সোমবার, ৩০ Jun ২০২৫, ০৯:৪৫ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

সামরিক বাহিনীর বহিস্কৃত সৈনিক সহ ৫জন গ্রেপ্তার: র‌্যাবের পোষাক সহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার

ভয়েস প্রতিবেদক:

কক্সবাজারে র‌্যাবের ১৩ দিনের শ^াসরুদ্ধকর অভিযানে একটি সামরিক বাহিনীর বহিস্কৃত সৈনিক সহ ৫জন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১৫ সদস্যরা। এসময় র‌্যাবের পোষাক ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে র‌্যাব-১৫ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল হাসান।

কামরুল হাসান জানান, দীর্ঘদিন ধরে টেকনাফ ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ঘিরে একটি সন্ত্রাসী অপহরণ চক্র বিভিন্নজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে আসছিল। এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব সদস্যরা কক্সবাজারের টেকনাফের পাহাড় কেন্দ্রিক অপহরণ চক্রের মুলহোতা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবি হোসেন ও স্থানীয় ডাকাত চক্রের প্রধান শাহ আলমকে ধরতে মাঠে নামে। একই সাথে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী থেকে ২০১৯ সালে বহিষ্কৃত সৈনিক মো: সুমন মুন্সী সহ একটি চক্রে র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর প্রকাশ্যে আসে চক্রের প্রধান দুই জনের নাম। এর থেকে র‌্যাব ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে গত ১৩ দিনে সেনা বাহিনীর ওই বহিষ্কৃত সৈনিক সুমন সহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। একই সঙ্গে র‌্যাবের পোষাক সহ বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করেছে।

র‌্যাবের ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসাবে সর্বশেষ রবিবার কক্সবাজারের উখিয়ার মরিচ্যা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে সন্ত্রাসী ফারুককে গ্রেপ্তারের পর সোমবার এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃত মো. জায়েদ হোসেন ফারুক (২২) উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের মরিচ্যা এলাকার আবদুস শুক্কুরের ছেলে।

অভিযানে অপহরণে ব্যবহৃত ৪টি র‌্যাবের পোষাক, ১টি র‌্যাবের ফেইক আইডি কার্ড, ১টি হ্যান্ডকাপ, ১টি বিদেশী পিস্তল, ২ টি দেশী অস্ত্র, ১০ রাউন্ড তাজা এ্যমুনেশন, ১১ রাউন্ড এমটি কার্টিজ ও ১টি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে বহিষ্কৃত সৈনিক মো. সুমন মুন্সী ছাড়াও আফ্রিদি, আব্দুল গফুর, শিকদার ডাকাতকে অস্ত্র সহ গ্রেপ্তার করেছিল।

সংবাদ সম্মেলনে কামরুল হাসান আরো জানান, গত ১১ জুন রাত ১১ টায় ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মো. রহিমুল্লাহর ছেলে মো. হাফিজ উল্লাহকে র‌্যাব পরিচয়ে অপহরন করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। রোহিঙ্গা এনায়েত উল্লাহ ও নবী হোসেনের সহয়তায় ভিকটিমকে নিজ বসতঘর হতে ডেকে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী গহীন পাহাড়ে নিয়ে যায় চক্রটি। পরে অপহৃতের পরিবারের কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপন চান অপহরনকারীরা। এই খবর পেয়ে র‌্যাব-১৫ ভিকটিমের পরিবারের সাথে যোগাযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৩ জুন বিকালে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের একটি চৌকসদল রঙ্গিখালীতে অপহরণের অন্যতম প্রধান হোতা ডাকাত সর্দার শাহ আলমের বাড়িতে হানা দিয়ে আফ্রিদি ও আব্দুল গফুর নামে দুজন সন্দেহভাজনকে আটক করতে সক্ষম হয়। এর পর শনিবার বিকেলে উখিয়ার মরিচ্যা বাজার থেকে বরখাস্ত সৈনিক মোঃ সুমন মুন্সিকে গ্রেপ্তার করে। এরপর সুমনের মাধ্যমে অপহরণকারী ডাকাত শাহ আলম, সন্ত্রাসী রাকিব এবং সন্ত্রাসী শিকদারকে ভিকটিম হাফিজ উল্লাহকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বার্তা পাঠানো হয়। আহবানে সাড়া দেয়নি চক্রটি। এরই প্রেক্ষিতে ভিকটিমকে উদ্ধারের জন্য ১৫ জুন র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, এপিবিএন ও বনবিভাগের ২৫৬ জন জনবল নিয়ে ভিকটিমকে আটকে রাখার সম্ভাব্য গহীন অরণ্যে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে। এক পর্যায়ে অপহরণের ৭২ ঘন্টা পরে ভিকটিম হাফিজ উল্লাহকে উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে ১টি দেশীয় অস্ত্র, ৩ রাউন্ড এ্যমুনেশনসহ র‌্যাবের ইউনিফর্ম ও ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে।

এঘটনায় র‌্যাব বাদি হয়ে টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করা হয় জানিয়ে লে. কর্নেল কামলুল হাসান বলেন, এ ঘটনায় জড়িতে ধরতে র‌্যাব ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে। অভিযানে অংশ হিসেবে অপহরণের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত কুখ্যাত ডাকাত শিকদারকে রবিবার গ্রেপ্তার করা হয়। শিকদারের দেয়া তথ্য মতে সন্ত্রাসী ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারি যে, বরখাস্তকৃত সৈনিক সুমন কয়েক বছর আগে মিরপুরের শাহ আলী মার্কেট থেকে র‌্যাবের ইউনিফর্মগুলো তৈরী করেছে। সন্ত্রাসীরা বর্ণিত ইউনিফর্মগুলো ব্যবহার করে নানা সময়ে র‌্যাবের পরিচয়ে অপহরণ করে আসছিল। রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত পোশাক ব্যক্তিগতভাবে তৈরী এবং ব্যবহার করা গুরুতর অপরাধ। তিনি দেশের সকল টেইলার্স ও পোশাক প্রস্তুতকারী কোম্পানীদের সতর্ক করে এ ধরণের অপরাধ থেকে বিরত থাকতে আহবান জানান এবং অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো জানান, হাফিজুল্লাহ অপহরণের সাথে সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসীদেরকে গ্রপ্তার করতে পারলেও এখনো রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন ও কুখ্যাত ডাকাত শাহ আলমসহ কয়েকজন ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। পলাতক সন্ত্রাসীদের ধরার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

র‌্যাব ও পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, টেকনাফ উপজেলার পাহাড় কেন্দ্রিক অপহরণ চক্রের আলোচিত নাম আবুল আলম ও শাহ আলম দুই সহোদর। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালি এলাকার গাজীপাড়া গ্রামের আবদুল মজিদ প্রকাশ ভোলাইয়া বদ্দ্যের ছেলে দুই জন। যার মধ্যে আবুল আলম (৪২) এর বিরুদ্ধে অস্ত্র, অপহরণ, মানবপাচার মাদক সহ নানা আইনে রয়েছে ৩০টির বেশি মামলা। শাহ আলম (৩৬) এর বিরুদ্ধে একই ধরনের অপরাধের ২৮টির বেশি মামলা রয়েছে। তাঁরা দুই ভাই দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে টেকনাফের পাহাড় কেন্দ্রিক একটি বাহিনী পরিচালনা করে ডাকাতি, অপহরণ সহ মুক্তিপণ আদায়, নির্যাতন সহ নানা অপরাধ করে আসছে। তাদের সাথে রয়েছে নবি হোসেন সহ চিহ্নিত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী এবং স্থানীয় অপরাধিরা।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য বলছে, এ নিয়ে গত সাড়ে ১৭ মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৫৬ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION