বীকার করে প্রভাতে উপনীত হয়েছে। যে বলেছে, ‘বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহি’ তথা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় আমরা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি। ফলে সে আমার প্রতি ইমান আর তারকার প্রতি কুফরি দেখিয়েছে। আর যে বলেছে, অমুক অমুক তারকার কারণে, সে আমার প্রতি অস্বীকারকারী এবং তারকার প্রতি ইমানদার। (সহিহ বুখারি)

বৃষ্টির প্রার্থনার নামাজ আদায় : অনাবৃষ্টি দেখা দিলে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদের নিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনার দুই রাকাত নামাজ খোলা ময়দানে গিয়ে আদায় করতেন। নামাজ শেষে খুতবা দিতেন। মুসলমানদের নসিহত করতেন। এরপর দোয়া করতেন, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং বৃষ্টি চাইতেন। এরপর তিনি তার পরিধেয় পোশাক (পাগড়ি বা জামা) উল্টিয়ে পরতেন। সহিহ বুখারিতে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইসতিসকার (বৃষ্টি প্রার্থনা) নামাজ আদায় করেছেন দুই রাকাত, এরপর তিনি তার চাদর উল্টিয়ে পরেছেন। (সহিহ বুখারি)

এই পৃথিবীর সৃষ্টি, রাত-দিনের আবর্তন এবং মৌসুমের পরিবর্তন মহান আল্লাহর সুমহান ক্ষমতার নিদর্শন। মৌসুমের পরিবর্তন দ্বারা তিনি বান্দাদের পরীক্ষা করেন যে, বান্দা সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহকে স্মরণ করে কি না এবং তার নির্দেশিত পথে চলে কি না। আর হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও উম্মতকে এই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন। প্রত্যেক ইমানদারের কর্তব্য হলো জীবনের সব অনুষঙ্গে আল্লাহর রাসুলের আদর্শ তথা সুন্নতের অনুসরণ করা। হজরত রাসুল (সা.)-এর অনুসরণেই নিহিত রয়েছে মানবজাতির ইহকালীন কল্যাণ এবং পরকালীন মুক্তি। তাই বৃষ্টিকালে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা এবং এ-সংক্রান্ত সুন্নতগুলো পালন করার চেষ্টা করা বাঞ্ছনীয়।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION