মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৩৫ অপরাহ্ন
মুফতি এনায়েতুল্লাহ:
রমজানের শেষ দশ দিনের ইতিকাফ অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। ইতিকাফ ইবাদত হলেও এর নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে। যার তাৎক্ষণিক প্রভাব মানবজীবনে বিশাল প্রভাব ফেলে। ইতিকাফের মাধ্যমে মুমিন বান্দা যাবতীয় অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকার সুযোগ পায়। অনর্থক কথা-কাজ মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো- অর্থহীন কথা বা কাজ পরিত্যাগ করা।’ -সুনানে তিরমিজি : ২৩১৮
রমজানের শেষ দশ দিনের ইতিকাফ নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ এক সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইতিকাফের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফে কাটান।’ -সহিহ বোখারি : ১৯০৩
রমজানের ইতিকাফের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। আর আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন মুমিনজীবনের পরম প্রত্যাশিত বস্তু। আল্লাহর ভালোবাসা ছাড়া মুমিনের কোনো সফলতা নেই। যারা আল্লাহর সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করবে, দুনিয়া-আখিরাতে তাদের কোনো ভয়ভীতি নেই। ভালোবাসা তৈরির অন্যতম এক মাধ্যম হচ্ছে- ইতিকাফ।
দুনিয়ার বুকে আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা মসজিদ। ইতিকাফের মাধ্যমে মসজিদের সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক তৈরি হয়। ইতিকাফকারী পুরো সময় আল্লাহর ঘর মসজিদে কাটায়। এর মাধ্যমে সময়ের হেফাজত হয়। মুমিনজীবনের প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের প্রতি যতœশীল হলে জীবনে সফলতা আসে। ইতিকাফের মাধ্যমে একজন মুমিন কীভাবে সময়ের হেফাজত করবে তার যথাযথ ধারণা ও প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। সময়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘সময়ের (মহাকাল) শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত।’ -সুরা আসর : ১
ইতিকাফের সময় মসজিদে সময় কাটানোর কারণে নানাবিধ গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার সুযোগ মেলে। অন্য সময় পাপের অনুকূল পরিবেশ, অসৎসঙ্গের প্রভাব ও শয়তানের সার্বক্ষণিক প্ররোচনায় গোনাহমুক্ত থাকা সম্ভব হয় না। কিন্তু ইতিকাফের সময়গুলোতে সৎসঙ্গ ও ইবাদতের পরিবেশ থাকায় খুব সহজেই সে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারে। গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার অর্থ হলো- অধিক ইবাদতের সুযোগ। এ জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) ইতিকাফের সময়গুলোতে ইবাদতের মাত্রা এত বেশি বাড়িয়ে দিতেন, যেমনটি অন্য সময় করতেন না। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন রমজানের শেষ ১০ রাত আসত, তখন নবী করিম (সা.) কোমরে কাপড় বেঁধে নেমে পড়তেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার-পরিজনকেও তিনি জাগিয়ে দিতেন।’ -সহিহ বোখারি : ১০৫৩
রমজানের শেষ দশ দিনের ইতিকাফের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হচ্ছে- লাইলাতুল কদর লাভের সুযোগ। লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি একে নাজিল করেছি মহিমান্বিত রাতে (লাইলাতুল কদর)। আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত কী? মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে প্রতিটি কাজের জন্য ফেরেশতারা এবং রুহ তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে অবতীর্ণ হয়। সেই রাতে শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত।’ -সুরা কদর : ১-৫
হাদিস শরিফের বিভিন্ন ভাষা দ্বারা বোঝা যায়, উল্লিখিত আয়াতে মহিমান্বিত যে রাতের কথা বলা হয়েছে, তা এই শেষ দশকেই লুকিয়ে আছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো।’ -সহিহ বোখারি : ২০১৭
লেখক : দেশ রূপান্তরের সহ-সম্পাদক