বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ইসলাম ও আরবি ভাষা

ইজাজুল হক:

আরবি ভাষাতেই নির্মিত হয় ইসলামি সভ্যতার সোনালি সৌধ। পুরো বিশে^ ইসলামের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে এ ভাষার মাধ্যমেই। সুরক্ষিত ও বিকৃতিমুক্ত ভাষা এটি। ইসলামকে জানার প্রয়োজনে যুগে যুগে মানুষ এ ভাষার চর্চা করে আসছে। হালের আরব দেশগুলোর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অমুসলিমদের কাছেও এটিকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।

পবিত্র মক্কা নগরী পৃথিবীর প্রাণকেন্দ্র। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহ এখানেই প্রেরণ করেন। এবং তাদের বোধগম্য ভাষায় পবিত্র কোরআন নাজিল করেন। আরবি ভাষাতেই তাদের দাওয়াত দেন মহানবী (সা.)। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি আরবি ভাষায় কোরআন অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ২)

হাদিস ও অন্যান্য প্রামাণ্যগ্রন্থ আরবিতেই রচিত হয়। ইসলামের প্রসারের প্রয়োজনে গড়ে ওঠে আরবি ভাষার সমৃদ্ধ ব্যাকরণ। নাহু, সারফ, বালাগাত, মানতিক, ফিকহ, আকায়েদ ইত্যাদি শাস্ত্র আরবি ভাষা ও ইসলামকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, ‘আমি আরবি বিষয়ক জ্ঞান অর্জনে ২০ বছর ব্যয় করি। আরবি জানা লোক যা দেখে অন্যরা তা দেখে না।’

ইসলামকে জানতে হলে এবং কোরআন-হাদিস বুঝতে হলে আরবি জানার বিকল্প নেই। শরিয়তের কোনো বিষয়ে ইজতিহাদ করতে, মতামত প্রদান করতে এবং সিদ্ধান্ত দিতে আরবি জানা অপরিহার্য। পাশাপাশি কোরআন-হাদিস সংশ্লিষ্ট অন্যান্য জ্ঞান অর্জন করাও আবশ্যক। তাফসির, হাদিস ও ফিকহের নীতিমালা জানা থাকতে হবে। আর আরবি ভাষার মাধ্যমেই এসব জ্ঞান পুরোপুরি শেখা সম্ভব।

আরবি পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষা। এটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ, শ্রুতিমধুর ভাষা। অল্প শব্দে বেশি কথা বলায় আরবি ভাষার জুড়ি মেলা ভার। পবিত্র কোরআন যেহেতু আল্লাহতায়ালা কিয়ামত পর্যন্ত সুরক্ষিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন, তাই আরবি ভাষাও কিয়ামত পর্যন্ত জীবন্ত থাকবে সুনিশ্চিত।

ইসলামি আইনবিদদের মতে, ইসলামের প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করা ফরজে আইন। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তা আবশ্যক। তবে কোরআন-হাদিসের গভীর জ্ঞান অর্জন করা ফরজে কেফায়া। মুসলমানদের মধ্যে একটি দল যদি কোরআন-হাদিসের চর্চা অব্যাহত রাখে, তবে সবাই দায়মুক্ত হবে। অন্যথায় সবাই গোনাহগার হবে। আর কোরআন হাদিসের গভীর জ্ঞান অর্জন করা আরবি ভাষা ভালোভাবে আয়ত্ত করা ছাড়া অসম্ভব।

২০১২ সালে ১৮ ডিসেম্বরকে আরবি ভাষা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করে জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনেসকো। প্রায় চার দশক আগে ১৯৭৩ সালের এই দিনেই ষষ্ঠ ভাষা হিসেবে আরবি জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা লাভ করে। বর্তমান বিশ্বের ৪৫ কোটি মানুষের প্রধান ভাষা আরবি। আরব বিশ্বের ২২টি দেশ ছাড়াও পৃথিবীর অনেক দেশ আরবিকে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে। জাতিসংঘ, ওআইসি, আফ্রিকান ইউনিয়নসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার দাপ্তরিক ভাষা এটি। পৃথিবীর অনেক দেশে ‘ট্রেড ল্যাঙ্গুয়েজ’ হিসেবেও আরবি ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বিশে^র দেড়শো কোটি মুসলমান তাদের প্রত্যহিক ধর্মীয় বিধিবিধান পালনে আরবি ব্যবহার করেন।

ইসলামপূর্ব সময় থেকেই আরব বণিকদের হাত ধরে বাংলাদেশে আরবি ভাষার আগমন ঘটে। তবে ইসলামের আগমনের পর এই অঞ্চলের অনেক মানুষ ইসলামে দীক্ষিত হয় এবং আরবি ভাষার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপিত হয়। দৈনন্দিন জীবনে ধর্মীয় বিধিবিধান পালনে এখানকার মানুষ আরবিপাঠে মনোনিবেশ করে। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে আরবি ভাষা শেখার নানা প্রতিষ্ঠান। মসজিদ, মক্তব, খানকা, মাদ্রাসা থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও পাঠ্যভুক্ত হয় আরবি ভাষা।

কওমি ও আলিয়া ধারার মাদ্রাসাগুলোতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় থেকে আরবি মাধ্যমে পাঠদান করা হয়। বিশ^বিদ্যালয়ের আরবি বিভাগগুলোতে ক্লাসিক্যাল ও আধুনিক আরবির পাঠদান করা হয়। সম্প্রতি সরকার কর্তৃক স্বতন্ত্র আরবি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দেশে আরবি চর্চার ইতিহাসে নতুন মাইলফলক রচনা করেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রচুর পরিমাণে মৌলিক আরবি গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেছে এবং করছে। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে আরব লেখকদের বেশ কদর রয়েছে। সিলেবাসের চাহিদার কারণে বাংলাদেশে স্বতন্ত্র আরবি ভাষার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে।

ধর্মীয় প্রয়োজনের পাশাপাশি রাষ্ট্রের প্রয়োজনেও বাংলাদেশে আরবি ভাষা সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্য থেকেই সর্বাধিক রেমিটেন্স আসে। আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করে। মজবুত কূটনৈতিক সম্পর্কও রয়েছে প্রতিটি আরব দেশের সঙ্গে। বাংলাদেশের প্রতিটি দুর্যোগের মুহূর্তে আরব বিশ্বই সর্বপ্রথম হাত বাড়িয়ে দেয়।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ হিসেবে বাংলাদেশে আরবি ভাষার উপস্থিতি অনিবার্য। তাই আরও ব্যাপকভাবে আরবি চর্চা হওয়া দরকার। মাদ্রাসাগুলোতে কোরআন-হাদিসের জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি আধুনিক আরবি ভাষার পাঠদান করে যুগের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা এবং মধ্যপ্রাচ্য গমনেচ্ছুদের আরবি ভাষায় প্রশিক্ষিত করে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা সময়ের দাবি।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION