বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই অধিক সংক্রমণঝুঁকি নিয়ে মার্কেট, দোকানপাট খুলছে আজ। সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে আজ থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিং মল, মার্কেটসহ সকল প্রকার বিপণিবিতান খোলা রাখতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।
তবে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনা করে নগরীর বড় বড় শপিং মলসহ দেশের অধিকাংশ বড় মার্কেট বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে ওইসব মার্কেট কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবন ও জীবিকা একসঙ্গে চালানোর জন্যই হয়তো সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু কীভাবে সুস্থ থাকবেন, কীভাবে করোনার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবেন, কীভাবে বেঁচে থাকবেন সে সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হবে। তারা বলেন, মার্কেট খুললেও অতি প্রয়োজন না হলে কারোই কেনাকাটা করতে যাওয়া ঠিক হবে না। মার্কেটে জনসমাগমের ঘনত্ব বেশি হওয়ায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও অনেক বেশি।
এদিকে ঈদের আগে অন্যতম বৃহত্তর পাইকারি কাপড়ের বিপণি কেন্দ্র টেরিবাজার ও রিয়াজউদ্দিন বাজার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতারা। নগরের দামপাড়ায় সিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে তারা এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান এ সময় বন্ধকালীন সব বাজার ও বিপণি কেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদারের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় যেহেতু প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেজন্য রিয়াজউদ্দিন বাজার, নিউমার্কেট, তামাকুমন্ডি লেন, জহুর হকার্স মার্কেটের দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতিসহ অধিকাংশ ব্যবসায়ী সমিতি তাদের মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে ছুটি ও লকডাউন পরিস্থিতি চলছে। এর আগে ২৫ মার্চ থেকেই জরুরি প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া বন্ধ রয়েছে শপিং মল, মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলো। এই সময়ে ছয় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ছুটি বাড়িয়ে তা ১১ এপ্রিল করা হয়। ছুটি তৃতীয় দফা বাড়িয়ে করা হয় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর চতুর্থ দফায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়। আর পঞ্চম দফায় ছুটি ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। সর্বশেষ ছুটি বাড়ানো হয় ১৬ মে পর্যন্ত।
২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার পর বন্ধ করা হয় গণপরিবহনও। একই সঙ্গে সারা দেশের সঙ্গে রেল, নৌ ও আকাশ পথের যোগাযোগব্যবস্থাও বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ৪ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে দোকানপাট খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, হাটবাজার, ব্যবসা কেন্দ্র, দোকানপাট ও শপিং মলগুলো ১০ মে থেকে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। প্রতিটি শপিং মলে প্রবেশের ক্ষেত্রে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-ঘোষিত সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে। ওই আদেশে আরও বলা হয়, আসন্ন ঈদের সময় জনগণকে নিজ নিজ স্থানে থাকতে হবে এবং আন্তজেলা, উপজেলা বা বাড়িতে যাওয়ার ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধŸমুখী থাকা অবস্থায় সরকারের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনাও হয়েছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত বদলানোরও দাবি তুলেছেন সচেতন নাগরিকরা।
বন্ধ থাকছে বসুন্ধরাসহ বড় মার্কেটগুলো : রাজধানীতে ঈদের আগে খুলছে না বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, পিংক সিটি, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, চন্দ্রিমাসহ বড় বড় শপিং মল ও মার্কেট। এসব শপিং মল ও মার্কেট কোনো অবস্থাতেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নেবে না। সরকারের আদেশ জারির পরদিন ৫ মে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বসুন্ধরা শপিং মল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
পরে অন্যান্য শপিং মল ও মার্কেটের মালিক, দোকান মালিক সমিতিও মার্কেট না খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যাতে না বাড়ে সেজন্য সারা দেশে অধিকাংশ শপিং মল বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ঝুঁকি এড়াতে অন্যান্য দোকানপাটও বন্ধ থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, রাজধানীতে নিউ সুপার মার্কেট ছাড়া সব শপিং মলই বন্ধ থাকবে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রাজশাহীসহ প্রায় সব বিভাগেই শপিং মল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। হেলাল উদ্দিন বলেন, যারা একেবারেই চলতে পারছেন না, সেসব দোকানদারের দোকান খোলা রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এর সংখ্যা খুব বেশি হবে না।
নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে : বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকার শপিং মল, মার্কেট খোলা রাখার অনুমতি দিলেও খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কেনাকাটা করতে যাওয়া যাবে না। আর যদি যেতেই হয়, তাহলে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবেও বলেন তারা।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে শপিং মল, মার্কেট খুলে দেওয়ায় সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেল। মার্কেটে ভাইরাস সংক্রমণ হয় এমন অনেক পণ্যই রয়েছে। যেমন জামা-কাপড়, কসমেটিকস, জুতা এগুলো কিন্তু অনেকেই ধরে দেখবেন। ফলে যে কারও মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে। তিনি আরও বলেন, এ পরিস্থিতিতে যারা মার্কেটে যাবেন, তাদের অবশ্যই নিজের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার নিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, জীবন ও জীবিকার সমন্বয় ঘটাতে হবে। এজন্য হয়তো সরকার বাজারঘাট খুলে দিয়েছে। একই সঙ্গে নাগরিককে চয়েজ দেওয়া হয়েছে। আপনি মৃত্যুর দিকে ছুটবেন নাকি নিজেকে রক্ষা করবেন- তা আপনাকেই ঠিক করতে হবে। যদি সুরক্ষা পেতে চান তাহলে ঘরে থাকুন। আর যদি আপনার জীবনের চাইতেও ঈদের পোশাক কেনা বেশি জরুরি হয়, তাহলে আপনি মার্কেটে যান। এ বিষয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের কিডনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হানিফ বলেন, মানুষ যখন ঈদের কেনাকাটা করতে ঘর থেকে বেরোবে তখনই ঝুঁকি শুরু হয়ে যাচ্ছে। কারণ মার্কেটে গিয়ে যে কোনোভাবেই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য আমি বলব, যদি মার্কেটে যেতেই হয়, তাহলে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।সূত্র:দৈনিক সাঙ্গু।
ভয়েস/জেইউ।