শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:১৫ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

বিধবা ও বিপত্নীকের বিয়ে

মুফতি এনায়েতুল্লাহ:
জীবনসঙ্গীর মৃত্যু শোকাবহ ও কষ্টদায়ক। ব্যক্তিজীবনে মানুষকে তা একা ও নিঃসঙ্গ করে দেয়। এই নিঃসঙ্গতা কাটাতে বিধবা ও বিপত্নীকের জন্য বিয়ে জরুরি। তবে আমাদের সমাজের বাস্তবতা হলোবেশিরভাগ নারী স্বামী মারা গেলে নানাবিধ প্রতিকূলতা নীরবে সহ্য করে সন্তানদের নিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দেন। কিন্তু পুরুষদের অনেকেই দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিপত্নীক, বিধবা কিংবা ডিভোর্স হলে যেকোনো বয়সে আবার বিয়ে করা মনস্তাত্ত্বিকভাবে একটি দরকারি পদক্ষেপ। না হলে নানা সংকটে জড়িয়ে যেতে থাকেন ভুক্তভোগী। অনেককেই দেখা গেছে, অনৈতিক যৌনতা, মাদক ও অপরাধজগতের জালে জড়াতে। একাকিত্বের চাপ নিতে না পেরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং বিষণ্নতায় অনেকে আবার আত্মহননের মতো পথ বেছে নেন। একা থাকার কারণে সৃষ্টি হয় দৈহিক সমস্যা, যা চক্রবৃদ্ধি হারে জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে। তাই বিধবা, বিপত্নীক ও ডিভোর্সিদের পুনরায় বিয়ে করা উচিত। এক্ষেত্রে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলেও অভিভাবক, পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধব থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজনদের এগিয়ে এসে কার্যকর ভূমিকা রাখা দরকার। পুনরায় বিয়ে নারী-পুরুষের যৌক্তিক আইনি ও ধর্মীয় অধিকার। এটা নবজীবনের সন্ধান দেয়।

আমাদের দেশে অনেক বিধবার স্বামীর বাড়িতে স্থান হয় না। তাকে স্বামীর উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। ফলে তাকে বাধ্য হয়ে বাপ-ভাই কিংবা অন্য আত্মীয়-স্বজনের আশ্রয়ে থাকতে হয়। ইদানীং অবশ্য অনেকে একা থাকেন, কেউ বৃদ্ধাশ্রমে চলে যান। তবে এ সংখ্যা খুবই কম। স্বামীর বাড়ি হোক আর যেখানেই হোক বিধবা নারীকে অনেক সময় খাওয়ার সময় ডাকা হয় না, নিষিদ্ধ করা হয় পুষ্টিকর খাবার। কাপড় পরিধান থেকে শুরু করে সাজগোজ, খাবার-দাবার ও চলাফেরায় নেমে আসে নানারকম বিধিনিষেধ। যদিও এখন অনেক বিধবা আর এসব রীতি মানেন না। তবে যারা দরিদ্র তারা সে সাহস দেখাতে পারেন না, বাধ্য হয়ে এখনো তাদের সেসব মানতে হয়।

বিধবাদের সঙ্গে যেসব অমানবিক আচরণ করা হয়, তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমান। তবে দেরিতে হলে বিভিন্ন দেশে বিধবাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে কিংবা সমাজে তাদের পুনর্বাসন করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো দেশে বিধবা বিবাহে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সরকার নানা সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। জীবনসঙ্গী হারানোর পর একজন মানুষ যখন প্রবলভাবে নিঃসঙ্গ হয়ে যান, সেখানে সামাজিকতা কিংবা প্রথা মানার দোহাই দিয়ে নারীকে এভাবে কষ্ট দেওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামের দৃষ্টিতে বিধবার রয়েছে সব ধরনের অধিকার। স্বামীর সম্পদে তার বৈধ অধিকার রয়েছে, সমাজে তার গুরুত্ব আছে। ইচ্ছে করলে তিনি পুনরায় বিয়ে করার অধিকার রাখেন।

এতিম, মিসকিন ও বিধবাদের প্রয়োজন পূরণে সহযোগিতা করা হাদিসের ভাষায় ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’ এবং দিনের বেলায় রোজা রাখা ও রাতের বেলায় নফল নামাজ আদায়ের সমতুল্য। এ প্রসঙ্গে এক হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি স্বামীহীন নারী ও মিসকিনদের সহযোগিতার জন্য পরিশ্রম করে সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর মতো এবং ওই ব্যক্তির সমতুল্য যে দিনের বেলায় রোজা রাখে এবং রাতের বেলায় নফল নামাজ আদায় করে।’ সহিহ বোখারি : ৫৩৫৩

আরেক হাদিসে নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘স্বপ্নে আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম, সেখানে নুয়াইমের কাশির শব্দ শুনতে পেলাম।’জামেউল মাসানিদ : ৯৫৭৫

হাদিসের ব্যাখ্যাকাররা বলেছেন, হজরত নুয়াইম ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) ইচ্ছা ও প্রস্তুতি সত্ত্বেও হিজরতের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ আমল পরিত্যাগ করেছেন এতিম ও বিধবাদের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি অত্যন্ত মাহাত্ম্যপূর্ণ কাজ। কোরআন-হাদিসে এতিম, মিসকিন ও বিধবাদের সাহায্য-সহযোগিতা, দান-সদকা ও তাদের প্রতি সদয় আচরণের খুব তাগিদ দেওয়া হয়েছে এবং অসীম পুণ্য ও উত্তম প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ওই সাহাবির আমল এবং তার জান্নাত লাভের সুসংবাদ তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

নবী কারিম (সা.)-এর স্ত্রীদের মধ্যে হজরত আয়েশা (রা.) ছাড়া অন্যসব স্ত্রী ছিলেন বিধবা কিংবা তালাকপ্রাপ্ত। কোরআনে কারিমে বিধবা নারীদের বিয়ে সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং তাদের নিজেদের স্ত্রীদের রেখে যাবে, সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেরা চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা (ইদ্দত পালন) করবে। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতিসংগত ব্যবস্থা নিলে কোনো পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি রয়েছে।’ সুরা বাকারা : ২৩৪

বিধবার অধিকার বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে ইমানদাররা! নারীদের জোরপূর্বক উত্তরাধিকারের পণ্য হিসেবে গ্রহণ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয় এবং তোমরা তাদের যা প্রদান করেছ তার কোনো অংশ তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের আটকে রেখো না; যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে জীবনযাপন করো, এমনকি তোমরা যদি তাদের পছন্দ নাও করো, এমনও তো হতে পারে যা তোমরা অপছন্দ করো, তাতেই আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন।’সুরা নিসা : ১৯

বিধবাকে সারা জীবন বিয়ে ছাড়া একাকী জীবন কাটাতে হবে এমন কোনোরূপ বাধ্যবাধকতা ইসলামে নেই। বিধবা বিয়ে সম্পর্কে কোরআনে কারিমে নানাভাবে উপদেশ ও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। ইসলাম বলে বিধবা নারী যাকে খুশি তাকে বিয়ে করতে পারবে। ইসলাম কোনো বিধবাকে ঘৃণা কিংবা অবজ্ঞার চোখে দেখে না। আর বিধবার অন্যত্র বিয়ে হলেও সে আগের স্বামীর উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে

মাতৃভাষা-নিয়ে-ইসলামের-স্

স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবার বিয়ের ব্যবস্থা না করা একটি অন্যায় চিন্তা। মনে রাখবেন, যাদের তত্ত্বাবধানে কোনো বিধবা বা ডিভোর্সি নারী কিংবা বিপত্নীক রয়েছে তাদের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বাস্তবিক কোনো সমস্যা না থাকলে (সামাজিক প্রতিবন্ধকতা কখনোই কোনো সমস্যা নয়) তার বিয়ের ব্যবস্থা করা। এতে বিভিন্ন উপকারিতার পাশাপাশি রাসুলের সুন্নত পরিপালনের সওয়াব অর্জিত হবে।

লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION