রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫৭ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

মন্দ আচরণ বর্জনীয়

মুফতি এনায়েতুল্লাহ:
ইসলামি শরিয়তে গালাগাল, মন্দ ও অশ্লীল কথাবার্তা বিনিময় সম্পূর্ণ নিষেধ। কারণ গালাগাল, মন্দ কথা ও অশ্লীল কথায় সীমালঙ্ঘন হয়। কোরআন-হাদিসবিরোধী বাক্যবিনিময় হয়। একজন অন্যজনের দোষ বর্ণনা করে, বাবা-মা তুলে খারাপ কথা বলে। এমনকি পরস্পরে মারাত্মক কলহে জড়িয়ে পড়ে। অশালীন কথাবার্তার ফলে মানুষের মনে জেদ ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এ কারণে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুমিনকে গালি দেওয়া ফাসেকি এবং তার সঙ্গে ঝগড়া করা কুফরি।’ সহিহ বোখারি

মন্দ ও খারাপ কথার দ্বারা মানুষের চারিত্রিক অবক্ষয় হয়। বন্ধু-বান্ধব একত্রে বসে আড্ডায়, দোকানপাটের আড্ডায়, হাসি ও ঠাট্টার ছলে অশ্লীল কথাবার্তায় মেতে ওঠে। অথচ অশ্লীল কথাবার্তায় মানুষ মারাত্মক অন্যায় ও গোনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) শত জুলুম-নির্যাতনের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও কাউকে কখনো মন্দ কথা বলেননি, অভিশাপ দেননি। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) গালাগালকারী, অশালীনভাষী এবং অভিশাপকারী ছিলেন না। আমাদের কারও প্রতি নারাজ হলে তিনি শুধু এটুকু বলতেন, তার কী হলো! তার কপাল ধূলিময় হোক।’ সহিহ বোখারি

মানুষ তার উত্তম ব্যবহার ও চরিত্র দ্বারা পরিবারসহ সমাজকে অলোকিত করে থাকে। এমন নৈতিক শক্তির কার্যকারিতা সুদূর প্রসারী। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন চরিত্রে সেটির বাস্তব প্রমাণ মেলে। নবী জীবন কেমন ছিল তার পরিচয় পাওয়া যায় এই হাদিসে। হজরত আতা ইবনে ইয়াসার (রা.) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর বিন আস (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললাম, তাওরাতে বর্ণিত হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষণসমূহ সম্পর্কে আমাকে অবগত করুন। তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ, (তাই হবে) নিঃসন্দেহে তাওরাতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এমন কতিপয় বিশেষণে বিশেষিত করা হয়েছে, যা দ্বারা কোরআন শরিফে তিনি বিশেষিত হয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে পাঠিয়েছি।’ অর্থাৎ আপনি (হে নবী) নিরক্ষরদের স্মরণস্থল, আমার বান্দা ও পয়গামবাহী রাসুল, আমি আপনার নামকরণ করেছি মুতাওয়াক্কিল (আল্লাহতে নির্ভরশীল)। আপনি রুক্ষ মেজাজ ও হাটবাজারে শোরগোলকারী নন, দুর্ব্যবহারের দ্বারা দুর্ব্যবহারের জবাব দেন না, বরং মার্জনা ও ক্ষমা করে দেন।’ আল আদাবুল মুফরাদ

বুজুর্গ আলেমরা বলেছেন, যার হৃদয় যত পবিত্র ও কলুষমুক্ত; তিনি তত কোমল ব্যবহারের অধিকারী। তিনি তত সদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারার অধিকারী।

পৃথিবীতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেয়ে পবিত্র মন, আকর্ষণীয় আচরণের অধিকারী আর কোনো ব্যক্তির আগমন ঘটেনি এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে না। নবী করিম (সা.) সব সময় হাসিমুখে থাকতেন। সঙ্গী-সাথীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ামাত্র হাসিমুখে অভ্যর্থনা করতেন, কিন্তু জীবনে কেউ কোনো দিন তাকে অট্টহাসি হাসতে দেখেনি। প্রবল হাসির উদ্রেক হলে কখনো কখনো বিদ্যুৎ চমকের মতো একফালি দাঁতের ঔজ্জ্বল্য ফুটে বের হতো। হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, জীবনে যতবার আমি রাসুলে করিম (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, প্রত্যেকবারই তিনি আমাকে হাসিমুখে সম্ভাষণ করেছেন। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে আমার কথা শুনেছেন।

চারিত্রিক সৌন্দর্য দ্বারা মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান হাসিল করা যায়। গোমড়ামুখী হওয়া কোনো তাকওয়ার পরিচয় বহন করে না। ব্যক্তিগত জীবনে দেখা যায়, অনেক সৎচরিত্রের অধিকারীদের চরিত্রে কোমলতা কম থাকে, মেজাজ থাকে কিছুটা কর্কশ। মুমিনের এমন চরিত্র হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কিয়ামতের দিন এমন লোককেও আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে, যার আমলনামার মধ্যে নামাজ, রোজা, জাকাত প্রভৃতি নেক আমল থাকবে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তি তার মন্দ আচরণের জন্য আল্লাহর কাছে নালিশ করবে। তাই মিষ্টি হাসি, মধুর আচরণ ও কোমল চিত্তের অধিকারী হওয়া পরিবারপ্রধান ও সমাজসংস্কারকদের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য।

মানুষের সৎ আচরণের মধ্যে সততা অন্যতম গুণ। সততা রক্ষা করা এবং সততা অর্জন করা একজন মুমিনের জন্য শ্রেষ্ঠতম কাজ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহতায়ালা সত্যনিষ্ঠ ও বাস্তবপরায়ণ লোকদের সম্পর্কে তাদের সত্যনিষ্ঠা ও বাস্তবতা তথা সততা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। সততার গুণে মানুষ বিভূষিত হন এবং সমাজের উচ্চস্থান লাভ করেন।

মানব চরিত্রের ভালো-মন্দ দুটি দিক রয়েছে। এই গুণ দুটির পরস্পর বিপরীত মেরুতে অবস্থান এবং এর সঙ্গে ব্যক্তির যোগাযোগ ও প্রভাব নির্ভর করে। যদি ব্যক্তির চরিত্রে ভালো গুণ প্রকাশ পায় তাহলে তার অবস্থান হয় এক রকম, খারাপটি প্রকাশিত হলে অন্যরকম। ভালো আচরণ একটি সমাজব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে পারে এবং ব্যক্তিকে করে রাখে স্মরণীয়। তাই জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমাদের সুন্দর ব্যবহার ও সততা রক্ষা করে চলা উচিত। বোখারি শরিফে আছে, তোমাদের মধ্যে যে স্বভাব-চরিত্র ও সততায় উত্তম, সে আমার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয়। হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, লোকের সঙ্গে সৎ আচরণ তথা সততার মাধ্যমেই একজন মুসলমানের প্রকৃত পরিচয় জানা যায়।’ যার ব্যবহার খারাপ, কথায় কথায় রাগ করে, মানুষকে গালি দেয়, অহংকার করে, মিথ্যা বলে সে হয় ধিক্কৃত ও পরিত্যাজ্য। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই আমার কাছে অধিক প্রিয়, যার চরিত্র ভালো।’ সহিহ বোখারি

সুন্দর আচরণ, সত্য কথা ও কোমল স্বভাব দ্বারা মানবজীবনের অনেক কঠিন ধাপ সহজেই পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব। এমন স্বভাবের লোকদের সবাই আপন করে নেয়, তাদের শত্রু থাকে কম। ঘোর শত্রুও তার উদারতা ও কোমলতার কাছে হার মানতে বাধ্য হয়। এজন্য মানবমনের মুকুরে স্থান করে নেওয়ার প্রধান উপায় হচ্ছে কোমল আচরণ। ভদ্র, মার্জিত ও কোমল আচরণ মানবতা বিকাশের অনুপম ভূষণ। একজন মুসলমান হিসেবে প্রত্যেকের উচিত ইসলামের দাবি অনুযায়ী তার চরিত্রে কোমলতা আনয়ন করা। মহান আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে, ‘যে ব্যক্তি আমার জন্য নিচু হবে, লোকদের সঙ্গে কোমল ব্যবহার করবে, তাকে আমি উঁচু করে দেব; শ্রেষ্ঠত্ব দান করব।’

লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION