রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:০২ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি : যে জলে আগুন জ্বলে

প্রভাষ আমিন:
আগুন লাগতেই পারে, দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব হলো, আগুন যাতে না লাগতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা। লাগলেও যাতে ক্ষয়ক্ষতি-প্রাণহানি কম হয়, তা নিশ্চিত করা।

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। প্রযুক্তিতে, বিজ্ঞানে মানব সভ্যতা এখন অনেক এগিয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু দুর্যোগ বা দুর্ঘটনার সামনে এখনো মানুষকে অসহায় মনে হয়।

মানুষ প্রতিটি ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়, যাতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এনটিভি ভবনে আগুন লাগার পর দেখা গেল আমাদের ফায়ার সার্ভিসের কাছে উঁচু ভবন থেকে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করার অত উঁচু মই নেই।
এই যেমন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগার ১৫ ঘণ্টা পর, যখন এই লেখা লিখছি, তখনো আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের প্রাণান্তকর চেষ্টা সত্ত্বেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।

যাচ্ছে না, কারণ আগুন যেখানে লেগেছে, সেই ডিপোর অনেক কন্টেইনারে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল। মারাত্মক সেই রাসায়নিক আগুনের ভয়াবহতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের সামনে সাধারণ পানি নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের অসহায় মনে হচ্ছিল। পানি দিয়ে এই রাসায়নিকের আগুন নেভানো যাবে না জেনেও ফায়ার সার্ভিসের সত্যিকারের বীর কর্মীরা আগুনে ঝাঁপ দিয়েছে।

এই লেখা পর্যন্ত অন্তত ৮ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী জীবন দিয়েছেন। তাদের জীবন দিয়েও যদি এই আগুন নিভতো বা বিপদজনকভাবে রাসায়নিক রাখা বন্ধ হতো; তাহলেও মনকে সান্ত্বনা দেওয়া যেত। কিন্তু আমি জানি, এই ৮ বীর কর্মীর জীবনের বিনিময়েও আমরা নিরাপদ হব না, আমরা শিখব না, নিজেদের প্রস্তুত করব না।

বাংলাদেশে যে এই প্রথম রাসায়নিকে আগুন লেগেছে তা কিন্তু নয়। ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জন মারা গিয়েছিল।

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনের আগুনে মারা গিয়েছিল ৭১ জন। এই দুটি ঘটনাই ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছিল রাসায়নিকের গুদামের কারণে।

সেইসময় তা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু পুরান ঢাকার জনবহুল এলাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম সরানো যায়নি। নিমতলী বা চুড়িহাট্টার মতো ভয়াবহ না হলেও রাসায়নিকের কারণে আগে-পরে আরও অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এত মানুষের মৃত্যুও আমাদের সতর্ক করেনি। একই ভবনে মানুষ আর রাসায়নিক থাকছে পাশাপাশি, যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যেই।

মানুষ প্রতিটি ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়, যাতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এনটিভি ভবনে আগুন লাগার পর দেখা গেল আমাদের ফায়ার সার্ভিসের কাছে উঁচু ভবন থেকে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করার অত উঁচু মই নেই।

সকল উন্নয়নের চেয়ে মানুষের জীবন মূল্যবান। রাসায়নিক ছাড়া আমাদের চলবে না। কিন্তু সেই রাসায়নিক যেন জনবহুল এলাকায় রাখা না হয়…
তারপর কিছু উঁচু মই কেনা হয়েছে। এখন যেভাবে ঢাকার ভবন আকাশ ছুঁতে চাচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে কত উঁচু মই দিয়ে মানুষ উদ্ধার করতে হবে, কে জানে।

নিমতলী, চুড়িহাট্টা থেকে আমরা শিক্ষা নেইনি। রাসায়নিকের আগুন নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা আমরা নেইনি। সাধারণ পানি দিয়ে এই রাসায়নিকের আগুন নেভানো যাবে না।

আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, বীর ফায়ার কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। কিন্তু সেই যুদ্ধে জেতার মতো আধুনিক অস্ত্র তো তাদের হাতে থাকতে হবে।

আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়ন হচ্ছে শনৈ শনৈ। উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা বা অগ্নিকাণ্ডের ধরন পাল্টাবে। কিন্তু উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে যদি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না নিতে পারি, তাহলে এই ধরনের ট্র্যাজেডির মুখোমুখি আরও হতে হবে।

সকল উন্নয়নের চেয়ে মানুষের জীবন মূল্যবান। রাসায়নিক ছাড়া আমাদের চলবে না। কিন্তু সেই রাসায়নিক যেন জনবহুল এলাকায় রাখা না হয়, যাতে পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা থাকে, রাসায়নিকের আগুন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা যেন থাকে; তা আগে নিশ্চিত করতে হবে। সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ড থেকে আমরা যেন সেই শিক্ষাটাই নেই।

প্রভাষ আমিন ।। বার্তা প্রধান, এটিএন নিউজ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION