সাগরে ১০ থেকে ১৫ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের সময় জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। রাতভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। সাগর প্রচন্ড উত্তাল রয়েছে। জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও জেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপ, সোনাদিয়া দ্বীপ ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, ‘সুপার সাইক্লোন আম্পান উপকূলের কাছাকাছি চলে আসায় কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে এই অঞ্চলের জন্য দেওয়া হয়েছে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে এখন ৩ নম্বর সংকেত রয়েছে। তিনি জানান, গত ১২ ঘন্টায় কক্সবাজারে ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সন্ধ্যায় জোয়ারের সময় অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাবে। এতে অনেক এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার গোস্মামী জানান, ‘কক্সবাজার জেলার ৫৯৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির কারণে জরুরী ভিত্তিতে নির্মাণ কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না’।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ মোকাবিলায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে রোহিঙ্গা শিবিরের আশপাশে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পাকা ভবন আছে সেগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে আইএসসিজির মুখপাত্র সৈকত বিশ্বাস।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত) মো: শামসু দ্দৌজা বলেন, জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সঙ্গে ইতোমধ্যে দুইটি প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। ক্যাম্পে কর্মরত সব স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জামিরুল ইসলাম জানান ঘূর্ণিঝড়ের মহেশখালীতে ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সচেতনতা মূলক মাইকিং সহ সকল প্রস্তুতি অব্যাহত রয়েছে। ব্যবস্থা করা হয়েছে শুকনো খাবারের।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউর হক মীর জানান, আমরা ইতিমধ্যে অনেক জনকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে এনেছি। যারা এখনো রয়ে গেছে তাদেরকেও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি চলছে।’
অন্যদিকে, চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাংসদ মো: জাফর আলম জানিয়েছেন, ‘পেকুয়া উপজেলার মগনামা থেকে শুরু করে ঝুঁকিপূর্ণ সম্ভাব্য এলাকা থেকে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। এসব মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে’।
প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনেও ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন সেন্টমার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় সুপার সাইক্লোনে রূপ নেয়ার পর থেকে সেন্টমার্টিনে বসবাসরত লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে’।
মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ইউনিয়নের সরই গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে বেশীর ভাগ মানুষ এখন আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
একই উপজেলার মাতারবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, ‘জোয়ারের সময় অতিরিক্ত জলোচ্ছ্বাসের কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেশ কিছু বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এতে পানি ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষ জনকে সরিয়ে আনা হয়েছে।’