রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

অতিরিক্ত প্রশ্ন নয়

শাহীন হাসনাত:
গত শুক্রবার ইসলামের নিয়মিত কলামে ‘ধর্মীয় জ্ঞানের বিষয়ে শৈথিল্য নয়’ শিরোনামে দ্বীন সম্পর্কে জানার গুরুত্ব নিয়ে কিছু আলোকপাত করা হয়। ওই প্রসঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কিত আরেকটি বিষয় হলো, জানার নামে অতিরিক্ত প্রশ্ন করা, অপ্রয়োজনীয় প্রসঙ্গে আলোচনায় সময় ব্যয় করা। অর্থাৎ দ্বীনের বিষয়ে যেমন শৈথিল্য কাম্য নয়, তেমনি কোনো কিছু জানার লক্ষ্যে বাড়াবাড়িমূলক প্রশ্নও কাক্সিক্ষত নয়।

সমাজে বহু মানুষ আছেন, যারা দরকারি বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার বদলে অহেতুক বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করতে বেশি উৎসাহবোধ করেন। অনেক সময় তারা প্রশ্ন করেন, যাতে না আছে কোনো দ্বীনি ফায়দা, না দুনিয়ার উপকার। নিরর্থক বিষয় নিয়ে বাকশক্তি অপচয় ও সময় নষ্ট হয়। অথচ অহেতুক কোনো কাজ ইসলাম সমর্থন করে না। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘অহেতুক বিষয় পরিহার করা ইসলামের এক সৌন্দর্য।’ -জামে তিরমিজি : ২৩১৭

এমন প্রশ্ন অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করে, নানা বিতর্কের জন্ম দেয়। অনেক সময় বিশৃঙ্খলাও দেখা দেয়। এ জাতীয় প্রশ্নের পেছনে সময় ব্যয় করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-কে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, হজরত আলী (রা.) ও হজরত মোয়াবিয়া (রা.)-এর মধ্যে কে সঠিক? সিফফিনের যুদ্ধে যারা নিহত হয়েছেন, আখেরাতে তাদের কী হবে? উত্তরে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, ‘আমার ভয় নিজের সম্পর্কে। না জানি আল্লাহ আমাকে কোন কোন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। কিয়ামতের ময়দানে যখন আমাকে তার সামনে দাঁড় করানো হবে, তখন তাদের কোনো বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করা হবে না। প্রশ্ন করা হবে ইসলামের বিধানাবলি সম্পর্কে। আমি তা কতটুকু পালন করেছি। কাজেই তাতে ব্যস্ত থাকাই শ্রেয়।’

ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর বক্তব্য মতে এটা স্পষ্ট, দুনিয়া ও আখেরাতের লাভ-লোকসানের সঙ্গে জড়িত নয়, তা নিয়ে প্রশ্নোত্তরে লিপ্ত হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আর অহেতুক বিষয়ে প্রশ্ন করতে কোরআন মাজিদে নিষেধ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যা তোমাদের কাছে প্রকাশ পেলে তোমরা কষ্ট পাবে। কোরআন অবতরণকালে তোমরা যদি সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করো, তাহলে তা তোমাদের জন্য প্রকাশ করা হবে। অতীত বিষয় আল্লাহ ক্ষমা করেছেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, সহনশীল। তোমাদের আগেও তো এক সম্প্রদায় এ ধরনের প্রশ্ন করেছিল। এরপর তারা (উত্তর পেয়ে) এসব বিষয়ে অবিশ্বাসী হয়ে গেল।’ -সুরা আল মায়েদা : ১০১-১০২

বর্ণিত আয়াতে বলা হয়েছে, কিছুসংখ্যক মানুষ আল্লাহর বিধিবিধানে অনাবশ্যক চুলচেরা ঘাঁটাঘাঁটি করতে আগ্রহী হয়ে থাকে, যেসব বিধান দেওয়া হয়নি, সেগুলো নিয়ে বিনা প্রয়োজনে প্রশ্নের পর প্রশ্ন তুলে। আয়াতে তাদের অহেতুক প্রশ্ন না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেননা এতে আরও কঠোর বিধান নাজিল হতে পারে। ফলে তারা কষ্টে পতিত হবে, কিংবা গোপন রহস্য ফাঁস হওয়ার কারণে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে।

মুসলিম শরিফের বর্ণনা অনুসারে আলোচ্য দুই আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যখন হজ ফরজ হওয়ার বিধান নাজিল হয়, তখন আকরা ইবনে হারেস (রা.) প্রশ্ন করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের জন্য কি প্রতি বছরই হজ ফরজ? রাসুলুল্লাহ (সা.) এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। প্রশ্নকারী পুনর্বার প্রশ্ন করলেন। তিনি এবারও নিশ্চুপ। প্রশ্নকারী

তৃতীয়বার প্রশ্ন করলে তিনি শাসনের সুরে বললেন, আমি যদি তোমার উত্তরে হ্যাঁ বলতাম, তাহলে প্রতি বছরই হজ ফরজ হয়ে যেত। কিন্তু তুমি এ আদেশ পালন করতে পারতে না।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘যেসব বিষয় সম্পর্কে আমি তোমাদের কোনো নির্দেশ দিই না, সেগুলো নিয়ে তোমরা অবান্তর ও অর্থহীন প্রশ্নে লিপ্ত হয়ো না। তোমাদের আগে কোনো কোনো উম্মত বেশি বেশি প্রশ্ন করেই ধ্বংস হয়ে গেছে।’

হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আগে অনেক জাতি বাড়তি প্রশ্নের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদেরকে তাদের নবী যখন কোনো বিষয়ে হুকুম করতেন, তারা তার বিপরীতে নানা প্রশ্ন করে তাকে উত্ত্যক্ত করত। তাই নবী কারিম (সা.) সাবধান করে বলেছেন, তোমরা এমনটা কোরো না। কোরআন মাজিদের সতর্কবার্তা ও নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষার ফলে সাহাবিদের মধ্যে দুই-চারটি ঘটনা বাদে বাড়তি প্রশ্নের কোনো নজির পাওয়া যায় না।

ইসলামের বিধান হলো, অহেতুক ও অনাকাক্সিক্ষত বিষয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। কোনো অবস্থাতেই জানার নামে সীমালঙ্ঘন না করা। অবান্তর প্রশ্ন করে আলোচনায় আসার চেষ্টা না করা। বিতর্ক সৃষ্টির উদ্দেশে কোনো কিছু জানতে না চাওয়া। অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, বর্তমান সময়ে মানুষ দরকারি বিষয়ে খুব একটা প্রশ্ন করে না, অথচ এমন সব অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে প্রশ্ন করে, যাতে দুনিয়া ও আখেরাতে কোনো ফায়দা নেই।

জ্ঞানার্জন কিংবা অজানাকে জানার নামে প্রশ্নের অন্তরালে বাড়াবাড়িমূলক প্রশ্ন সীমালঙ্ঘন, এটা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কাজের কথা ছেড়ে অকাজে লিপ্ত হওয়া কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন ও বুদ্ধিমান মানুষ তার জীবনের সীমিত এ সময় কেবল প্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে। সে হিসেবে যা জানা দরকার, সে সম্পর্কে অবশ্যই বিষয় সম্পর্কিত বিজ্ঞজনকে জিজ্ঞেস করবে। আর যা জানা অপ্রয়োজনীয়, সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকবে। প্রশ্নোত্তরের ক্ষেত্রে এটাই মধ্যমপন্থা। এটাই কল্যাণকর অভিমত।

আরেকটি কথা, দ্বীনি বিষয়ে যার-তার কাছে কোনো কিছু জিজ্ঞেস না করা। এ প্রসঙ্গে কোরআন মাজিদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘তোমার জানা না থাকলে জ্ঞানীজনকে জিজ্ঞেস করো।’ -সুরা নাহল : ৪৩

সুতরাং দ্বীন সম্পর্কে যার ভালো জানা আছে জিজ্ঞেস তাকেই করা। এক্ষেত্রে কেবল সনদ ও সার্টিফিকেট থাকা যথেষ্ট নয়। তিনি ব্যক্তিগতভাবে দ্বীন চর্চায় নিয়োজিত কি না তা লক্ষ রাখা। আর উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে করণীয় হলো, জানলে তা বলা। না জানলে স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া, বিষয়টি আমার জানা নেই।

লেখক : মুফতি ও ইসলামবিষয়ক লেখক

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION