বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫৮ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

করোনাকালে রোজাদারের কর্তব্য

শাহীন হাসনাত:

পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক খবর বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। কোনো কোনো দেশে করোনার বিষয়ে সুসংবাদ এলেও বাংলাদেশে যেন কিছুতেই এ সম্পর্কে কোনো সুসংবাদ পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মাঝে মুসলমানরা পালন করছেন রমজানের ফরজ রোজা। রমজান মাসের অন্যতম নেয়ামত হচ্ছে গোনাহ মাফ ও আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্তি।

সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মসমালোচনা ও আত্মোপলব্ধিতে মানুষ যখন পৌঁছাতে সক্ষম হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা তার দোয়া কবুল করেন ও গোনাহ মাফ করে দেন। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা (মাহে রমজানে) দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে আসেন এবং ডেকে বলেন, কে আছে এমন যে আমার কাছে নিজের গোনাহ মাফ চাইবে আর আমি মাফ করে দেব।’ সহিহ বোখারি ও মুসলিম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করে, (তাদের জানিয়ে দাও) আমি তো নিকটেই। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে (দোয়া করে) আমি তার আহ্বানে সাড়া দিই (দোয়া কবুল করি)। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার ওপর ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।’ সুরা আল বাকারা : ১৮৬

দোয়া ও মোনাজাত হচ্ছে মুমিনের প্রধান হাতিয়ার। দুনিয়া ও আখেরাতের নানা সংকট থেকে মুক্তির জন্য এ মোবারক মাসে আল্লাহর দরবারে খাস দিলে দোয়া করলে আমাদের জীবনে কামিয়াবির পথ রচিত হবে। নিজেদের নাজাতের দোয়া, রোগ মুক্তির দোয়া, কামিয়াবির দোয়া, পেরেশানি থেকে মুক্তির দোয়াসহ সামষ্টিক কল্যাণ, জাতি, দেশ ও উম্মাহর উত্তরণ এবং সমৃদ্ধির দোয়া আমরা রমজানের সময় বেশি বেশি করতে পারি। হাদিস শরিফে দোয়াকে বলা হয়েছে, ‘ইবাদতের সারবত্তা।’ অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে দোয়া অপেক্ষা উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কোনো বস্তু নেই।’

আরবি ‘দোয়া’ শব্দের অর্থ প্রার্থনা করা, আহ্বান করা, কোনো কিছু পাওয়ার জন্য আকুতি-মিনতি করা প্রভৃতি। দোয়া হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে বান্দার কথোপকথনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালার কাছে পাপমুক্তির জন্য এমনভাবে দোয়া করতে হবে, যেন নিজেদের মন ও হৃদয় পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। দোয়ার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর ঘনিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে ও তার উষ্ণ পরশে ধন্য হতে পারে। হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সিজদায় বান্দা তার প্রভুর অধিক নিকটবর্তী হয়ে থাকে, তাই তোমরা অধিক দোয়া করো।’ পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে পাপমুক্তির জন্য দোয়া কীভাবে করতে হবে, এর পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন ইহকাল ও পরকালের সফলতার জন্য কীভাবে দোয়া করতে হবে এ মর্মে তিনি শিক্ষা দিয়েছেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে দুনিয়া এবং আখেরাত উভয়ের মধ্যে সফলতা দান করো এবং আমাকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি দাও।’ অন্যত্র দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন এভাবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার নিজের ওপর অত্যাচার করেছি, এখন যদি তুমি আমাকে মাফ না করো এবং আমার ওপর দয়া না করো; তাহলে নিশ্চয়ই আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’

দোয়ার মধ্যে মানুষের ইহকালীন ও পারলৌকিক সফলতা নিহিত। আল্লাহ তায়ালা ওই মুহূর্তটিকে অধিক পছন্দ করেন যখন বান্দা মানবসভ্যতার চরম বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ ও সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে কায়মনোবাক্যে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে, তার কাছে মাগফিরাত ও নাজাত কামনা করে। করোনার কারণে ঘরবন্দি অবস্থায় রমজান মাসে রাত্রি জাগরণ করে তারাবি ও তাহাজ্জুদ নামাজে দাঁড়িয়ে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা, আত্মসমালোচনা ও ক্ষমাপ্রার্থনা করা প্রভৃতি ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকার চেষ্টা করা উচিত। এটা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। রমজান মাস ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে দোয়া কবুলের এক সুবর্ণ সময়। এ সময়কে আল্লাহ তায়ালা রোজাদারদের গোনাহ থেকে মুক্ত হয়ে নতুন জীবন লাভ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন।

রোজাদার দিনে রোজা রেখে রাত জেগে জিকির-আসকার, কোরআন তেলাওয়াত, তারাবি ও তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের সাধনা করে। রোজার মাধ্যমে রোজাদার নিজেকে পুরস্কার, সম্মান, দয়া, অনুগ্রহসহ আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের উপযুক্ত করে তোলেন। একপর্যায়ে রোজাদার আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে গণ্য হন। তাই রোজাদার মাহে রমজানে দোয়া ও ইস্তেগফার করে আল্লাহর কাছে যা চান আল্লাহ তার সেই প্রার্থনা কবুল করেন। হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ধরনের লোকের দোয়া কখনো ফেরত দেওয়া হয় না। ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া, জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের দোয়া, বাড়িতে ফিরে না আসা পর্যন্ত মুসাফিরের দোয়া।’ সুনানে তিরমিজি সুতরাং চলতি রমজানে আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া-মোনাজাত বেশি বেশি করতে হবে। তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে নিজের জীবনকে পাপমুক্ত করার জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতে হবে। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, আত্মীয়-স্বজনের জন্য, সমাজের জন্য, দেশের জন্য, মুসলমানদের জন্য, সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য বেশি বেশি দোয়া করতে হবে; বিশেষ করে চলতি রমজানে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে একান্ত ক্ষমাপ্রার্থনা হোক আমাদের প্রধান কাজ।

লেখক : মুফতি ও ইসলামবিষয়ক লেখক।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION