বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০২:০৯ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

শয়তানকে বন্দি করা হয়েছে মাহে রমজানে

ইসলামী জীবন

মুফতী মাহফূযুল হক:

শুরু হলো ১৪৪২ হিজরির পবিত্র রমজান মাস। সাহাবি আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন রমজানের প্রথম রাত শুভাগমন করে তখন বিতাড়িত শয়তান ও দুষ্টু জিনদেরকে শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয়, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, একজন ঘোষক ঘোষণা দিতে থাকে, হে সৎকর্মশীল! অগ্রসর হও। হে অসৎকর্মশীল! থামো। মহান আল্লাহ রমজানের প্রতি রাতে অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। —সুনানু ইবনি মাজাহ: ১৬৪২

মানুষ পাপ করে তিন শক্তি দ্বারা তাড়িত হয়। মানুষের নিজের ভেতরের কুপ্রবৃত্তি, তার খাসলত তাকে দিয়ে পাপ করায়। আবার বাইরে থেকে মানুষকে পাপের প্ররোচণা দিয়ে থাকে শয়তান, দুষ্ট প্রকৃতির জিন এবং খারাপ মানুষেরা। রমজানের রাত শুরু হওয়া মাত্রই মহান আল্লাহ শয়তান ও দুষ্ট জিনদের বন্দি করে ফেলছেন। তাই শয়তান ও দুষ্ট জিনরা রমজানে মানুষকে পাপ কাজের কোনো প্ররোচনা দিতে পারছে না বা পারবেও না। পাপের এক তৃতীয়াংশ শক্তি বন্দি থাকার কারণে রমজানে পাপের পরিমাণ অনেক কমে আসে।

মানুষকে দিয়ে পাপ করানোর জন্য উন্মুক্ত থেকে যাচ্ছে তার নিজের কুপ্রবৃত্তি ও বাইরের পাপী মানুষগুলো। এ দু’শক্তি কিন্তু রমজান মাসেও মানুষকে পাপ কাজে প্ররোচিত করে থাকে। আমরা যদি ভোজনবিলাসী না হয়ে, মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামের প্রকৃত সুন্নত এবং সাহাবিদের রোজা রাখার নুরানি তরিকা অনুসরণ করে ভোজন সংযমী হয়ে সীমিতভাবে সেহরি ও ইফতার করি তাহলে তা আমাদের কৃপ্রবৃত্তিকে দুর্বল করে দেবে এবং সুকুমারবৃত্তিগুলোকে বিকশিত করে দিবে। রমজান সংযমের মাস, সাধনার মাস, ত্যাগের মাস। কিন্তু আমরা রমজানের মূল বার্তাকে ভুলে গিয়ে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবিদের অনুসৃত পথ পরিহার করে সেহরি ও ইফতারে এতটাই ভোজনবিলাসী, খাদ্য ভোগী হয়ে উঠি যা রমজানের সংযম, সাধনা ও ত্যাগের বার্তাকে ভুলিয়ে দেয়। ফলে আমাদের কুপ্রবৃত্তি দুর্বল না হয়ে আরও হিংস্র ও পাশবিক হয়ে উঠে। কাম, লিপ্সা, রাগ, মোহ আরও বেড়ে যায়। আমাদের সুকুমারবৃত্তিগুলো বিকশিত না হয়ে আরও নিস্তেজ হয়ে যায়। আত্মা বলীয়ান হয়ে পরমাত্মার নিকটবর্তী না পৌঁছে আরও দূরে ছিটকে যায়।

সেহরি ও ইফতারের ব্যপারে মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত ও সাহাবিদের তরিকা পুরো সমাজে ব্যাপকভাবে পরিহার করার কারণে রোজার পার্থিব উপকারগুরো সমাজে অর্জিত হচ্ছে না। সমাজের সবাই সেহরি ও ইফতারে মহাখাদ্যভোগী হওয়ায় রমজানের আগমনে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য আকাশ ছোঁয়া উচ্চতায় পৌঁছে যায়। এর পরেও ধনী-গরিব সবাই কিনছে। অস্বাভাবিক এ বাজার ধনীকে ধনী করছে, গরিবকে করছে গরিব। রোজার আবশ্যিক সুফল ছিল সুস্থ জাতি নির্মাণ। রোজার কিন্তু শরীরের সকল কোষে জমে থাকা টক্সিনগুলোকে দূর করার কথা। ফলে রমজান মাস বিদায় হওয়ার পর ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা, মেদ-স্থুলতা ইত্যাদি ডিজিজগুলো শূন্যের কোঠায় চলে আসা ছিল স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। রমজান মাসের দৈহিক ও আর্থিক বেনিফিটগুলো পেতে সেহরি ও ইফতারের ব্যাপারে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবিদের পথে।

রমজান মাস সাধনার মাস। আমরা যদি রমজান মাসের জন্য মানুষের অপ্রয়োজনীয় সব সংশ্রব, সান্নিধ্য, আড্ডা এড়িয়ে, যোগাযোগ সীমিত করে নির্জনে আল্লাহকে সময় দেই তাহলে বাইরের মানুষ আমাকে পাপে প্ররোচিত করার সুযোগ পাবে না। বরং আল্লাহর জিকির ও ধ্যান আমাদেরকে পাপের প্রতি নিরাসক্ত করে তুলবে, সৎকর্মের প্রতি ব্যাকুল করবে।

যেহেতু শয়তান বন্দি থাকছে, ভোজন সীমিত হচ্ছে, তারাবি ও তাহাজ্জুদের কারণে রাত জাগা হচ্ছে স্বভাবতই পাপ হ্রাস পাচ্ছে, সেহেতু রমজানের শুভাগমন উপলক্ষে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যারা ভালো হতে চাও তারা এগিয়ে যাও।

লেখক: শিক্ষক ও ইসলামি গবেষক

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION