শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

মসজিদ হোক শিশুবান্ধব

ইকরামুল ইসলাম:
মসজিদ মহান আল্লাহর ঘর। ভূপৃষ্ঠের উৎকৃষ্টতম জায়গা। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ ও কান্নায় সর্বদা মুখরিত থাকে পবিত্র এ স্থান। পবিত্র কোরআন-হাদিসে আল্লাহর ঘর মসজিদ নির্মাণ, তত্ত্বাবধান, রক্ষণাবেক্ষণ ও আবাদ করার অনেক গুরুত্ব ও ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর মসজিদ তো আবাদ করে তারাই, যারা আল্লাহ ও পরকালে ইমান এনেছে। যারা নামাজ কায়েম করে ও জাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। সুতরাং আশা করা যায়- তারা সঠিক পথ অবলম্বনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ -সুরা তওবা : ১৮

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখনই কোনো সম্প্রদায় আল্লাহর ঘরসমূহের কোনো এক ঘরে একত্র হয়ে আল্লাহর কিতাব (কোরআন) পাঠ করে এবং তা নিয়ে পরস্পরের মধ্যে অধ্যয়ন করে, তখন তাদের ওপর (আল্লাহর পক্ষ থেকে) অবতীর্ণ হয় প্রশান্তি, রহমত তাদের আচ্ছাদিত করে এবং ফেরেশতারা তাদের পরিবেষ্টন করে রাখেন। স্বয়ং আল্লাহ তার নিকটস্থ ফেরেশতাদের কাছে তাদের কথা আলোচনা করেন।’ -সহিহ মুসলিম : ৭০২৮

ইসলামি তাহজিব-তমদ্দুন, সংস্কৃতি ও সভ্যতা সম্প্রসারণ এবং সুশৃঙ্খল দেশ, সুষ্ঠু সমাজ, সুনাগরিক, সামাজিক সম্প্রীতি, আদর্শ ও উন্নত প্রজন্ম গড়তে মসজিদের ভূমিকা অপরিসীম। আদর্শবান শিশু আদর্শ, উন্নত ও সমৃদ্ধ সমাজ ও দেশ গড়ার অন্যতম কারিগর। ইসলামি রীতিনীতি, কৃষ্টি-কালচার ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিতে এবং সুনাগরিক, সৎ ও আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শিশুদের মসজিদমুখী করা একান্ত আবশ্যক।

মসজিদমুখী প্রজন্ম গড়তে এবং শিশুদের পদচারণায় মসজিদ মুখরিত রাখতে আমাদের হজরত রাসুলুল্লাহর (সা.) জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। মসজিদ ও নামাজে শিশুদের সঙ্গে তার আচরণ কেমন ছিল, তা জানতে হবে। হজরত কাতাদা (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের মধ্যে এলেন। হজরত উমামা বিনতে আবুল আস (হজরত জয়নব (রা.)-এর মেয়ে) তখন তার কাঁধের ওপর। এই অবস্থায় তিনি নামাজ আরম্ভ করলেন। তিনি রুকুতে গেলে তাকে নামিয়ে রাখতেন, আবার উঠে দাঁড়ানোর সময় তাকে তুলে নিতেন।’ -সহিহ বোখারি : ৫৯৯৬

হজরত শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন এশার নামাজে সেজদারত অবস্থায় হজরত রাসুলুল্লাহর (সা.) নাতি হজরত হাসান (রা.) ও হজরত হোসাইন (রা.) এসে তার পিঠে চড়ে বসে। কিন্তু তারা নেমে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি নিজে তাদের সরাননি, ফলে সেজদা দীর্ঘ করেন। নামাজ শেষে তার কাছে দীর্ঘ সেজদার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার নাতিরা আমার পিঠে চড়ে বসেছিল। আমি তাদের বিরক্ত করতে চাইনি।’ -সুনানে নাসায়ি : ১১৪১

ইসলামি স্কলাররা বলেন, নবীযুগে শিশুরা মসজিদে আসত, সেখানে তারা খেলত ও উল্লাস করত এবং নবী কারিম (সা.) তাদের সঙ্গে শিশুসুলভ ও কোমল আচরণ করতেন। সর্বদা তাদের মসজিদের আসার প্রতি আশান্বিত থাকতেন ও গুরুত্ব দিতেন। কখনো তাদের প্রতি বিরূপ ও বিরক্তিভাব প্রকাশ করতেন না। হাদিসের উপরোক্ত বর্ণনা তারই প্রমাণ বহন করে।

শিশুদের মসজিদমুখী করতে অভিভাবককে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ রাখতে হবে সাত বছর বয়সে শিশুদের নামাজসহ অন্যন্য ধর্মীয় অনুশাসন পালনের প্রাথমিক নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। সুতরাং তাদের বয়স যখন সাত অথবা এর কাছাকাছি পৌঁছবে, তখন তাদের মসজিদে আনার কথা ভাবতে হবে। মসজিদে আনার আগে তাদের মসজিদে প্রবেশ-প্রত্যাগমনের দোয়াসহ মসজিদের আদবগুলো শেখানো। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুন্নাহসম্মত পোশাক পরিয়ে মসজিদে আনা। মসজিদে এনে যথাসম্ভব তাদের নিজের সঙ্গে রাখা। মসজিদে আসার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উষ্ণ প্রশংসার সঙ্গে সঙ্গে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করা।

এ কথা তিক্ত হলেও সত্য, গ্রাম-শহর সর্বত্র মসজিদগুলো দিন দিন দিবসকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। শুক্রবারের জুমা ছাড়া মসজিদে উল্লেখযোগ্য মুসল্লির দেখা মেলে না। মুসলিম সমাজের জন্য এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও উদ্বেগের বিষয়। মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে শিশুসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মসজিদমুখী করতে নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া দরকার। এ ব্যাপারে মসজিদ কমিটি ও সাধারণ মুসল্লিদের জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো একান্ত লক্ষণীয়।

সাধারণত শিশুরা আনন্দপ্রবণ ও দুরন্ত প্রকৃতির হয়। এ জন্য মসজিদে তাদের দুরন্তপনা ও দুষ্টুমির বিষয়টি সহনশীলতার সঙ্গে নেওয়া। তাদের সঙ্গে এমন কোনো আচরণ না করা, যাতে তারা মসজিদে আসতে নিরুৎসাহিত হয়। মসজিদ ‘শিশুবান্ধব পরিবেশ’ গড়ে তোলার কথা ভাবা, মসজিদের সঙ্গে শিশুদের সম্পর্ক ধরে রাখতে ও সুদৃঢ় করতে মসজিদকেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কারের আয়োজন করা যেতে পারে।

মনে রাখতে হবে- কঠোরতা নয়, সহজতা; দূরে ঠেলা নয়, কাছে টানা; বাধা দেওয়া নয়, সুযোগ দেওয়া; অবহেলা নয়, মূল্যায়ন করা; নেতিবাচক নয়, ইতিবাচক মনোভাবই আমাদের আদর্শ সমাজ, উন্নত জাতি ও সমৃদ্ধ দেশ উপহার দিতে পারে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(হে নবী,) তুমি যদি কঠিন হৃদয় ও কর্কশভাষী হতে, তাহলে তারা সবাই তোমাকে ছেড়ে চলে যেত।’ -সুরা আলে ইমরান : ১৫৯

পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে নবী,) ভালো ও মন্দ কখনো সমান হতে পারে না। তুমি মন্দকে প্রতিহত করো এমন পন্থায়, যা হবে উৎকৃষ্ট। ফলে যার ও তোমার মধ্যে শত্রুতা ছিল, সে সহসাই হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।’ -সুরা হামিম সাজদা : ৩৪

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION