শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩৪ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

অবৈধ সম্পদের দান

মুফতি এনায়েতুল্লাহ:
পবিত্র কোরআন-হাদিসে অতি গুরুত্বের সঙ্গে লেনদেনে পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্নভাবে ও নানা আঙ্গিকে এ ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। যারা মানুষের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, পূর্ণমাত্রায় নেয়। আর যখন অন্যকে মেপে দেয়, তখন কমিয়ে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না, তাদের এক মহাদিবসে জীবিত করে ওঠানো হবে? যেদিন সমস্ত মানুষ সৃষ্টিকুলের রবের সামনে দাঁড়াবে।’ সুরা মুতাফফিফিন : ১-৬

এতিম-অনাথদের সম্পদ সম্পর্কে সতর্ক করতে গিয়ে কোরআন মাজিদে লেনদেনের অনেক বড় মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এতিমদের তাদের সম্পদ দিয়ে দাও। আর ভালো মালকে মন্দ মাল দ্বারা পরিবর্তন কোরো না। তাদের (এতিম) সম্পদকে নিজেদের সম্পদের সঙ্গে মিশিয়ে খেয়ো না। নিশ্চয়ই তা মহাপাপ।’ সুরা আন নিসা : ২

অন্য আয়াতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা এতিমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে, তারা নিজেদের পেটে কেবল আগুন ভর্তি করে। তারা অচিরেই এক জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।’ সুরা নিসা : ১০

এক আয়াতে পরস্পর সন্তুষ্টির ভিত্তিতে বেচাকেনাকে বৈধতা দিয়ে সম্পদ উপার্জনের অন্য সব অন্যায় পদ্ধতিকে হারাম ঘোষণা করে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা পরস্পরে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না। তবে পারস্পরিক সম্মতিক্রমে কোনো ব্যবসা করা হলে (তা জায়েজ)।’ সুরা আন নিসা : ২৯

কোনো সম্পদ শুধু বিচারকের কাছ থেকে নিজের নামে ফায়সালা করে নিলেই তা বৈধ হয়ে যায় না; বরং পন্থাও বৈধ হতে হয় এবং বাস্তবেই নিজে ওই সম্পদের হকদার হতে হয়। এ বিষয়ে কোরআনের নির্দেশনা হলো ‘তোমরা পরস্পর একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ কোরো না এবং বিচারকের কাছে সে সম্পর্কে এই উদ্দেশ্যে মামলা রুজু কোরো না যে, মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনে-শুনে পাপের পথে গ্রাস করবে।’ সুরা আল বাকারা : ১৮৮

ক্রয়-বিক্রয়সহ বিভিন্ন সময় মানুষ নানা ধরনের চুক্তিতে আবদ্ধ হন। সেসব চুক্তি পূর্ণ করার ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা অঙ্গীকার পূরণ করো। অর্থাৎ লেনদেনের বিভিন্ন অঙ্গীকার ও অন্যান্য অঙ্গীকার।’ সুরা মায়েদা : ১

অনেকে আমাদের কাছে বিভিন্ন জিনিস আমানত রাখে। আবার বিভিন্ন সময় নানা প্রয়োজনে আমরাও অনেক কিছু ধার-কর্জ করি। অথবা যে কোনোভাবে অপরের কোনো জিনিস আমাদের কাছে থাকে; এ অবস্থায় পাওনাদারের জিনিস বিশ্বস্ততার সঙ্গে তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুসলিমরা! নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ করছেন, তোমরা আমানত ও পাওনা তার হকদারকে আদায় করে দেবে। আর যখন মানুষের মধ্যে বিচার করবে; ইনসাফের সঙ্গে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদের যে উপদেশ দেন তা কতই না উৎকৃষ্ট! নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন।’ সুরা নিসা : ৫৮

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মহান আল্লাহ পবিত্রতা ছাড়া নামাজ কবুল করেন না এবং আত্মসাতের মালের সদকা কবুল করেন না।’ সহিহ মুসলিম : ২২৪

এর বিপরীতে হালাল ও বৈধ সম্পদ সদকার ব্যাপারে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ কেবল (হারামের মিশ্রণ থেকে) পবিত্র বস্তুই কবুল করেন। যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে এক মুষ্টি খেজুরও দান করে আল্লাহ তা নিজ হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর তা ওই ব্যক্তির জন্য প্রতিপালন করতে থাকেন। যেমন তোমাদের কেউ উটের বাচ্চা প্রতিপালন করে। বৃদ্ধি পেতে পেতে এক সময় ওই সামান্য খেজুরমুষ্টি পাহাড়সম হয়ে যায়।’ সহিহ বোখারি : ১৪১০

অন্য হাদিসে আরও বলা হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যখন তুমি তোমার সম্পদের জাকাত আদায় করলে তখন তুমি এ সম্পদের ব্যাপারে তোমার অবশ্য করণীয় বিধান পালন করলে। যে ব্যক্তি হারাম মাল উপার্জন করবে, অতঃপর তা সদকা করবে সেই সদকায় তার কোনো সওয়াব হবে না; বরং অবৈধ উপার্জনের পাপের বোঝা তার ঘাড়ে চেপেই থাকবে।’ সহিহ ইবনে হিব্বান : ৩২১৬

সুতরাং যারা হারাম পথে সম্পদ উপার্জন করে আর মনে মনে ভাবে, এখান থেকে কিছু সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেব; ব্যস, সাত খুন মাফ, তাদের উচিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই বাণীগুলো ভালোভাবে স্মরণ রাখা। এ বিষয়ে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর একটি শিক্ষণীয় ঘটনা আছে।

তার সময়ে বসরার আমির ছিলেন আবদুল্লাহ বিন আমের। তিনি মুসলমানদের বায়তুল মাল থেকে তার প্রাপ্যের চেয়ে বেশি গ্রহণ করতেন। কিন্তু তার স্বভাব ছিল, তিনি এসব সম্পদ গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন, মসজিদ নির্মাণের কাজে খরচ করতেন, বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করতেন। যখন তিনি মৃত্যুশয্যায় উপনীত হলেন তখন লোকজন তার চারপাশে ভিড় জমাল এবং তার দান-দাক্ষিণ্য ও মানুষের প্রতি তার অনুগ্রহের ভূয়সী প্রশংসা করতে লাগল। কিন্তু ইবনে ওমর (রা.) চুপচাপ রইলেন।

যখন বসরার আমির ইবনে আমের স্বয়ং তাকে কথা বলতে ও নিজের জন্য দোয়া করতে আবেদন করলেন; তখন তিনি তাকে নবীজির একটি হাদিস শোনালেন, ‘মহান আল্লাহ আত্মসাতের মালের সদকা কবুল করেন না। অতঃপর তাকে বললেন, তুমি তো বসরা শহরেরই আমির ছিলে। অর্থাৎ আমি তোমার কীর্তি-কর্ম সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত যে, তুমি বায়তুল মালের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রহণ করতে। সুতরাং কীভাবে তোমার এসব দান-সদকা কবুল হবে? আর তোমার জন্য দোয়া করলে সেই দোয়া বা কীভাবে কবুল হবে? সহিহ মুসলিম : ২২৪

লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION