শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ০১:০০ অপরাহ্ন
সাইফুদ্দীন আল মোবারক, টেকনাফ:
আবুল মনজুর (৬০)। বয়সের ভারে বেশ ক্লান্ত। তাঁর স্ত্রী জাহানার বেগম (৫০)। এক অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন তারা । তিনি একজন ভিক্ষুক । প্রায় ৫০ বছরধরে সে ভিক্ষা করে চলছে । এক লুঙ্গি নিয়ে ঈদ করছেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে । নতুন কাপড় পড়ে ঈদ করার মতো এখনো তৌফিক হয়নি তাঁর ।
নজর পড়েনি কোনো সরকারি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার । বরিবার (২ মে) রাত ৮টারদিকে হঠাৎ দেশ রূপান্তর প্রতিবেদকের নিকট এমন গেলে এই অসহায় ভিক্ষুক লোকটিকে দেশ রূপান্তর পরিবারের পক্ষথেকে নতুন লুঙ্গি,পাঞ্জাবিসহ ঈদের বাজার করে দেয়া হয়েছে । এসময় তারা অসহায়ত্বের কথাগুলি তুলে ধরেন প্রতিবেদকের নিকট । প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে ভিক্ষা করেই চলছে আবুল মনজুর ও জাহানার সংসার। তাদের রয়েছে পাঁচ জন ছেলে মেয়ে । সন্তানদের মধ্যে দুই ছেলে তিন মেয়ে । ছেলেরা বিয়ে করে নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত, মা বাবার খবর রাখে না । অভাবের সংসার হওয়ায় তারাই তো লড়ছেন দুমুঠো ভাতের জন্য। ভবঘুরে হয়ে ছুটছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
তিন মেয়ের মধ্যে দুইজনের বিয়ে হয়েছে । মা বাবার সাথে আছেন এক মেয়ে । তার বিয়ে নিয়েও খুবই চিন্তিত অসহায় ভিক্ষুক আবুল মনজুরের পরিবার। সরকারের এতো বরাদ্দ এতো উন্নয়নের কোনো কিছুই তাদের দরজায় পৌঁছেনি । সারা দেশে গরীব অসহায়দের দেয়া হয়েছে মুজিববর্ষের ঘর। কিন্তু এই অভাগা দম্পতি পায়নি সেই ঘরও । এখন ভিক্ষুক আবুল আবুল মনজুর বৃদ্দ বয়সে কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন ।
আবুল মনজুর দেশ রূপান্তরকে জানান,সে একজন অসহায় গরীব মানুষ ।প্রায় ৫০ বছর ধরে ভিক্ষার থলে নিয়ে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে চলেছে। পাচ্ছে না কোনো সরকারি সহযোগিতা । এখন বুড়ো হয়ে গেছে । আগের মতো ভিক্ষা করতে পারে না । ভিক্ষা করে দিনে ৪-৫ কেজি চাল পেলে তা বিক্রি করে কোনো মতে চালিয়ে যাচ্ছে টানাপুড়নের সংসার । তার অবিবাহিত মেয়েটাকে নিয়েও বেশ চিন্তিত । বুড়ো বয়সে যদি সরকারের পক্ষ থেকে একটি ঘর বা কোনো বড় সহযোগিতা পেলে হইতো মেয়েটার বিয়ের ব্যবস্থা করে কোনো মতে বাকি জীবন শেষ হতো ।
অসহায় আবুল মসজুরের স্ত্রী জাহানার বেগম বলেন, আমরা স্বামী ন্ত্রী দুজনই এখন মৃত্যুর পথে । সরকার আমাদের চোখ তুলে দেখলে হইতো কপাল খোলবে । আর মেয়েটার বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারবো । সরকারের কাছে তিনি একটি ঘর ও সহযোগিতার আকুল আবেদন জানান । রমজানে সাহরী কী দিয়ে খেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন , ভিক্ষা করে চলি আমাদের বড় মাছ মাংস খাওয়ার তো তৌফিক নেই,শুঁকটি মাছ আর শাক সবজি খেয়েই সাহরী করি । আজকে কী দিয়ে সাহরী খেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মুচকি হেসে জাহানার বলেন, আগের কেনা ছোট ছোট কিছু শুঁটকি ছিল সেগুলো রান্না করেছি,তা দিয়ে আল্লাহ খাওয়াইছে ।
ইফতারের কথা জানতে চাইলে বলেন,চিড়া মুড়ি বা মাঝেমধ্যে ছোলা দিয়ে ইফতার করি । ঠান্ডা জাতীয় বা ফলফ্রুট কিছু খান না এমন প্রশ্নের জবাবে উল্টো প্রশ্ন করে বলেন আমাদের কি ঠান্ডা বা ফলফ্রুট কিছু কিনে খাওয়ার টাকা আছে ?
প্রতিবেশি কয়েকজন ব্যক্তি জানান, রোগ-শোক,খিদা, দারিদ্র্যতা,অপুষ্টি জনিত রোগে জীবন বাঁচানোর লড়াইয়ে বিভিন্ন প্রান্তে ভিক্ষার থলে নিয়ে ঘুরতেন এই মনজুর । তার দুই ছেলেও নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত, রাখেনা বাবা মায়ের খবর । অবিবাহিত এক মেয়ে তারা স্বামী-স্ত্রী দুজন ও এক মেয়ের নাতনী নিয়ে অনেক কষ্টে চলছে তাদের জীবন। সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে হইতো ঘুরে দাঁড়াবার সাহস পেতো এই দম্পতি ।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়সার খসরু মুঠোফোনে জানান,প্রকৃত অর্থে অসহায় গরীব হয়ে থাকলে উপজেলা প্রশাসন দ্রæত ব্যবস্থা নিবেন । একটি ঘরের ব্যবস্থাও করে দেয়া হবে বলে জানান তিনি ।
ভয়েস/আআ