শুক্রবার, ২৭ Jun ২০২৫, ০৯:২০ অপরাহ্ন
বিবিসি বাংলা:
গাজায় এগারো সপ্তাহের অবরোধের পর সীমান্ত অতিক্রম করে ত্রাণের লরি আসলেও এখনো কোন সহায়তা বিতরণ করা যায়নি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ইসরায়েলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার গাজায় আটা, শিশু খাদ্য এবং ওষুধসহ ত্রাণের ৯৩টি ট্রাক প্রবেশ করেছে।
কিন্তু জাতিসংঘ জানিয়েছে, কেরেম শালোম ক্রসিংয়ের ফিলিস্তিনি অংশে ত্রাণের ট্রাক পৌঁছালেও এখনও পর্যন্ত কোনও ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, ” দলটি ওই অঞ্চলে প্রবেশ করতে ইসরায়েলের অনুমতির জন্য কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তারা আমাদের গুদামে সেই সরবরাহগুলো আনতে সক্ষম হয়নি।”
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা আসন্ন দুর্ভিক্ষের বিষয়ে যখন সতর্ক করেছেন তখন রোববার ইসরায়েল গাজায় ” প্রাথমিকভাবে একটা পরিমাণের খাদ্য ” প্রবেশের অনুমতি দিতে রাজী হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের “নৈতিকভাবে অযৌক্তিক” সামরিক অভিযানের কারণে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য।
প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার এই পরিস্থিতিকে ” অসহনীয় ” বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে, ইইউর পররাষ্ট্র নীতি প্রধান কাজা কালাস বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের আলোকে তারা তাদের সাথে করা বাণিজ্য চুক্তিটি পর্যালোচনা করবে।
ত্রাণ অভিযানটিকে ‘জটিল’ করে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মি. ডুজারিক।
কারণ ইসরায়েল জাতিসংঘকে ” কেরেম শালোম ক্রসিংয়ের ফিলিস্তিনের দিকে সরবরাহ বন্ধ করতে এবং গাজা উপত্যকার ভেতরে আমাদের দলগুলোর প্রবেশ নিশ্চিত করার পরে আলাদাভাবে সেগুলো আবার লোড করার” দাবি জানিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন মি. ডুজারিক।
এই ত্রাণ সরবরাহ আসাকে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি ছিল বলে উল্লেখ করেছেন ডুজারিক। তিনি যদিও এটিকে “প্রয়োজনের তুলনায় সমুদ্রে একটি ফোঁটা” হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
জাতিসংঘের সংস্থাগুলো অনুমান করছে গাজার দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকট মোকাবেলা শুরু করতে প্রতিদিন ছয়শো ট্রাক সহায়তা প্রয়োজন।
এর আগে, জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বিবিসিকে বলেছিলেন, ইসরায়েল যদি অবিলম্বে ত্রাণ সহায়তা ঢুকতে না দেয় তবে গাজায় হাজার হাজার শিশু মারা যেতে পারে।
বিবিসির টুডে’র এক অনুষ্ঠানে মিঃ ফ্লেচার বলেন, ” আমরা যদি তাদের কাছে পৌঁছাতে না পারি, তাহলে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১৪ হাজার শিশু মারা যাবে।”
এই পরিসংখ্যানের বিষয়ে কিভাবে নিশ্চিত হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিকিৎসা কেন্দ্র এবং স্কুলগুলিতে ‘ শক্তিশালী দল ‘ কাজ করছে। তবে বিস্তারিত আর কোন তথ্য দেননি তিনি।
পরে বিবিসি এই পরিসংখ্যানের বিষয়টি সম্পর্কে আরও সুনিশ্চিত হতে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয়ের কাছে জানতে চেয়েছিল।
সংস্থাটি বলেছে, “আমরা গাজায় তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে এমন আনুমানিক ১৪ হাজার শিশুকে বাঁচাতে সরবরাহ পৌঁছানোর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরছি। আইপিসি যেটার বিষয়ে সতর্ক করেছে। যত দ্রুত সম্ভব আমাদের ত্রাণ সরবরাহ পৌঁছাতে হবে, ঠিকভাবে বললে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই।”
এই প্রতিবেদনে ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে ছয় থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টির শিকারের ১৪ হাজার একশটি গুরুতর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করেছে আইপিসি।
এই ঘটনা ৪৮ ঘণ্টায় নয় বরং প্রায় এক বছরের মধ্যে ঘটতে পারে বলে আইপিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এই পরিসংখ্যানের গুরুত্ব বোঝাতে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউএনওসিএইচএ’ র মুখপাত্র জেন্স লারকে বলেছেন, ” আপাতত আমি কেবল এটুকুই বলতে চাই যে এমন কিছু শিশুর কথা আমরা জানি যাদের জীবন রক্ষাকারী এই সাপ্লিমেন্টগুলোর জরুরি প্রয়োজন রয়েছে কারণ তাদের মায়েরা তাদের নিজে খাওয়াতে পারছে না।”
তিনি আরও বলেন, ” যদি তারা এগুলো না পায় তবে মারাত্মক বিপদে পড়বে।”
গত সপ্তাহে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ১১ সপ্তাহে অপুষ্টিতে ভুগে ৫৭ জন শিশু মারা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মঙ্গলবার গাজায় কিছু সহায়তা পৌঁছাতে ইসরায়েলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটিকে তিনি বলেছেন, ” আমরা আনন্দিত যে ত্রাণ সহায়তা আবার আসতে শুরু করেছে।”
গাজায় যে পরিমাণ ত্রাণের ট্রাকের অনুমতি দেয়া হয়েছে তা খুবই কম, একজন ডেমোক্র্যাটের এমন প্রশ্নের জবাবে মি. রুবিও বলেন, “এটি যে পর্যাপ্ত পরিমাণের নয় আপনার এমন বক্তব্য আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত যে নেওয়া হয়েছে তা দেখে আমরা খুশি হয়েছি।”
সোমবার যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং কানাডার নেতারা একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েলের সরকারকে ” তাদের সামরিক অভিযান বন্ধ ” এবং ” অবিলম্বে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার” আহ্বান জানিয়েছেন।
আজকের ঘোষণার অংশ হিসাবে, যুক্তরাজ্য বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী এবং তাদের সাথে সম্পর্কিত সম্প্রদায়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর হামাসের সীমান্ত হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় একটি সামরিক অভিযান শুরু করে।
এ হামলায় প্রায় বারশো জন নিহত হয়েছিল এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, হামলা শুরু পর থেকে গাজায় অন্তত ৫৩ হাজার ৪৭৫ জন নিহত হয়েছে।
ভয়েস/আআ