শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের সরকার ও একজন শিক্ষকের ভূমিকা 

জাহাঙ্গীর আলম ছিদ্দিকী, সহকারি শিক্ষক

জাহাঙ্গীর আলম ছিদ্দিকী:

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ১০টি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

উদ্যোগ-১ একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প।
উদ্যোগ – ২ আশ্রয়ণ প্রকল্প।
উদ্যোগ – ৩ ডিজিটাল বাংলাদেশ ।
উদ্যোগ-৪ শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি।
উদ্যোগ-৫ নারীর ক্ষমতায়ন।
উদ্যোগ -৬ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ।
উদ্যোগ -৭ কমিউনিটি ক্লিনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য।
উদ্যোগ – ৮ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি।
উদ্যোগ-৯ বিনিয়োগ বিকাশ।
উদ্যোগ-১০ পরিবেশ সুরক্ষা।
তদমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও শিক্ষাকে অগ্রধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশ :
শেখ হাসিনার উপহার
ডিজিটাল সরকার।

বঙ্গবন্ধু সুখী-স্বনির্ভর ‘সোনার বাংলা’ গড়তে চেয়েছিলেন। সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই সময়োপযোগী ডিজিটাল কর্মসূচি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর মধ্যম আয়ের দেশ। সেই লক্ষ্য পূরণে জাতি অঙ্গীকারবদ্ধ। জনগণের দোরগোড়ায় অনলাইন রাষ্ট্রীয় সেবা পৌঁছানো এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য যাতে ভোগান্তিবিহীন, দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছতার সাথে স্বল্পতম সময়ে জনগণের কাছে সেবা পৌঁছানো যায়। মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে পৌঁছানো এবং সরকারি যাবতীয় তথ্য ও সেবাকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জনগণের কাছে তুলে ধরা-এ উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য।

অর্জন :
১। ৪৫৫৪টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, ৩৮৮ টি উপজেলা ডিজিটাল সেন্টার, ৬১টি জেলা ডিজিটাল সেন্টার, ৩২৫ টি পৌর ডিজিটাল সেন্টার ও ৪০৭ টি নগর ডিজিটাল সেন্টারসহ এযাবৎ ৫,৭৩৫টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এ সকল তথ্য সেবাকেন্দ্র থেকে অনলাইনে ১১৬ ধরনের সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
২। সারাদেশে স্থাপিত ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে রুরাল ই-কমার্স কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
৩। ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশের ফলে বর্তমানে দেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি এবং ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি।
৪। ৪৩ হাজার অফিস ও ২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল জাতীয় তথ্য বাতায়ন চালু হয়েছে।
৫। জীবন-জীবিকাভিত্তিক তথ্য এক জায়গা থেকে খুঁজে পেতে বাংলা ভাষায় জাতীয় ই-তথ্যকোষ চালু হয়েছে।
৬। ২৩,৫০০টি মাধ্যমিক, ৫,৫০০টি মাদ্রাসা ও ১৫,০০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপিত হয়েছে।
৭। ১ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত সকল পাঠপুস্তক অনলাইনে প্রাপ্তির জন্য ই-বুক প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে।
৮। ওয়েবসাইট ও এসএমএস এর মাধ্যমে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও ভর্তি প্রক্রিয়া চালু হয়েছে।
৯। দেশের সকল ভূমি রেকডূ (খতিয়ান)- কে ডিজিটাল করার উদ্দেশ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ডিজিটাল ল্যান্ড রেকর্ডরুম সার্ভিস শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
১০। ১,৩৫৫টি সরকারি অফিসে ই-ফাইলিং চালু হয়েছে।
১১। ই-পেমেন্ট ও অনলাইন ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে।
১২। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস (ইএমটিএস) এর মাধ্যমে জুন ২০১৭ পর্যন্ত ৭,১২৫ কোটি টাকা প্রেরণ করেছে।
১৩। পোস্টাল ক্যাশ কার্ডের মাধ্যমে টাকা জমা-উত্তোলন ও ট্রান্সফারসহ নির্দিষ্ট আউটলেট থেকে কেনাকাটা সম্ভব হচ্ছে।
১৪। ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা, টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে একজন নাগরিক বিনামূল্যে এবং সহজে স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ নিতে পারছেন।
১৫। বাংলাদেশ রেলওয়ে অনলাইন ও মোবাইল টিকেটিং সেবা চালু করেছে।
১৬। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য প্রথানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরষ্কার অর্জন করেছেন।
১৭। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশির ভাগ বিদ্যালয়ের ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা :
১। আইসিটি খাতে গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে ব্যয় জিডিপির ০.৬ শতাংশ থেকে ১ শতাংশে উন্নীতকরণ।
২। ২০১৮ সালের মধ্যে আইসিটি খাত থেকে বৈদেশিক আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
৩। ব্রডব্যান্ড কভারেজ ৩০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশে উন্নীতকরণ।
৪। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, পৌর ও নগর পর্যায়ে আলো ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা এবং সেবার পরিধি সম্প্রসারণ করা।
৫। প্রাথমিকে সকল বিদ্যালয়ে আরো কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন।

শিক্ষা:
শিক্ষিত জাতি সমৃদ্ধ দেশ
শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধু শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। তাঁর উদ্যোগে যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশে ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিকজ বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। সে সময় সরকারি শিক্ষকের পদমর্যাদা লাভ করেন দেশের ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭২৪ জন শিক্ষক।
এই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। যার সুফল লাভ করছে শিক্ষার্থীরা।
এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য হচ্ছে স্কুল যাওয়ার বয়সি শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়ে আনয়ন, প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবতেদায়ী, াদাখিল ও এসএসসি পর্যায়ে বিনামূল্যে পাঠ্যবই সরবারাহ, মেয়েদের বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ এবং শিক্ষা সহায়তা উপবৃত্তি প্রদান, সকল শ্রেণির মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা সহায়তা বৃত্তি প্রদান, পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ জাতীয়করণ করা এবং আইটিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনসহ শ্রেণিকক্ষসমূহে মাল্টিমিডিয়া ও ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিতকরণ।

অর্জন :
১. দেশে শিক্ষার হার গত ৮ বছরের ৪৪ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭২.৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
২। গত ৮ বছরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, এবতেদায়ী, দাখিল ও এসএসসি
পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে মোট ১৯০ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছে।
৩। ১ জানুয়ারি ২০১৭ সালে ৪.২৭ কোটি শিক্ষার্থীর মাঝে বিনামূল্যে ৩৬ কোটি ২২ লক্ষ বই বিতরণ করা হয়েছে।
৪। ২০১৬ -১৭ অর্থবছরে প্রাথমিক স্তরের ১ কোটি ৭ লক্ষ শিক্ষার্থীর মাঝে প্রথম কিস্তিতে ২৮৭ কোটি টাকার উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
৫। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পঞ্চম শ্রেণিতে সাধারণ ও ট্যালেন্টপুলে মোট ৮২,৪৫৪ জনকে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
৬। ২৬,১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে।
৭। এ পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষকের চাকটি জাতীয়করণ করা হয়েছে
৮। সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার ১৭২টি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।
৯। অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির জন্য এযাবৎ ৫,৫৪৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
১০। পাঠ্যপুস্তকের অনলাইন ভার্সন তৈরি করা হয়েছে।
১১। ১ জানুয়ারিতে বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ শিশুদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে ব্যয় বাহুল্য বই শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রদান করা হয়েছে।
১২। ২০১৫ সাল থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের ব্রেইল পদ্ধতির বই বিতরণ করা হচ্ছে।
১৩। ১৭ লক্ষ শিক্ষককে কম্পিউটার, ইংরেজি, গণিতসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা :
১। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার হার শতভাগে উন্নীতকরণ ও গুণগত শিক্ষানিশ্চিতকরণ।
২। প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুল ফিডিং কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ঝরে পড়া রোধ, পুষ্টি সহায়তা ও শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করা।
৩। যে সকল উপজেলায় সরকারি স্কুল ও কেলজ নেই সে সকল উপজেলায় একটি স্কুল ও একটি কলেজ জাতীয়করণ করা।
৪। অটিস্টিক ও স্নায়ু বিকাশ সমস্যা জনিত শিশুদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিকমানের ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডায়াবিলিটিজ প্রতিষ্ঠা করা হবে।

বর্তমান সরকার শিক্ষার উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করায় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে।
রাতারাতি এত উন্নতির বিষয়টিকে নিয়ে আজ পৃথিবীর দরিদ্র ও উন্নয়নশীল অনেক দেশ আমাদেরকে নিয়ে গবেষণা করছে। বিশেষ করে একটি যুগপোযোগি শিক্ষানীতি প্রণয়ন শিক্ষা ব্যবস্থায় গতিশীলতা এনে দিয়েছে।

সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সকল জ্ঞানী,গুণী, দার্শনিক সবাই শিক্ষাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলো শিক্ষাকেই অগ্রাধিকার দেয়ায় আজ শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন। আমরাও এক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকতে চাই না। জাতির মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আলোকিত সমাজ ও বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রত্যেককেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে গুরু দায়িত্ব পালন করতে হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির ক্ষেত্রে সকল পেশার মানুষ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।আমরা আমাদের অবস্থান থেকে শিক্ষার উন্নয়নে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলে কোন ভাবেই পিছিয়ে থাকার কথা নয়। এক্ষেত্রে বেশী ভূমিকা পালন করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষাদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক সমাজ।

বাংলাদেশ পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে একটি। এখনো আমাদের দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে ঝরে পড়া থেকে শিশুদেরকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি ভাবে অনেক সংগঠন ও সংস্থা শিশুদেরকে স্কুলগামী করতে অর্থাৎ ঝরেপড়া থেকে শিশুদেরকে রক্ষার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সুপ্ত প্রতিভার অধিকারী শিশুদেরকে নিয়ে আমরা অনেক স্বপ্ন দেখি।

আমরা এ শিশুদের দিকে তাকালে দেখতে পাই তাদের মধ্যে লুকিয়ে আছে জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের মধ্যে কেহ প্রশাসনিক পর্যায়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হবে, কেহ জনপ্রতিনিধি হবে, কেহ রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গুরু দায়িত্ব পালন করবে, এমন স্বপ্ন দেখাটা স্বাভাবিক।

এ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা যিনি পালন করতে হবে তিনি হচ্ছেন আমাদের দেশের প্রাথমিক পর্যায়ের একজন শিক্ষক।

শিশুদের শুরুটা যদি ভাল না হয় তা হলে আমাদের কোন স্বপ্নই বাস্তবের মুখ দেখবে না। বাংলাদেশের প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দৈনন্দিন নানাবিধ সমস্যার মধ্য থেকেও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ও দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। শিক্ষার মূল ভিত্তি প্রাথমিক শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে এদেশের শিক্ষক সমাজের ঐতিহাসিক ভূমিকা জাতিকে সামনের দিকে অগ্রসর করতে সব সময়ই প্রশংসার দাবী রেখেছে। তারপরও শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে একজন শিক্ষকের অনেক দায় দায়িত্ব রয়েছে।
বর্তমান এ তথ্য প্রযুক্তির যুগে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অনেক চাহিদা রয়েছে। আমরা দেখি অনেক পরিবারের শিশুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পূর্বেই মোবাইল, কম্পিউটার ইত্যাদি বিষয়ে নিজেকে পরিচিত করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। একজন শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তাকে স্কুলে ধরে রাখতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হয় সেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে। সে নিজে পরিবারের আঙ্গিনা থেকে বের হয়ে কখনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃংখলে বন্ধী হতে চাইবে না। তাকে বিদ্যালয়ে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি করে বিদ্যালয় মুখী করে তুলতে একজন শিক্ষক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
আমাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় অপূর্ব প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে লক্ষ প্রাণ আর অনেক ত্যাগের বিনিময়ে। লাখো শহীদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমাজের সকল স্তরের মানুষের একযোগে কাজ করতে হবে। একটি দেশকে গড়ে তোলার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে শিক্ষার মূল ভিত্তি।

প্রাথমিক শিক্ষা যদি যথাযথ ভাবে সম্পন্ন করা যায় তাহলেই একটি জাতি উন্নতির পথে অগ্রসর হতে শুরু করে। বর্তমানে সমাজের সকল স্তরের মানুষই প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব সম্মন্ধে অনুধাবন করতে পেরেছে। শিক্ষার উন্নয়নের জন্য শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময় বদলেছে, বদলেছে মানুষের আশা, আনন্দ, আর জ্ঞান দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষকদেরকে প্রাথমিক শিক্ষাকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।

বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষাকে আকর্ষনীয় ও আনন্দদায়ক করে গড়ে তোলার জন্য বিদ্যালয় ও শ্রেনি কক্ষের পরিবেশ সুন্দর করে গড়ে তুলতে হবে। শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যাই নয় শিক্ষাকে বাস্তব উপকরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামনে বস্তুগুলো তুলে ধরতে হবে। শিক্ষার্থীদেরকে সৃজনশীল মানসিকতা বিকাশ সাধন করার জন্য মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে।

ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে বিশ্বের সাথে নিবিড় ভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন ছড়া, গান, নাচ ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে জড়তা কাটিয়ে বিদ্যালয়ের প্রতি আকৃষ্ট করে তুলতে হবে। শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশের জন্য বিভিন্ন খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের শারিরীক ও মেধা বিকাশের জন্য পুষ্টিকর খাবার অত্যন্ত প্রয়োজন। শিশুরা কাজের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহন করতে পছন্দ করে। তাই শিক্ষার্থীদেরকে হাতে কলমে শেখানোর জন্য অইখ কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এছাড়া দলীয় কাজ পরিচালনা করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন কাজে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদেরকে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হবে যেন ওরা প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারে।
বিদ্যালয়ে ফুলের বাগান, সবজি বাগান ইত্যাদি তৈরি করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে উৎপাদশীল কাজের প্রতি আকৃষ্ট করে গড়ে তুলতে হবে। পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে সরকার ও শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। তাই একজন শিক্ষকের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালনের মাধমে দেশ ও জাতির উন্নয়ন সম্ভব ।

লেখক : জাহাঙ্গীর আলম ছিদ্দিকী
সহকারি শিক্ষক
পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়
কক্সবাজার।

ভয়েস/জেইউ।

 

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION