সোমবার, ৩০ Jun ২০২৫, ০৫:১২ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক:
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান মামলার রায় শুনতে কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে উৎসুক জনতার ভিড় জমিয়েছে। সোমবার সকাল থেকে ধীরে ধীরে মানুষের ভীড় বাড়তে। একাণে
কক্সবাজার জেলা এ দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গন এবং আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে আদালত সংশশ্লিষ্ট লোকজন বলছেন দুপুরের পরে এ মামলার কার্যক্রম শুরু করা হবে।
এদিকে ঘটনার প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও সেই মামলার রায় নিয়ে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। সবখানেই চলছে শুধু এ মামলা নিয়ে আলোচনা। কেউ বলছে ওসি প্রদীপ-এসআই লিয়াকতের ফাঁসি হবে, আবার কেউ বলছেন সব আসামীর ফাঁসি বা যাবতজীবন কারাদন্ড দিতে পারেন আদালত। তবে মামলার রায় ঘোষনা না হওয়া পর্যন্ত এসব কৌতুহলী মানুষের ভিড় থাকতে পারে।
এর আহে সিনহা হত্যা মামলার রায়কে সামনে রেখে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের হাতে ক্রসফায়ারে নিহতদের স্বজন ও নির্যাতিতরা।
সকাল পৌনে ১১টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে এই বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে ভুক্তভোগীরা ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতসহ সিনহার হত্যা মামলার আসামী দাবি করেছেন।
এতে বক্তব্য রাখেন, ওসি প্রদীপের হাতে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার কক্সবাজারের সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তাফা খান, ভুক্তভোগী হামজালাল ও ক্রসফায়ারে ছেলে হারানো হালিমা খাতুনসহ আরো কয়েকজন।
তারা বলেন, ওসি প্রদীপ ক্রসফায়ারেরর নামে বহু মানুষকে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণসহহ নানাভাবে নির্যাতনের শিকারে হলেও কোনো প্রতিকার পাননি। তাই তারা সিনহা হত্যা মামলার রায়ের দিকে চেয়ে আছেন। এই মামলায় ওসি প্রদীপের ফাঁসি হলে তারা সান্ত্বনা পাবেন। এতে শতাধিক নির্যাতিত ব্যক্তি অংশ নেন।
এসময় নির্যাতিত পরিবারের পক্ষকে বক্তব্য দেন টেকনাফ সদরের হাম জালাল, মুরাদ হাসান, হালিমা বেগম ও হোয়াইক্ষ্যংয়ের হাফেজ আহমদ।
এসময় ওসি প্রদীপের ফাঁসির দাবি জানান এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। মানববন্ধন চলাকালীন সময়ে ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই বলে কিছুক্ষণ পর স্লোগান দেন তারা।
এছাড়াও সকাল ৭টা থেকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নারী পুলিশের পাশাপাশি রয়েছে সাদা পোষাকের বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মামলার রায় ঘোষনাকে কেন্দ্র করে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার কড়া নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, উক্ত মামলার আসামী ওসি প্রদীপ ও লিয়াকত সহ ১৫ জন আসামীদের সকালে আদালতে নিয়ে আসার কথা থাকলেও দুপুরে আনা হবে বলে জানান তিনি।
তবে আদালতের একটি সুত্র জানিয়েছেন, সিনহা হত্যা মামলার রায় সকালে দেয়ার কথা থাকলেও দুপুর গড়িয়ে বিকাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আদালত প্রাঙ্গণের সামনে গিয়ে দেখা যায়, দায়রা জজ কোর্ট এলাকার চারদিকে প্রতিবন্ধকতা (ব্যারিকেড) দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে কক্সবাজার জেলা পুলিশ আদালতে প্রবেশের একটি ফটক পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আদালতের কর্মীরাও ওই ফটক দিয়ে ভেতরে যেতে পারছেন না। সকাল ৭ টায় থেকেই আদালত এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। পুলিশের পাশাপাশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার দল তৎপর রয়েছে।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। পরে ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
২০২০ সালের ৬ আগস্ট ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও সাত জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসে। পাশাপাশি সিনহা নিহতের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে অতিরিক্ত ডিআইজি এবং লে. কর্নেল মর্যাদার একজন সেনা কর্মকর্তাকে সদস্য করে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। পরে ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।
ভয়েস/ জেইউ।