শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:১৭ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ছাত্রলীগ নিয়ে এত সমালোচনা কেন?

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা:

ছাত্রলীগ শব্দটি লিখে গুগলে সার্চ দিলে অসংখ্য শিরোনাম চলে আসে। প্রথম কয়েকটি এমন—‘চবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর ক্ষোভ, ফটকে তালা’, ‘বরগুনায় ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে নৈরাজ্য’, ‘কালিয়াকৈরে ছাত্রলীগের তিন কমিটি’, ‘কমিটি গঠন নিয়ে অনিশ্চয়তায় ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রলীগ’।

আরও অনেক শিরোনাম আছে যেগুলোর কোনোটিই ইতিবাচক নয়। তাই বলে এই কথা নিশ্চয়ই বলা যাবে না যে, ছাত্রলীগ কোনো ভালো কাজ করে না। নিশ্চয়ই করে। উপরে উল্লেখিত শিরোনামগুলোর মধ্যে শেষের শিরোনামটি প্রণিধানযোগ্য।
কমিটি গঠন না করা, করলেও বিরোধ মেটাতে না পারা, গণতান্ত্রিক পথে সম্মেলন না করে প্রেস রিলিজ দিয়ে কমিটি করায় সংগঠনের ক্ষতি হচ্ছে। সংগঠনের ভেতর থেকে অনেক নিবেদিত প্রাণ কর্মী ও নেতা যোগাযোগ করেন, তারা তাদের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেই কথা বলার চেষ্টা করেন।

ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নানা কারণে আলোচিত। সংগঠনটি প্রায় এক যুগ ধরে অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত হয়েছে। এবার আবার গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা নিয়ে।

ছাত্রলীগের পদ বঞ্চিতরা ৩৫ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে রেখেছিল। এতে নয়টির মতো পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। একটা পরীক্ষা সময় মতো না হলে একজন শিক্ষার্থীর কতটা ক্ষতি হয়, তিনি কতটা আহত হন সেটা রাজনীতির উন্মত্ততায় যারা উদ্ভ্রান্ত থাকেন তারা বুঝবেন না।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন এসেছে ছাত্রলীগের পদ আগ্রহীরা কোন অধিকারে বিশ্ববিদ্যালয়কে জিম্মি করে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের ক্ষতি করে? খোদ শিক্ষা-উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল যিনি নিজেও চট্টগ্রামের সন্তান, পদ বঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতাদের এই আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নানা কারণে আলোচিত। সংগঠনটি প্রায় এক যুগ ধরে অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত হয়েছে…
যারা পদ পাননি, তারা বেশকিছু অভিযোগ তুলেছেন এই কমিটি নিয়ে। তাদের বক্তব্য হলো গঠনতন্তের বাইরে গিয়ে অছাত্র ও বিবাহিতদের পদ দেওয়া হয়েছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পছন্দের লোকদের প্রাধান্য দিয়েছেন। প্রতিবাদকারীরা আরও বলেছেন– মাদকসেবীও আছে কমিটিতে।

এরকম ক্ষোভ ও বঞ্চনার কথা কথা প্রায়ই শোনা যায় কোথাও না কোথাও কমিটি হলেই। ভাবনার বিষয় এই যে, এসব অভিযোগ কোনো বিরোধী ছাত্র সংগঠন থেকে আসছে না। খোদ দলের ভেতর থেকেই এসেছে অভিযোগগুলো।

এগুলো কতটা সত্য, কতটা মিথ্যা সেটি সংগঠন ও দল খতিয়ে দেখবে বা ব্যবস্থা নেবে কি না সেটা তাদের এখতিয়ার। কিন্তু একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠন তার কমিটি পূর্ণ করতে এত সময় নিল কেন? আর যাও করল, সেটা নিয়ে এত ক্ষোভ ও প্রতিবাদ হলো কেন?

পরিষ্কার বোঝা যায় দলের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা আর শৃঙ্খলা অনেক আলগা হয়ে গেছে। ‘পদ পেতেই হবে’ বা ‘পদ ছাড়া যাবে না’—এই মনোভাব রাজনীতি নয়, ক্ষমতার মোহ। দল যেহেতু এখন ক্ষমতায় তাই পদ চাই যেকোনো মূল্যে।

সামগ্রিকভাবে ছাত্র রাজনীতি নিয়েই প্রশ্ন উঠে এসব দেখে। প্রশ্ন উঠে ছাত্র রাজনীতি আসলে কোন রাজনীতি। দেশের বর্তমান সাংবিধানিক আইন অনুসারে ১৮ বছর বয়স হলেই যেকোনো নাগরিক নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার অর্জন করেন। ভোট দেওয়ার অধিকারের পেছনে যে গণতান্ত্রিক যুক্তি রয়েছে, তা হলো, নির্বাচনী গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের মতামতের মূল্য সমান। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ১৮ বা তার চেয়ে বেশি বয়সের শিক্ষার্থীরা রাজনীতি করবে এটা স্বাভাবিক। আর এই কারণেই ছাত্ররা রাজনীতি করবে। কিন্তু তারা কোন রাজনীতি করবে প্রশ্ন হলো সেটি। দলের লেজুড়বৃত্তি করে চাঁদাবাজি বা সন্ত্রাসী হবে, সহিংস আচরণ করবে, নাকি ভবিষ্যতের একজন সুরাজনীতিক হবে?

ক্যাম্পাসে ভালো রাজনীতি হয় না সেই কথা কেউ বলবে না। কিছু কিছু ভালো কাজ নিশ্চয়ই হয়। কিন্তু ক্ষমতা কাঠামোর ভেতরে থেকে, সব সুবিধা আর ক্ষমতা উপভোগ করে যে সংগঠন রাজনীতি করে তার রাজনীতি কতটা রাজনীতি? যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, তার দলের ছাত্র সংগঠনের দাপটে ক্যাম্পাস গণতন্ত্র বলে একটা ধারণা আছে তা নাই হয়ে গেছে।

যারা নেতা হন, সিন্ডিকেটের প্রভাবে বা যোগসাজশে তাদের সঙ্গে বহিরাগতদের যোগাযোগ বেশি, এরা ক্যাম্পাসভিত্তিক একাডেমিক পরিসরের কাজ করার চেয়ে অর্থ উপার্জনে পারদর্শী বেশি। এরা পদ বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য করেন।
ছাত্ররা গণতান্ত্রিক উপায়ে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে, এটাই প্রত্যাশিত। ছাত্রলীগের কমিটি হবে তাদের কর্মীদের প্রত্যক্ষ ভোটে। সেই আয়োজন এখন আর দেখা যায় না। কমিটি আসে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে যেখানে আবার মুরুব্বিদের হাত থাকে অনেক বেশি।

প্রত্যক্ষ ভোটে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের বিধান না থাকায় যারা নেতা হন, সিন্ডিকেটের প্রভাবে বা যোগসাজশে তাদের সঙ্গে বহিরাগতদের যোগাযোগ বেশি, এরা ক্যাম্পাসভিত্তিক একাডেমিক পরিসরের কাজ করার চেয়ে অর্থ উপার্জনে পারদর্শী বেশি। এরা পদ বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য করেন। এর নাম রাজনীতি নয়, রাজনীতির নামে পরিহাস।

আমার দৃষ্টিতে এই অবস্থা আসলে ছাত্র রাজনীতির পরাজয়। ছাত্র সংগঠনগুলো এমনই পরাজিত যে, তারা যে দলের সমর্থনপুষ্ট সেই বড় রাজনৈতিক দলের বা নেতাদের সমালোচনা করার সাহসও রাখে না।

যে ষাটের দশককে ছাত্র রাজনীতির উজ্জ্বল সময় বলা হয়, তখন এই ছাত্রলীগসহ সব সংগঠনই মূল দলের বাইরে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল। আর সেই কারণেই জনগণের সমর্থনও ছিল তাদের দিকে।

সেই সময়ের ছাত্র আন্দোলনকে বলা হতো ‘ছাত্র-জনতার’ আন্দোলন। আজ ছাত্র আন্দোলন নেই, জনতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই এই রাজনীতির, এমনকি ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন করা ছাড়া ক্ষমতাকেন্দ্রিক ছাত্র রাজনীতির সম্পর্ক সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেও নেই।

ছাত্রছাত্রীরা যদি একটি ভালো রাজনৈতিক সংস্কৃতি না পায় তাহলে আমাদের আগামী রাজনীতি কেমন হবে সেটা ভাবলে অন্ধকার দেখতে হয়।

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা : প্রধান সম্পাদক, গ্লোবাল টেলিভিশন

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION