শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

হজ-পরবর্তী জীবনের শিক্ষা

মুফতি এনায়েতুল্লাহ:

সৌদি আরব থেকে হজের ফিরতি ফ্লাইট শুরু হয়েছে। এবার বাংলাদেশ থেকে হজপালনের উদ্দেশ্যে ৩২ দিনে ১৬৫ ফ্লাইটে সৌদি আরব পৌঁছান ৬০ হাজার ১৪৬ হজযাত্রী। সংখ্যার বিচারে হজপালনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। বিগত দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে কোনো বাংলাদেশি হজপালন করতে পারেননি। এর আগে ২০১৯ সালে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯২৩ বাংলাদেশি হজপালন করেন। ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে হজপালনে যাওয়ার কথা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার জনের। কিন্তু করোনার কারণে সেবার কোনো বিদেশিকে হজপালনের অনুমতি দেয়নি সৌদি সরকার।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর হজপালন করতে যাওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সবাই তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী নির্দিষ্ট বছর হজে যেতে পারেন না। বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে এই সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ, কোন দেশ থেকে কত মানুষ হজে যেতে পারবেন, তার নির্দিষ্ট কোটা রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে হজপালনেচ্ছুকদের প্রায় দুই বছর আগে থেকে প্রক্রিয়া শুরু করতে হচ্ছে। যেমন বাংলাদেশ থেকে এই নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত হজ গমনেচ্ছু অপেক্ষমাণ প্রাক-নিবন্ধিতের সংখ্যা ২ লাখ ২৭ হাজার ১৫০ জন। তা আগামী হজ মৌসুমে সাড়ে তিন লাখ ছাড়াবে। এ কারণে বাংলাদেশ সৌদি আরবকে ক্রমাগত অনুরোধ করছে, হজের কোটা বাড়ানোর জন্য।

২০২০ সালের জন্য বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে হজ সংক্রান্ত যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, সেখানে বাংলাদেশিদের হজকোটা ১০ হাজার বাড়ানো হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালের হজে অন্তত দেড় লাখ বাংলাদেশি হজপালনের সুযোগ পাবেন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সংগঠন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন বা ওআইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হজের কোটা নির্ধারণের মূলনীতি প্রণয়ন করা হয়। সেই সিদ্ধান্ত মতে, প্রতি দশ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে এক হাজার জন হজে যেতে পারবেন। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা যেহেতু ১৮ কোটি, সেজন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর এক লাখ আশি হাজার মানুষের হজে যাওয়ার কথা। কিন্তু সৌদি আরব কাক্সিক্ষত হজকোটা না বাড়ানোর কারণে অনেকেই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হজে যেতে পারেন না।

মূলত মানুষের অর্থনৈতিক সামর্থ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় হজযাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। একই কারণে ওমরা পালনের প্রবণতা বেড়েছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ওমরা পালন করতে গিয়েছেন প্রায় এক লাখ নব্বই হাজার মানুষ। করোনার কারণে এর পরের দুই বছর ওমরা বন্ধ থাকার পর রমজানের আগে ওমরা ভিসা চালু করলে তিন মাসে অন্তত ৬০ হাজার বাংলাদেশি ওমরা পালন করেন। এই বিশাল পরিসংখ্যানে এটা স্পষ্ট, বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে হজপালনকারী রয়েছেন। এভাবে সমাজে নামাজ আদায়কারীর সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে ফরজ রোজার পাশাপাশি, নফল রোজা পালনকারীর সংখ্যাও। তার পরও সামগ্রিকভাবে সমাজে এর সুফল ও প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে না, সমাজ থেকে উল্লেখযোগ্যহারে পাপাচার কমছে না। ব্যক্তিগত, পারিবারিক এমনকি সামাজিক জীবনে একের পর এক সমস্যা লেগেই আছে; শান্তির দেখা নেই।

এমন কঠিন বাস্তবতার মাঝে পবিত্র হজপালন শেষে আল্লাহর বান্দারা দেশে ফিরে আসছেন। একটি ভূখণ্ডের জন্য এটা খুবই বরকতের বিষয়, এখান থেকে আল্লাহর বান্দারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে আল্লাহর ঘরের দিকে যান, এরপর আল্লাহর বিধান পালন করে সেই ভূখণ্ডে প্রত্যাবর্তন করেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘জনপদের অধিবাসীরা যদি জানত তাদের ওপর হজ আদায়কারীদের কী হক, যখন তারা তাদের কাছে ফিরে আসে, তাহলে তারা তাদের সওয়ারিগুলোকেও চুমু খেত! তারা তো সব মানুষের মধ্যে আল্লাহর প্রতিনিধিদল।’ -শোয়াবুল ইমান, বায়হাকি : ৮/৫৩

হজ আদায়ের সূত্রে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার যে সম্পর্ক এবং সম্পর্কের যে মর্যাদা, তা যেমন অন্যদের উপলব্ধির বিষয়, তেমনি যাদের হজের মতো মর্যাদাবান ইবাদত আদায়ের সৌভাগ্য হয়েছে তাদেরও উপলব্ধির বিষয়। এই মহাসম্পর্কের মর্যাদা উপলব্ধি করতে পারলেই তা রক্ষার ব্যাপারে যতœবান হওয়া যাবে। আর জীবনের কোনো কাজকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। মনুষ্যজীবনের কোনো কিছুই হালকা নয়। কারণ তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত এবং সেই মুহূর্তের কাজের বিষয়ে জবাবদিহির বিষয় আছে। জীবনের কাজগুলো ভালো হোক বা মন্দ, কিছুতেই গুরুত্বহীন নয়; যেকোনো মানুষের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি সত্য এবং মানুষমাত্রেরই এই বাস্তবতা উপলব্ধি করা প্রয়োজন।

মুমিন বিশ্বাস করে, প্রত্যেকের জন্য বিশ্বাস ও কর্মের ওই পথটি সহজ করে দেওয়া হয়, যে পথের শেষ পরিণামের জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কাজেই সে যখন পুণ্য ও ভালোর পথে চলার তওফিকপ্রাপ্ত হয় তখন তার মনে উত্তম পরিণামের প্রত্যাশা জন্ম নেয়। তার মন আনন্দে ভরে ওঠে এবং এই পথে অটল থাকার চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করে।

কাজেই কোনো ভালো কাজের সুযোগ হলে সেটার গুরুত্ব ও মর্যাদা উপলব্ধি এবং সেই মর্যাদা ও গুরুত্ব রক্ষা প্রয়োজন। ছোট-বড় সব ভালো কাজের ব্যাপারেই একথা প্রযোজ্য। হজ তো বড় কাজগুলোর মধ্যে ওপরের দিকের একটি মর্যাদাপূর্ণ বড় কাজ। এটি একটি ফরজ আমল, ইসলামের অন্যতম প্রধান রোকন। কাজেই এই আমলের মর্যাদা রক্ষার চেষ্টা অবশ্য কর্তব্য।

হজ এবং অন্যান্য ইবাদত ও নেক আমলের মর্যাদা রক্ষার সাধারণ উপায় হচ্ছে- আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের পথে অবিচল থাকা। নিজের বিশ্বাস ও কর্মের বিশ্লেষণ করে ভুল-ত্রুটিগুলো সংশোধনের চেষ্টা করা। বর্তমান দ্বীনদারি রক্ষা করা এবং প্রতিদিন কিছু পরিমাণে হলেও উন্নতির চেষ্টা করা। হজের সামগ্রিক আমলের মধ্যে এমন উপাদান অনেক রয়েছে, তা সঠিকভাবে উপলব্ধি করলে তা আমাদের সামনের জীবনের জন্য প্রেরণার ও পথ প্রদর্শনের আলোকবর্তিকা হতে পারে। সদ্য হজপালনকারীসহ অন্য হাজিরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে অনুধাবন করলে সমাজ আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠবে। আসবে কাক্সিক্ষত পরিবর্তন।

লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION